27 C
আবহাওয়া
৩:২১ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » রমজানে কেমন আছেন ববির আবাসিক শিক্ষার্থীরা

রমজানে কেমন আছেন ববির আবাসিক শিক্ষার্থীরা

রমজানে কেমন আছেন ববির হলবাসী

বিএনএ, ববি : প্রতিবার রমজান যেমন বয়ে নিয়ে আসে সবার মনে শান্তি আর প্রীতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে রমজানের আলাদা একটা আমেজও কাজ করে। সবাই মিলে একসাথে বসে রুমে নয়তো হলের ছাদে বা মাঠে বসে ইফতার করা, সাহারিতে ডাকাডাকি করা, তারাবি আদায় একসাথে। এক অন্যরকম আবেগ কাজ করে রমজানে, হলগুলো নতুন এক রূপ পায়। কিন্তু এই আনন্দ আর প্রীতির আড়ালে কিছু বিষয় আনন্দকে কিছুটা মলীন করে দেয়। রমজান আসলেই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) আবাসিক শিক্ষার্থীদের মাঝে শত আনন্দের মাঝেও বদনে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠে। বিশেষ করে সাহরির খাবারের মান ও দাম নিয়ে। হলের ডায়নিংয়ে যে মানের খাবার বিক্রি করে সাহারির জন্য শিক্ষার্থীদের পক্ষে এই মানের খাবার খেয়ে রোজা রাখা কষ্টের। এইসব নিয়েই রমজানে আবাসিক শিক্ষার্থীদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই।

ববিতে মোট চারটি হল রয়েছে। ছাত্র হল দুটি বঙ্গবন্ধু ও শেরে বাংলা, এবং ছাত্রী হল দুটি শেখ হাসিনা ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল। হলগুলোতে আবাসিক শিক্ষার্থীরা রমজানের দিনগুলো কেমন করে পার করছে রমজানে আবাসিক শিক্ষার্থীদের সেই গল্পই তুলে ধরছেন বিএনএনিউজ২৪ডটকমের ববি প্রতিনিধি মো: রবিউল ইসলাম।

বঙ্গবন্ধু হল
বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’টি হলের একটি বঙ্গবন্ধু হল। হলটিতে রমজানের ইফতারি হিসেবে থাকে চপ, পিঁয়াজু, ছোলা-মুড়ি, ফিরনি ইত্যাদি। সেহরির জন্য রাতে ১০টার আগে টোকেন সংগ্রহ করতে হয়, আর রাত দুইটা থেকে আড়াইটার মধ্য খাবার নিতে হয়। বঙ্গবন্ধু হলের ডায়নিংয়ে সাহারির খাবার হিসেবে সাধারণত রুই মাছ, মুরগি, ডিম মাঝে মাঝে সুরমা মাছ বা গুড়ামাছ সাথে সবজি থাকে। রুইমাছ, সুরমা মাছ সাথে সবজি-ডাল ৬০ টাকা, মুরগী-সবজি ৫০টাকা, ডিম-সবজি ৪০টাকা। দাম স্বাভাবিক সময়ের থেকে রমজানে বেশি নিলেও খাবারের মান নিয়ে সন্তুষ্ট নয় শিক্ষার্থীরা৷

কথা হয় বঙ্গবন্ধু হলের একাধিক আবাসিক শিক্ষার্থীর সাথে। ৪০০৩ নাম্বার রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী রশিদ সরদার বলেন, বঙ্গবন্ধু হলের সাহরির খাবারের দাম বাড়লেও মান কমেছে। মুরগির ঝোল শেষ হয়ে যায় আগে থেকেই, কোনদিন বা ভাত শেষ হয়ে যায় শেষের দিকে যারা যায় তাদের আর খাওয়া হয় না। হলে এমনি চলে, এখন বিষয়গুলো অভ্যাস হয়ে গেছে খাবার হিসেবে যে সবজি দেওয়া হয় মাঝে মাঝে সিদ্ধ হয়না মনে হয় কাঁচা সবজি খাচ্ছি। গতকালকে পেঁপে সবজি নিয়ে ফেলে দিয়েছিলাম সবজি সিদ্ধই হয়নি।

কথা হয় একই রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী মহিউদ্দিনের সাথে। তিনি জানান, হলে রমজান মাসে খাবারের কষ্ট হয় সবারই, যে খাবার ডায়নিংয়ে বিক্রি করে ঐ খাবার খেয়ে থাকা খুবই কষ্টের। গতবছর রমজানে হলে খাবারের সমস্যার জন্যই হল থেকে চলে গিয়ে মেসে থাকতাম।

নয়ন বিশ্বাস নামের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, “বেঁচে থাকার জন্য আমরা এই খাবার খায়, খাবারে কোন পুষ্টিগুণই নেই।”

