ধর্ম ডেস্ক: পবিত্র কোরআনের ১১৪টি সুরায় রয়েছে ৬৬৬৬টি আয়াত। প্রত্যেকটি আয়াতের রয়েছে আলাদা তাৎপর্য ও রহস্য। তারপরও আয়াতুল কুরসির অনন্য মর্যাদার কথা এসেছে হাদিসে। সুরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াতটিকে আয়াতুল কুরসি বলা হয়।
হাদিসের বক্তব্য অনুযায়ী, এটি কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত; সব আয়াতের সর্দার বা নেতা। সুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘প্রতিটি জিনিসের একটি চূড়া থাকে। কোরআনের চূড়া হলো সুরা বাকারা। তাতে এমন একটি আয়াত আছে, যা কোরআনের অন্যসব আয়াতের ‘নেতা’। সেটা হলো আয়াতুল কুরসি।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩১১৯)
আয়াতুল কুরসির বিস্ময়কর ফজিলত বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। এক হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না।’ (সুনানে নাসায়ি: ৯৯২৮)
রাতে ঘুমানোর আগে কেউ আয়াতুল কুরসি পড়লে তার জন্য আল্লাহ তাআলা একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করে দেন। যিনি পুরো রাত তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকেন। এ সম্পর্কিত সহিহ বুখারির বর্ণনাটি হলো- রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন তুমি শয্যা গ্রহণ করবে তখন আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে। তাহলে সর্বদা আল্লাহর পক্ষ হতে তোমার জন্য একজন হেফাজতকারী থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান আসতে পারবে না। (সহিহ বুখারি: ৫০১০)
শয়তানকে বন্দি করার একটি সুন্দর ঘটনা রয়েছে সহিহ বুখারিতে। যেখানে দেখা যায়, এক রাতে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) শয়তানকে ধরে ফেলেছিলেন। শয়তান নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার শর্তে আবু হুরায়রা (রা.)-কে আয়াতুল কুরসির অজানা ফজিলত শিখিয়ে দেয়। সে হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-কে বলেছিল, যখন ঘুমাতে যাবে তখন আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমাবে। তাহলে আল্লাহ তোমার জন্য একজন পাহারাদার নিযুক্ত করবেন যে তোমার সঙ্গে থাকবে আর কোনো শয়তান সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে আসতে পারবে না। এটা শুনে আবু হুরায়রা (রা.) তাকে ছেড়ে দিলেন। পরদিন রাসুল (স.)-কে ঘটনা জানানো হলে তিনি বলেন, যদিও সে চরম মিথ্যাবাদী; কিন্তু সে এই কথা সত্য বলেছে। রাসুল (স.) আবু হুরায়রা (রা.)-কে আরো বলেন, তুমি কি জানো সে কে? আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, না। রাসুল (স.) বলেন, সে হচ্ছে শয়তান। (বুখারি: ২৩১১)
ঘুমের সময় নিরাপদ থাকতে আরও বেশ কিছু আমলের কথা হাদিসে এসেছে। যেমন ঘুমের আগে সুরা কাফিরুন পাঠ করা। হজরত নাওফাল আশজায়ি (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) আমাকে বলেছেন- ‘তুমি قُلْ یٰۤاَیُّهَا الْكٰفِرُوْنَ সুরাটি পড়ে ঘুমাও। কেননা তা শিরক থেকে মুক্তকারী। (সুনানে আবি দাউদ: ৫০৫৫)
ঘুমের আগে সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়ার কথাও বলা হয়েছে কোনো হাদিসে। হজরত আবু মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন-‘যে ব্যক্তি রাতে সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত পাঠ করবে তার জন্য তা-ই যথেষ্ট হবে।’ (সহিহ বুখারি: ৫০০৯)
এছাড়াও সুরা ইখলাস ও নাস-ফালাক পড়ে শরীরে ফুঁ দেওয়া সুন্নত আমল। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) প্রতি রাতে যখন বিছানায় যেতেন, তখন দুই হাত একত্র করে তাতে সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁ দিতেন। অতঃপর মাথা ও চেহারা থেকে শুরু করে যতদূর সম্ভব দেহে তিনবার দুই হাত বোলাতেন।’ (বুখারি: ৫০১৭)।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