বিএনএ ডেস্ক : সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত জুলাই সনদ ও শেখ হাসিনার পতনের বর্ষপূতির অনুষ্ঠানে সরকারের পছন্দের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে একজন করে মঞ্চে উপস্থিত থাকার জন্য দাওয়াত দেওয়া হয়। সেই হিসাবে জাতীয় নাগরিক পার্টি থেকে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এই সুযোগ পান। সরকারে থাকা দুই ছাত্র উপদেষ্টার কাছে তদবির করেও মঞ্চে থাকার অনুমোদন পাননি সারজিস-হাসনাত-পাটোয়ারি, জারা। এতে ক্ষুদ্ধ ও অপমানিত বোধ করেন এনসিপির এসব শীর্ষ নেতারা। তারা ভাবতে থাকেন, সরকারের কাছে তাঁরা এখন ‘ডেড হর্স’।

প্রসঙ্গত, ২৪’এর জুলাই সনদের জন্য সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিল সরকারি দল খ্যাত জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যখন জুলাই সনদ ঘোষণা করার দিনক্ষণ নির্ধারণ করলেন, সেই দিন দুপুরে গোপনে ঢাকা থেকে কক্সবাজার উড়ে যান এনসিপির মূখ্য সংগঠক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, দক্ষিণাঞ্চল মূখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, উত্তরাঞ্চল মূখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনীম জারা।
কানাডা থেকে প্রচারিত নাগরিক টিভির বার্তা প্রধান হিসাবে কর্মরত নাজমুস সাকিব এই খবরটি মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে প্রকাশ করেন। তার ভ্যারিফাইড ফেসবুকে লিখেন, পিটার হাসের সাথে হাসনাত ও সারজিসদের “বিশেষ সাক্ষাতের” কারণ কি? এ মুহূর্তে কক্সবাজারের রয়েল টিউলিপ হোটেলের একটি কক্ষে গোপন বৈঠকে বসেছেন এনসিপির হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম, নাসিরুদ্দিন পাটওয়ারী, এবং তাসনিম জারা। তাদের এ গোপন বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতির রহস্য পুরুষ, সাবেক মার্কিন অ্যাম্বাসেডর পিটার হাস এর সাথে। কোন্ ষড়যন্ত্রের জাল বুনছেন তারা?
কানাডা প্রবাসী সাংবাদিক নাজমুস সাকিব আরও লিখেন, তাদের এ কক্সবাজার যাত্রার ব্যাপারে জেলা পুলিশকে আগে থেকে অবহিত করা হয় নি। পুলিশের আইজি বাহারের স্ত্রী হেলেন নিজের মোবাইল থেকে কক্সবাজার জেলা স্পেশাল ব্রাঞ্চের পুলিশকে ফোন করে তাদের প্রটোকল নিশ্চিত করেন। তারা পিটার হাসকে অনুরোধ করেছেন, যেন তিনি ডক্টর ইউনূসকে আজ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা থেকে বিরত রাখার ব্যবস্থা করেন।
কানাডা থেকে প্রচারিত নাগরিক টিভির বার্তা প্রধানের এমন পোস্ট মূহুর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। সারাদেশে হৈচৈ পড়ে যায়। গণমাধ্যম গুলো গুরুত্বের সঙ্গে এই সংবাদ প্রচার করতে থাকে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খবর আসে ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত বর্তমানে মার্কিন জ্বালানি কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির কৌশলগত উপদেষ্টা পিটার হাস কক্সবাজারে নয়- ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থান করছেন। সারাদিনের গুঞ্জন শেষ পর্যন্ত গুজবে পরিণত হয়।
তারপরও জনমনে প্রশ্ন ওঠে, জুলাই সনদ ঘোষণার এমন দিনে কী কারণে কক্সবাজার গিয়েছেন এনসিপির শীর্ষ নেতারা?
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে কিংস পার্টি খ্যাত জাতীয় নাগরিক পার্টির নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে বড় ধরনের “দূরত্ব” তৈরি হয়। বিশেষ করে দলটির অনেকে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজির ঘটনা সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়।
তার ওপর গত ২৩শে জুলাই দুপুরে চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ডে পথসভায় এনসিপির দক্ষিণাঞ্চল মূখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমের তীব্র সমালোচনা করে তার পদত্যাগ দাবি করেন। শুধু তা্ই নয়- অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. ইউনূসের ভাই-ব্রাদার কোটায় উপদেষ্টা হয়েছেন এবং ড. ইউনূসের স্বজনপ্রীতির সবচেয়ে বড় উদাহরণ স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এমন মন্তব্যও করেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ’র বক্তব্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও স্বাস্থ্য উপদেষ্টার এমন সমালোচনায় এবং ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না করা ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থার জন্য চাপ সৃষ্টি করায় পুরো উপদেষ্টা পরিষদ ক্ষুদ্ধ হয়। পরিষদ এনসিপির লাগাম টানতে তৎপর হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জুলাই সনদ ও শেখ হাসিনার পতনের বর্ষপূতির রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান ও সাধারণ সম্পাদকদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। সেখানে প্রটোকল অনুযায়ী হাসনাত-সারজিসরা দাওয়াত পায়নি। ঢাকায় থাকলে তাদের অনুষ্ঠানে যেতে হতো এবং দর্শক সারিতে বসতে হতো। এমন অপমান- অভিমান এবং আলোচনায় থাকার জন্যই গণঅভ্যুত্থান দিবসে তারা সূদুর কক্মবাজারে গিয়েছেন!
এদিকে দলের রাজনৈতিক পর্ষদকে আগে থেকে না জানিয়ে কক্সবাজার ভ্রমণ করায় জাতীয় নাগরিক পার্টির শীর্ষ ৫ নেতাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
তারা হলেন মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা এবং জারার স্বামী এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ।
তাদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সশরীরে উপস্থিত হয়ে নোটিশের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। বুধবার (৬ আগস্ট) এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দীন সিফাত স্বাক্ষরিত পৃথক চিঠিতে এ ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।
বিএনএ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী,ওজি