শেরে বাংলা হল
শেরে বাংলা হল শিক্ষার্থীদের কাছে আরেক দুঃখের নাম এই হলের ডায়নিং। দাম যতই বৃদ্ধি হোক না কেন বাড়েনা খাবারের স্বাধ ও মান অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এই হলে রমজানে কেমন চলছে এই বিষয়ে কথা হয় ১০ থেকে ১৫জন আবাসিক শিক্ষার্থীর সাথে। সরেজমিনে ইফতারি কিনতে গিয়ে দেখা যায় হলের ডায়নিং এ বেশ ভিড় ইফতার নিতে আসছে সবায়।

কথা বলে জানা যায়, ইফতারির আইটেম গুলো মোটামুটি ভালো এটা নিয়ে সন্তুষ্ট শিক্ষার্থীরা। ইফতারি হিসেবে থাকে বেগুনি, আলুচপ, পিয়াজু ও ছোলাবুট। রাতের খাবার হিসেবে থাকে বিভিন্ন রকমের ভর্তা, ডিম ভুনা, সবজি। সাহরির খাবার হিসাবে পাওয়া যায় মুরগি+ভাত+সবজি ৬০টাকা, মাছ+সবজি+ভাত ৬০টাকা, ডিম+ভাত+সবজি ৪০টাকা।

শেরে বাংলা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন আহম্মেদ জানান, হলের এই মানহীন খাবারের জন্য অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা বাইরে যান সেহরির জন্য। বাইরের খাবারের দাম হলের প্রায় সমান হলেও বাইরে তৃপ্তির সাথে খাওয়া যায়।

আলামিন জানান, আমি প্রথম কয়েকদিন হলের ডায়নিংয়ে সাহরি করতাম, কিন্তু খাবারের মান ভালো না হওয়ায় এখন বাইরে করি। মাছ রান্না হলে মনে হয় শুটকি মাছ রান্না হয়েছে মাছ সিদ্ধই হয়না। ৬০টাকায় ২পিচ মুরগি দিলেও মুরগী রান্না একদম বাজে। আমি কয়েকদিন নিয়ে না খেয়ে চলে আসছি। হলের শিক্ষার্থীরা এই রমজানে কোনরকম খেয়ে বেঁচে আছে এই পুষ্টিহিন খাবার।

শেখ হাসিনা হল
দামোদর নদ যেমন বাংলার দুঃখ তেমনি শেখ হাসিনা হলের দুঃখ হলের ডায়নিং। ছেলেদের হলগুলোতে সাহরির খাবার রাত আড়াইটা তিনটার দিকে দেওয়া হলেও মেয়েদের হলে রাত ৮টার সময় দেওয়া হ সাহরির খাবার। সাহরির খাবার হিসেবে এখানে থাকে মাছ+সবজি ৩৫টাকা, মুরগী+সবজি ৩০টাকা ভাত আলাদা করে কিনতে হয় এখানে।

অনামিকা নামের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের সাহরির খাবার দেওয়া হয় রাত আটটায় সাহরির সময় এই খাবার অনেকসময় নষ্ট হয়ে যায়, তখন না খেয়েই রোজা রাখা লাগে আমাদের। অভিযোগ করেন খাবারের মান নিয়েও বলেন মাছগুলো খাবার উপযোগী থাকে না পঁচা পঁচা গন্ধ আসে আর যে মোটা চউলের ভাত দেয় তা না পারি খেতে না পারি সইতে।

শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল
সদ্যচালু হওয়া শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয় রমজানের খাবারের হালচাল নিয়ে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, ক্লাস পরীক্ষা না থাকলে রমজানের প্রথম দিনই বাসায় চলে যেতাম। রমজানে এই হলের ডায়নিংয়ের খাবার খেয়ে টিকে থাকা কষ্টসাধ্য। এখানেও ইফতারি হিসাবে থাকে ছোলা, পিয়াজু, আলুরচপ আর বেগুনি। সাহরির খাবার হিসেবে থাকে মাছ+সবজি,৪০ টাকা মু্রগী+সবজি ৩০টাকা মাঝে মাঝে ৩৫টাকা।

আবাসিক শিক্ষার্থীরা বলেন, রমজান আসলেই আমাদের প্রথমেই আশা থাকে কবে থেকে বন্ধ হবে ক্যাম্পাস। সেদিন বাসায় গিয়ে পরিবারের সাথে একহয়ে ইফতারি করব। মায়ের হাতের রান্না খাবারে তৃপ্তির সাথে সাহরি করব, তখন হলের এই খাবারের কথা ভুলে যাব। ছুটি শেষে এসে আবার হলের এই খাবারের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠবে। এইভাবেই পার হয়ে যাবে, একদিন এই বিষয়গুলো স্মৃতি হিসেবে জমা হবে তখন চাইলেও হয়তো আর এই ডায়িংয়ের খাবার খাওয়া আর হবে না। তখন সকল অভিযোগুলো আফসোসে পরিণত হবে।

বিএনএনিউজ/ বিএম

Loading


শিরোনাম বিএনএ