স্পোর্টস ডেস্ক : বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ১০ম আসরের(বিপিএল ২০২৫) ফাইনালে চিটাগাং কিংসকে হারিয়ে তামিম ইকবালের দল ফরচুন বরিশালের টানা দ্বিতীয় বিজয়ে আনন্দ উল্লাস বইছে বরিশালসহ দেশের সর্বত্র।
ম্যাচ সেরা তামিম, আসরের সেরা মেহেদী মিরাজ
এর আগে ২০১৩ সালের ফাইনালে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের কাছে ৪৩ রানে হেরেছিলো চট্টগ্রাম। বিপিএলে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ চারবার চ্যাম্পিয়ন হয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তিনবার শিরোপা জিতেছে ঢাকা ফ্র্যাঞ্চাইজি।
চিটাগং কিংসের দেয়া ১৯৫ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে তামিম-মায়ার্সের ঝড়ো ব্যাটিং আর শেষদিকে রিশাদ হোসেনের কারিশমায় ৩ উইকেট আর ৩ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে গেছে তারা।
শুক্রবার(৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর মিরপুর ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এই খেলা অনুষ্ঠিত হয়।বলা যায়, শ্বাসরুদ্ধকর এক ফাইনাল উপহার দিয়েছে বরিশাল এবং চিটাগং।
এ নিয়ে টুর্নামেন্টের ফাইনালে বরিশাল ৩ উইকেটে হারিয়েছে চট্টগ্রাম কিংসকে। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার বিপিএলের শিরোপা জিতলো বরিশাল। পক্ষান্তরে, দ্বিতীয়বারের মত ফাইনালে উঠেও, শিরোপা ঘরে তুলতে পারলো না চট্টগ্রাম।
এর আগে মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে টস হেরে ব্যাট করে চিটাগং। পারভেজ হোসেন ইমন এবং খাজা নাফের জোড়া ফিফটিতে ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ১৯৪ রান তোলে দলটি। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৪৯ বলে ৭৮ রানে অপরাজিত থাকেন ইমন। ৪৪ বলে ৬৬ রান আসে পাকিস্তানি নাফের ব্যাটে। তিনে নেমে ২৩ বলে ৪৪ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলে চিটাগংকে দুইশ ছোঁয়া স্কোর পেতে সাহায্য করেন ইংলিশ ব্যাটার গ্রাহাম ক্লার্ক।
বিপিএল ফাইনালে ১৯৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাটে করতে নেমে অধিনায়ক তামিম ইকবালের ব্যাটে উড়ন্ত শুরু পেয়েছে ফরচুন বরিশাল। পাওয়ার প্লেতে তারাও চিটাগং কিংসের সমান বিনা উইকেটে ৫৭ রান স্কোরবোর্ডে জমা করেছে।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় শুরু থেকেই তেড়ে ব্যাট চালান তামিম। অন্য প্রান্তে তাওহিদ হৃদয় যেখানে ১৫ বলে ১৪ রানে ব্যাট করছেন, সেখানে তামিম ২১ বলে ৮ চারে তুলেছেন ৩৯ রান।
সপ্তম ওভারে পঞ্চম বলে ছক্কা মেরে অর্ধশতক পূর্ণ করেন অধিনায়ক তামিম। ২৪ বল খেলে ৯টি চার ও ১টি ছক্কায় হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি।
নবম ওভারে জোড়া উইকেট তুলে নিয়ে চট্টগ্রামকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন পেসার শরিফুল ইসলাম। প্রথম বলে তামিমকে এবং চতুর্থ বলে ইংল্যান্ডের ডেভিড মালানকে ফিরিয়ে দেন শরিফুল। ২৯ বলে ৫৪ রানে থামেন তামিম। হৃদয়ের সাথে ৪৯ বলে ৭৬ রানের জুটি গড়েন তামিম। মালান করেন ১ রান।
