বিশ্ব ডেস্ক: দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল শনিবার সংসদে অভিশংসনের মুখোমুখি হলেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইনপ্রণেতার(এমপি) সমর্থন না পাওয়ায় তিনি এই প্রচেষ্টা থেকে রক্ষা পেয়েছেন।
সংসদে অভিশংসনের পক্ষে ১৯৭টি ভোট পড়ে, যা প্রয়োজনীয় ২০০ ভোটের চেয়ে ৩ ভোট কম। এ কারণে অভিশংসন প্রক্রিয়া ব্যর্থ হয়। মূলত ইউনের দল পিপল পাওয়ার পার্টি (পিপিপি)-এর এমপিদের ভোট বর্জনের কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
সংসদের স্পিকার উ উন-শিক এ বিষয়ে বলেন, “গোটা জাতি এবং বিশ্ব আজকের সিদ্ধান্ত প্রত্যক্ষ করছে। এটি দুর্ভাগ্যজনক যে, পর্যাপ্ত আইনপ্রণেতা অংশ নেননি।”
বিতর্কিত মার্শাল ল ও রাজনৈতিক সংকট
ইউন সম্প্রতি একটি অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত নিয়ে তার দেশের সেনাবাহিনীকে জরুরি ক্ষমতা দিয়ে মার্শাল ল ঘোষণা করেছিলেন। তিনি এই পদক্ষেপ নেন ‘উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট বাহিনী’ এবং ‘রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের’ দমনের উদ্দেশ্যে। তবে মার্শাল ল ঘোষণার মাত্র ছয় ঘণ্টার মধ্যেই সংসদের সর্বসম্মত বিরোধিতার মুখে তিনি তা প্রত্যাহারে বাধ্য হন।
ইউনের এই সিদ্ধান্ত দক্ষিণ কোরিয়াকে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকটে ফেলে দিয়েছে। প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি একে “গণতন্ত্রের প্রতি আঘাত” আখ্যা দিয়ে প্রেসিডেন্টের অভিশংসনের ঘোষণা দেয়।
ইউনের প্রতিক্রিয়া ও দলীয় অবস্থান
শনিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে ইউন তার ভবিষ্যৎ দলের ওপর ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন এবং পুনরায় মার্শাল ল প্রয়োগ না করার প্রতিশ্রুতি দেন। তবে পিপিপির শীর্ষ নেতা হান ডং-হুন বলেন, “প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইউন দায়িত্ব পালনে আর সক্ষম নন, তার পদত্যাগ জরুরি।” যদিও দলের অধিকাংশ সদস্য ইউনকে রক্ষায় একত্রিত হয়েছে, যা অভিশংসন প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করেছে।
জনমত ও প্রতিবাদ
সিউলের রাস্তায় হাজারো মানুষ মোমবাতি মিছিল করে ইউনের পদত্যাগ দাবি করেছে। এক প্রতিবাদকারী বলেন, “আমাদের কথা মানতে বাধ্য করতে হবে।” ইউনের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দক্ষিণ কোরিয়ার গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তিতে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
ভবিষ্যৎ রাজনীতি: ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?
যদি ইউন পদত্যাগ করেন, তাহলে সংবিধান অনুযায়ী আগামী ৬০ দিনের মধ্যে দেশটিতে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে, ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন-হাই-এর অভিশংসন এবং পদত্যাগের ঘটনা দেখা গেছে। সেই ঘটনায় পিপিপির পতন ও লিবারেলদের ক্ষমতায় আসার পথ প্রশস্ত হয়েছিল।
বর্তমান পরিস্থিতিতে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে অনিশ্চয়তা ও উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে।
সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি
বিএনএনিউজ২৪, এসজিএন