বিএনএ ডেস্ক: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুনের পর ভয়াবহ বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে৷ এখন পর্যন্ত ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ওই কনটেইনার ডিপোতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের বিস্ফোরণের ঘটনায় আলোচনায় এসেছে রাসায়নিক বস্তুটি। বিএম কনটেইনার ডিপোর মালিকানা রয়েছে স্মার্ট গ্রুপের। গ্রুপটিরই অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘আল-রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্সে’ উৎপাদিত হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে তারা। আর এই বিস্ফোরকে গুদাম হিসেবে বিএম কনটেইনারকে অবৈধভাবে ব্যবহার করছিল প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ঠান্ডাছড়ি এলাকায় স্মার্ট গ্রুপের আল-রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্স লিমিটেডের হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড কারখানাটি বন্ধ করে সরিয়ে নেওয়ার দাবি উঠেছে। সোমবার (৬ জুন) বিকেলে কারখানার সামনে সাধারণ মানুষ এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ দাবি জানান।সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, অবৈধভাবে পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হয়েছে আল-রাজী কেমিক্যাল কারখানা। এটি পরিবেশ ও এলাকায় বসবাসকারীদের জন্য মারাত্মক হুমকির। যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। বিভিন্ন সময়ে এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও প্রশাসনকে জানানো হলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কারখানাটি জনবহুল এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে। কারখানার পাশে কয়েকটি বসতি রয়েছে। এখানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটবে। কারখানা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভে কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন স্থানীয় বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মনজুরুল আলম।
তিনি বলেন, দুপুর থেকে দিনভর ওই কারখানার সামনে দফায় দফায় অবস্থান ও বিক্ষোভ চলে। সন্ধ্যার দিকে কারখানাটি বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ।
সীতাকুণ্ডু দুর্ঘটনার পর বিস্ফোরিত কনটেইনারের গায়ে ঠিকানা দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড আল-রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্সে উৎপাদিত। ঠিকানা হিসেবে লিখা রয়েছে- ফতেয়াবাদ সিটি করপোরেশন কলেজ রোড, জঙ্গল দক্ষিণ পাহাড়তলি চট্টগ্রাম। তাদের হেড অফিসের ঠিকানা হিসেবে রয়েছে- ১২৮৬/এ নাসিরাবাদ শিল্পাঞ্চল বায়েজিদ থানা রোড, বায়েজিদ, চট্টগ্রাম।সরেজমিনে দেখা যায়, কন্টেইনার বিস্ফোরিত হয়ে অন্তত ৩০০ ফুট দূরে উড়ে গিয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে পাশে থাকা আরেকটি কেমিক্যালের কনটেইনার ছিন্নভিন্ন হয়ে ছোট ছোট টুকরো আকারে ডিপোর ইয়ার্ডে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছে। মনে হচ্ছে এ যেন যুদ্ধ-পরবর্তী অবস্থা!
ডিপো সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ওই কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠান আল রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্সে উৎপাদিত যেসব হাইড্রোজেন পার অক্সাইড রাখা ছিল, সেগুলো পাকিস্তানে রপ্তানি করার জন্য রাখা ছিল। প্রতিটি জারে ছিলো ৩০ কেজি ওজনের এই ভয়ংকর রাসায়নিক।
এ বিষয়ে জানতে আল-রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্সের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ও এমডি মজিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের পাওয়া যায়নি। তবে তিনদিন পর গতকাল সোমবার কোম্পানির আরেক পরিচালক আজিজুর রহমান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তেদের মাঝে আর্থিক সহায়তা চেক প্রদান করেন।
এ সময় তিনি মন্তব্য করেন, বিস্ফোরণের ঘটনার পেছনে কোনা নাশকতা থাকতে পারে। এ বিষয়ে তদন্ত দাবি করেন তিনি।জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নথি অনুসারে বাংলাদেশে গত একবছরে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড করেছে ১৩টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে প্রাণ ডেইরি লিমিটেড সর্বাধিক ১ লাখ ৯২ হাজার কেজি বা ১৯২ মেট্রিক টন হাইড্রোজেন পার অক্সাইড আমদানি করেছে গত একবছরে। ১ লাখ ৩৪ হাজার ৪০০ কেজি বা ১৩৪.৪০০ মেট্রিক টন আমদানি করে এরপরই আছে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি। পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠান জাবের এন্ড জোবায়ের ফেব্রিক্স আমদানি করেছে ১ লাখ ১২ হাজার কেজি বা ১১২ মেট্রিক টন হাইড্রোজেন পার অক্সাইড।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড রপ্তানি করেছে ভারত, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামে। মোট ১৪টি দেশে রাসায়নিকটি রপ্তানি হয়।
উল্লেখ্য, গত শনিবার রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। আগুন নেভানোর চেষ্টার মধ্যে ঘণ্টা দুয়েক পর রাসায়নিকভর্তি কনটেইনারে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে নিহত হন ৪১ জন। আহত হন আড়াই শতাধিক মানুষ। নিহতদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও রয়েছেন।
বিএনএনিউজ২৪/ ওয়াইএইচ/এমএইচ