সাবধানে খেলে ১১তম ওভারে আউট হন হৃদয়। ৩টি চারে ২৮ বলে ৩২ রান করেন তিনি।
দলীয় ৯৬ রানে হৃদয় ফেরার পর বরিশালের জয়ের পথ তৈরি করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাইল মায়ার্স। চতুর্থ উইকেটে মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে ১৪ বলে ৩৪ ও পঞ্চম উইকেটে মাহমুদুল্লাহর সাথে ২৯ বলে ৪২ রানের জুটি গড়েন মায়ার্স। মুশফিক ৩টি চারে ৯ বলে ১৬ এবং মায়ার্স ৩টি করে চার-ছক্কায় ২৮ বলে ৪৬ রানে আউট হন।
১৮তম ওভারে মায়ার্স ও মাহমুদুল্লাহকে ফিরিয়ে চট্টগ্রামকে লড়াইয়ে ফেরান শরিফুল। এমন অবস্থায় জয়ের জন্য শেষ ২ ওভারে ২০ রান দরকার পড়ে বরিশালের।
১৯তম ওভারের চতুর্থ বলে এবং শেষ ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মেরে বরিশালকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নেন রিশাদ হোসেন। শেষ ওভারের তৃতীয় বলে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বরিশাল। ২টি ছক্কায় ৬ বলে ১৮ রানে অপরাজিত থাকেন রিশাদ।
চট্টগ্রামের শরিফুল ৪ ওভারে ৩৪ রানে ৪ উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
চট্টগ্রাম কিংস : ১৯৪/৩, ২০ ওভার (ইমন ৭৮*, নাফি ৬৬, আলি ১/২১)।
ফরচুন বরিশাল : ১৯৫/৭, ১৯.৩ ওভার (তামিম ৫৪, মায়ার্স ৪৬, শরিফুল ৪/৩৪)।
অর্থ পুরস্কার
রানার্সআপ – শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ১৯৪ রানের পুঁজি নিয়েও জিততে পারেনি চিটাগং কিংস। ২০১৩ সালের পর বিপিএলে ফেরার আসরে রানার্স-আপ হলো তারা। ফলে তারা পেল দেড় কোটি টাকা।
কে কোন পুরস্কার পেলেন
ম্যান অব দা ফাইনাল – তামিম ইকবাল। ট্রফির ছাড়াও তিনি পেলেন ৫ লাখ টাকা।
ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট – বিপিএলের এবারের আসরের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার জিতলেন খুলনা টাইগার্সের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। তিনি পেলেন ১০ লাখ টাকার অর্থ পুরস্কার।
ইমার্জিং প্লেয়ার অব দা টুর্নামেন্ট – প্রথম পর্বে বাদ পড়া ঢাকা ক্যাপিটালসের হয়ে ব্যাট হাতে পুরো আসরেই চমৎকার ছিলেন তানজিদ হাসান। ১২ ইনিংসে এক সেঞ্চুরির সঙ্গে চার ফিফটিতে ৪৮৫ রান করে তিনিই জিতেছেন বিপিএলের প্রথম ইমার্জিং প্লেয়ার অব দা টুর্নামেন্ট পুরস্কার। ট্রফির সঙ্গে তার প্রাপ্তি ৩ লাখ টাকা।
টুর্নামেন্টের সেরা ব্যাটসম্যান – আসরজুড়ে চমৎকার ব্যাটিংয়ে এক সেঞ্চুরির সঙ্গে তিন ফিফটিতে ৫১১ রান করা মোহাম্মদ নাঈম শেখ জিতলেন সেরা ব্যাটসম্যানের পুরস্কার। ৫ লাখ টাকা অর্থ পুরস্কার পেলেন তিনি।
টুর্নামেন্টের সেরা বোলার – রেকর্ড গড়া আসরে ১২ ইনিংসে ২৫ উইকেট নিয়ে এবার সেরা বোলারের পুরস্কার জিতলেন তাসকিন আহমেদ। নাঈমের মতো তিনিও পেলেন ৫ লাখ টাকা।
টুর্নামেন্টের সেরা ফিল্ডার – আসরজুড়ে উইকেটের পেছনে ১২টি ক্যাচ ও ২টি স্টাম্পিং করে সেরা ফিল্ডারের পুরস্কার জিতেছেন মুশফিকুর রহিম। তিনি পেয়েছেন ৩ লাখ টাকা।
বিএনএনিউজ২৪,এসজিএন