বিএনএ, চট্টগ্রাম: এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে অপরিকল্পিতভাবে র্যাম্প নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ‘পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম’। নগরীর জিইসি মোড়ে এক র্যাম্পের কারণে নগরজুড়ে যানজটের আশঙ্কা করে সংগঠনটির সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সিডিএ (চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) পাঁচ শতাংশ লোককে সুবিধা দিতে গিয়ে ৯৫ শতাংশ নাগরিকের চলাচল সংঘাতময় করে তুলছে।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম’র পক্ষ থেকে সংগঠনটির সহ-সভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া এ বক্তব্য তুলে ধরেন।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কার্যকর করতে ‘জিইসি র্যাম্প’ নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়ে সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে নেওয়া লালখানবাজার-পতেঙ্গা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে মেগাপ্রকল্পটি শুরু থেকেই বিতর্কিত। এটি বিশেষজ্ঞ মতামত এবং জনস্বার্থ উপেক্ষা করে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প স্থাপন নিয়েও বিতর্ক কম হয়নি। বিতর্কিত বেশ কয়েকটি র্যাম্প প্রকল্প থেকে আপাতত বাদ দেওয়া হলেও বাওয়া স্কুল ও জিইসি মোড়ের মাঝে হোটেল পেনিনসুলার সামনে থেকে প্রস্তাবিত র্যাম্পটি বাদ দেওয়া হয়নি।’
ব্যক্তিস্বার্থে এ র্যাম্পটি প্রকল্পভুক্ত করা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘পেনিনসুলা হোটেলের সামনের র্যাম্প নির্মাণের কাজ জনস্বার্থে বন্ধ করা প্রয়োজন। এ জায়গা এমনিতেই অত্যন্ত যানজটপ্রবণ। নতুন র্যাম্প করলে মূল সড়কের প্রশস্ততা কমে যাবে। জিইসি জাংশনে যানজট বেড়ে যাবে। পাশাপাশি এম এ আলী সড়ক, ওয়াসা এবং লালখান বাজারসহ আশপাশের এলাকায় যানজট তীব্র হবে।’
জিইসি মোড়ের পরিবর্তে টাইগারপাসের র্যাম্পকে ওঠা-নামার জন্য ব্যবহারের তাগিদ দিয়ে এ নগর পরিকল্পনাবিদ বলেন, ‘এটা করলে যেসব গাড়ি লালখান বাজার, হোটেল রেডিসন ব্লু থেকে আসবে তাদের রাইট টার্ন নিতে হবে না। যে র্যাম্প টাইগারপাসে নামানো হয়েছে, সেটা শুধুমাত্র ওঠার র্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করা এবং যে র্যাম্প আমবাগানের দিকে নামানো হয়েছে, সেটা দিয়ে লালখান বাজারমুখী গাড়িও নামতে পারবে। শুধু প্রয়োজন হবে একটা সুপরিকল্পিত জাংশান ডিজাইন।’
জিইসি মোড়ের র্যাম্প নির্মাণ বন্ধের দাবিতে ‘কাল-পরশুর’ মধ্যে মানববন্ধনের আয়োজন করা হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এরপরও যদি এটা বাতিল না করে, তাহলে আমাদের আর কিছুই করার থাকবে না। আমাদের পক্ষে তো আর মারামারি করা সম্ভব নয়।’
উল্লেখ্য, চার হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীর পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৫৪ ফুট প্রশস্ত চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। গত বছরের নভেম্বরে এর উদ্বোধন হলেও যান চলাচলের জন্য এখনও পুরোপুরি খুলে দেওয়া হয়নি। ২৪টি লুপ ও ১৪টি র্যাম্প নির্মাণের জন্য প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। বর্ধিত সময়েও কাজ শেষ হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর ৫টি র্যাম্প আপাতত নির্মাণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, ‘সিডিএ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন জায়গায় র্যাম্প নামাচ্ছে ও ওঠাচ্ছে। যেসব জায়গায় র্যাম্প নামাচ্ছে বা ওঠাচ্ছে, সেখানে নিচের মূল সড়কের প্রশস্থতা কমে যাওয়ায় ভবিষ্যতে গণপরিবহন চলাচল কঠিন হয়ে যাবে। বন্দরের কনটেইনার পরিবহনে বাধা তৈরি হবে। এতে পণ্য পরিবহনে স্থবিরতা তৈরি হবে। যে এক্সপ্রেসওয়েতে গণপরিবহন (বাস) চলাচল করতে পারবে না, সেটা দিয়ে সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ লোকের উপকার হতে পারে। এখন গোষ্ঠীস্বার্থে অপরিকল্পিতভাবে র্যাম্প নামিয়ে সিডিএ ৯৫ শতাংশ নাগরিকের চলাচলকে সংঘাতময় করে দিচ্ছে।’
বিএনএনিউজ/ নাবিদ/এইচমুন্নী