বিএনএ, চুয়েট: গান আর ঢাক ঢোলের বাজনা, পাশে বাঁশির জোরালো শব্দ। চারিদিকে হৈ হৈ রৈ রৈ ব্যাপার। এ যেন এক অনন্য উৎসবে মেতে উঠেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক কৌশল বিভাগ (ইইই) এমনই আয়োজন করে আসছে বছরের পর বছর।
তড়িৎ কৌশল বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা কর্মচারীদের যেন আনন্দঘন বিশাল এক মিলনমেলা। করোনার প্রকোপ এবং একাডেমিক নানান জটিলতায় ২০১৮ সালের পর এমন মিলনমেলার আয়োজন আর হয়ে উঠেনি। তাই এবার দীর্ঘ তিন বছর পর সমাপনী ব্যাচ ও ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আয়োজন হচ্ছে এবারের ইইই-ডে-২০২২। সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও বিভাগের শিক্ষকমণ্ডলীর সহায়তায় এবারের আয়োজনকে নামকরণ করা হয়েছে-“ইইই দিবসঃ ইলেক্ট্রিক্যাল সার্জ-২০২২”। বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল ১১ টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলমের উপস্থিতিতে বেলুন উড়িয়ে এবং বর্ণাঢ্য রালি শেষে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করা হয়।
এরপরও চলবে ৯ এবং ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত৷ ৩দিন ব্যাপী এই আয়োজনে আজ সকালে বর্ণাঢ্য র্যালির পর থাকছে ফুটবল ম্যাচ, সার্কিট সমাধান প্রতিযোগিতা, কুইজ প্রতিযোগিতা, বিষয়ভিত্তিক সমস্যা সমাধান প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শর্ট পিচ টুর্নামেন্ট সহ নানা আয়োজন৷
আয়োজনকে ঘিরে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে বয়ছে যথেষ্ট উদ্দীপনা ৷ আয়োজন সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের থেকে ৬১ সদস্যের একটি কার্যকর কমিটি দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করে আসছে । গত ৪ ডিসেম্বর ইইই বিভাগের শিক্ষকদের নিয়েও ৩০ সদস্যের উপদেষ্টা ও উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ শিক্ষকরা প্রতিটি আয়োজনের সার্বক্ষণিক তদারকি করেছেন।
৩দিন ব্যাপী ইলেক্ট্রিক্যাল সার্জ-২০২২ এর যাত্রায় বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ফ্ল্যাশমব, ফায়ার ওয়ার্ক, চা উৎসব এবং রং উৎসব ৷ ৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দিন সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত থাকছে সার্কিট অলিম্পিয়াড, সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কুইজ প্রতিযোগিতা এবং দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিষয়ভিত্তিক সমস্যা সমাধান প্রতিযোগিতা৷
১০ ডিসেম্বর শনিবার শেষ দিন বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত শিক্ষক বনাম শিক্ষার্থী প্রীতি ফুটবল খেলার আয়োজন করেছে আয়োজক কমিটি। এরপর বিকেল সাড়ে চারটার পর সদ্য বিদায়ী ব্যাচের (২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ) বিদায় অনুষ্ঠান এবং পুরষ্কার বিতরণীর মধ্য দিয়ে দিনের কার্যক্রম শেষ করার পরিকল্পনা করেছে আয়োজকগণ। সাড়ে ৫ টায় এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে শেষ হবে ইলেকট্রিক্যাল সার্জের এই আয়োজন৷
ফ্ল্যাশমব এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করার লক্ষে বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলছে মহড়া। প্রত্যেকেই নিজের সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান দিয়ে সাজিয়ে তুলছেন আয়োজনের প্রতিটি অংশকে। সমস্যা সমাধান প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী দলগুলো থেকে ইতোমধ্যে প্রথম পর্বে বাছাই শেষে ৫টি দলকে চূড়ান্ত পর্বের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে ।
ইলেকট্রিক্যাল সার্জের এই আয়োজনকে সঞ্চালনা করছেন চুয়েটের তড়িৎ কৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সম্পদ ঘোষ। এরপর দুপুর ১২ টা নাগাত কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড মোহাম্মদ রফিকুল আলম।
সেমিনারের বক্তব্যে উপাচার্য মহেদয় ইইই ডে আয়োজক কমিটিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন পূর্বক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি একাডেমিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গবেষণা দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে চুয়েট। চুয়েটে এখন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি, পিএইচডি ডিগ্রী প্রদান করা হচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীদের গতানুগতিক পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণায় এগিয়ে আসলে আমরা সরকার কর্তৃক গবেষণা বৃত্তির আবেদন করতে পারি এবং সর্বোচ্চ চেষ্টায় আমরা গবেষণা বৃত্তি প্রদান করতে পারি। বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে দেশকে বিশ্বের দরবারে এগিয়ে নিবে চুয়েট।
তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক কৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রুবাইয়াৎ তানভীর হোসাইন বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন পর ইইই দিবস উদযাপন করতে যাচ্ছি৷ আগে প্রতিবছর এই দিনটি উদযাপন করা হলেও করোনা লক-ডাউন সহ বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণে গত কয়েকবছর আমরা দিনটি উদযাপন করতে পারিনি৷ কিন্তু এবছর বিভাগের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই দিনটি পুনরায় উদযাপনের সুযোগ পেয়েছি। প্রতিবছর এমন আয়োজন করার আহ্বান করছি৷”
তিনি আরও বলেন, “আয়োজনকে নতুন মাত্রা যোগ করতে ছাত্র বনাম শিক্ষক প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করা হয়েছে৷ আশা করছি এর মাধ্যমে চুয়েট ইইই বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্পর্ক আরও বন্ধুত্বপূর্ণ হবে৷”
পুরো আয়োজনে উচ্ছ্বসিত বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তড়িৎ কৌশল বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী জিয়াদ হোসাইন উচ্ছ্বসিত এবং আনন্দের সাথে বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন পর ইইই দিবস উদযাপন করতে যাচ্ছি । দিনটি না উদযাপন করে ডিগ্রি শেষ করলে নিজেদের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে অসম্পূর্ণতা থেকে যেতো, এই পুথিগত বিদ্যার গন্ডি থেকে বেরিয়ে এই আয়োজন আমাদের আনন্দঘন মানসিকতাকে বাড়িয়ে নিবে। একাডেমিক চক্র থেকে বের হতে সাহায্য করবে। আমরা অনেক উচ্ছ্বসিত। ।”ইলেকট্রিক্যাল সার্জ-২০২২ এর এই পুরো আয়োজনে মিডিয়া পার্টনার হিসেবে থাকছে- চুয়েট নিউজ২৪ ।
বিএনএ/রব্বানী, এমএফ