বিএনএ পটুয়াখালী: আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। স্বপ্নের এই সেতু ধাপে ধাপে পূর্ণতার রূপ পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত দক্ষিণাঞ্চল তথা গোটা বরিশাল ও খুলনা বিভাগের মানুষ। কারণ এই সেতুর কারণে সড়ক পথের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে যেমন দক্ষিণাঞ্চলের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হবে তেমনি শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটবে।
পদ্মা সেতু চালু হলে সমুদ্র কন্যা পটুয়াখালীর কুয়াকাটা থেকে ঢাকায় যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনে সময় লাগবে মাত্র ৬ ঘণ্টা। এতে সময় বাঁচবে আগের তুলনায় ৬ ঘণ্টা। এছাড়া পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে আগামীতে পর্যটন শিল্প বহুগুনে ত্বরান্বিত হবে বলে প্রত্যাশা করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
১০ বছর আগেও পটুয়াখালীর কুয়াকাটা থেকে ঢাকা যেতে পার হতে হতো অন্তত ১২ টি ফেরি। ইতিমধ্যে এসব নদীতে নির্মাণ করা হয়েছে সেতু। তবে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের ভোগান্তির অপর নাম ছিলো মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ও মাদারীপুর শিবচরের কাঁঠালবাড়ি নৌপথের ফেরিঘাট। এ ঘাটে যাত্রীদের ফেরির জন্য ঘন্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হতো। এছাড়া অসুস্থ রোগীদের নিয়েও ভোগান্তিতে পড়তে হতো স্বজনদের। লঞ্চ পারাপার করতে ভোগান্তি পোহাতে হতো সাধারণ মানুষদের। তবে এখন পদ্মায় সেতু তৈরি হওয়ায় ভোগান্তির অবসান হতে যাচ্ছে।
পদ্মা সেতু চালু হতে যাওয়ায় আনন্দে ভাসছেন পটুয়াখালীর মানুষ। এখনকার সব শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। সেতু উদ্বোধনের ফলে পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে পণ্য খালাস হওয়ার পর তা খুব সহজেই পৌঁছে যাবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
এছাড়া এ সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক দ্বারকে খুলে দেবে। ফলে খুলনা ও বরিশাল বিভাগে গড়ে উঠবে বিভিন্ন শিল্প-কারখানা। এতে কর্মসংস্থান হবে বেকার যুবকদের।
সেতুর কারণে কুয়াকাটা সৈকতে বাড়বে আগের তুলনায় দ্বিগুন পর্যটক। ফলে পর্যটন এলাকা ঘিরে ব্যবসা বানিজ্যের প্রসার ও মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে বলে মনে করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া বন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাসুম বেপারী বলেন, ‘ আমাদের এ অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষই মৎস্য ব্যবসায়ী। বঙ্গোপসাগরে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ধরা পরে। এছাড়া নদ-নদীতেও পাওয়া যায় বিভিন্ন প্রকারের মাছ। আর এসব মাছ পটুয়াখালী থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে ট্রাকযোগে পাঠানো হয়। কিন্তু মাওয়া ঘাটে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরির জন্য ট্রাকে রাখা মাছ নিয়ে বসে থাকতে হয়। এতে অনেক মাছ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে বড় অঙের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে মৎস্য ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি কমবে। আমরা দক্ষিণের মানুষ অনেকটা এগিয়ে যাবো।’
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, ‘ঢাকা থেকে কুয়াকাটা আসতে সময় লাগবে মাত্র ৬ ঘণ্টা। ফলে কুয়াকাটু সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের সমাগম আগের তুলনায় আরো বাড়বে। সমুদ্র সৈকত ঘিরে গড়ে উঠবে আরো আবাসিক হোটেল। অনেকেরই কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। এছাড়া কর্মসংস্থান হবে আমাদের এ অঞ্চলের অনেক বেকার যুবকদের।’
পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মহিব্বুর রহমান বলেন, ‘একটা সময় কুয়াকাটা থেকে ঢাকা যেতে ১০ থেকে ১২ টি ফেরি পার হতে হতো। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে এসব নদীতে সেতু নির্মাণ করে দিয়েছে। এখন সর্বশেষ পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এ সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দক্ষিণের মানুষের দীর্ঘ দিনের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণ হবে।’
বিএনএনিউজ২৪/এমএইচ