বিএনএ ডেস্ক: বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের নারীরা শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক এগিয়েছে। নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক বাধা অতিক্রম করে বাংলাদেশের মেয়েরা তাদের অব্যাহত অগ্রযাত্রায় ছেলেদেরও ক্রমাগত পেছনে ফেলছে। শিক্ষাসহ সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এদেশের মেয়েরা। কিন্তু কর্মক্ষেত্র থেকে প্রতিনিয়ত ঝরে পড়ছে নারীরা। বাংলাদেশে নারীরা কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন। এটা অফিসিয়াল কিংবা অন্য যে কোন পেশাতেই বিদ্যমান। বর্তমানে সরকারী চাকরিতে কর্মরত আছেন মাত্র ২৪ শতাংশ নারী।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষা জীবন শেষ করে চাকরিতে প্রবেশের সময় নারীর অংশগ্রহণ অনেক কমে যাচ্ছে। নারীদের পিছিয়ে থাকার বড় কারণ সামাজিক নিরাপত্তার অভাব ও বাল্যবিয়ে।
দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় নারী কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষ বৈষম্যের কারণে অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে পিছিয়ে পড়ছে। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়াতে নারীকে চাকরি উদ্যোক্তা হতে সবচেয়ে বাধার সম্মুখীন হতে হয়।
বিশ্বব্যাংকের ‘ওমেন, বিজনেস অ্যান্ড দ্য ল-২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে জানানো হয়, নারীদের অর্থনৈতিক সুরক্ষা পাওয়ার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে পেছনের সারির দেশগুলোর মধ্যে একটি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে শুধু আফগানিস্তান।
দ্য ইকোনমিস্টের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ। দেশটির উন্নয়নের মডেল বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। পাশাপাশি দেশটি এ অঞ্চলের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতি হিসেবে বিশ্বের নজর কেড়েছে।
মহিলা সমিতির সভাপতি আয়শা খানম বলেন, ‘অচলায়তন ধীরে ধীরে ভাঙ্গছে। তবুও এখানে নারী অগ্রগতিকে খামচে ধরে আছে যৌন হয়রানি, যৌতুক প্রথা, বাল্যবিয়ের মতো সামাজিক ব্যাধিগুলো রয়েছে মারাত্মক আকারে। আছে নারীদের সমান কর্মঘণ্টায়ও পুরুষের তুলনায় প্রায় অর্ধেক মজুরির সমস্যা। সমাজে পুরুষদের মানসিকতা বদলানো শুরু হলেও এখনও আছে ব্যাপকভাবে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা!
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত শ্রমশক্তি জরিপে দেখা গেছে, গৃহস্থালী কর্মকা- ছাড়া দেশে মোট এক কোটি ৬৮ লাখেরও বেশি নারী কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত রয়েছে। একজন নারী প্রতিদিন ১৬ থেকে ২০ ঘণ্টাও কাজ করেন। স্বামীর সেবা, সন্তান ধারণ, সন্তানের যতœ, সংসার সামলানো, রান্নাবান্না, ঘরদোর পরিষ্কার করা, সন্তানের শিক্ষায় শ্রম, বাজারঘাট করা, ধানভাঙ্গা এ ধরনের মোট ৪৫ রকম কাজে একজন নারী নিয়োজিত রয়েছে। মোট দেশজ উৎপাদনে নারীর অবদান ২০ শতাংশ দেখানো হয়।
কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় দেখানো হয় যে, নারীর সামাজিক ও পারিবারিক কল্যাণমূলক শ্রমের মূল্য সঠিকভাবে নির্ধারণ করলে ও কর্মপরিবেশ সুস্থ হলে জিডিপিতে নারীর অবদান দাঁড়াবে ৪৮ শতাংশে, যা মোট জাতীয় উন্নয়নের প্রায় অর্ধেক বলা যায়। কর্মজীবী নারীরা তাদের চাকরির জন্য সপ্তাহে গড়ে ৪৪ ঘণ্টা ও গৃহস্থালি কাজে ৪৯.৮ ঘণ্টা ব্যয় করেন। যা একজন পুরুষের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। পারিবারিক ও কর্মক্ষেত্রের বিভিন্ন সমস্যাকে পদদলিত করে নারীরা নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটিয়ে যাচ্ছে। নারীর সঠিক কর্মপরিবেশ ও কাজের মূল্যায়নই পারে নারীদের কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে নিতে। এজন্য অবশ্যই পুরুষদের মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি।
শ্রমিক ও নারী অধিকারকর্মী তাসলিমা আখতার বলেন, সর্বত্র আগের তুলনায় নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। কিন্তু সমাজে, রাষ্ট্রে, অর্থনীতিতে নারীরা অনেক ভূমিকা রাখলেও তাদের স্বীকৃতি নেই। নারীরা পুরুষের সমান সুযোগ পান না। সম্পত্তিতে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার নেই। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত নারীরা অনেক অর্থনৈতিক কাজে যুক্ত হলেও অভিভাবকত্ব আইনে নারী অভিভাবক নন। অভিভাবক পুরুষ, কিন্তু লালন-পালনের দায়িত্ব নারীর।
সমাজ নারীকে পুরুষের তুলনায় ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে। পরিবারে মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় কম সুযোগ-সুবিধা পায়। মেয়েরা তর্ক করলে বলা হয় মেয়েদের বেশি তর্ক করতে হয় না। কিন্তু ছেলেরা তর্ক করলে তাকে বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন ধরে নেওয়া হয়।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