বিশ্ব ডেস্ক: একটি পিরিচের মতো দেখতে এই উড়ন্ত যানটি আসলে কোনো ইউএফও নয়, বরং আগামী দশকের আকাশ পরিবহন খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চলা একটি বৈদ্যুতিক উড়ন্ত যান।
সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় এই যানটির নাম ‘ইনভো মুন’, যা তিনজন যাত্রীকে ৩৬০-ডিগ্রি প্যানোরামিক ভিউ উপভোগ করার সুযোগ দেবে। এটি ঘন্টায় সর্বোচ্চ ২৫০ মাইল গতিতে চলতে সক্ষম এবং এর নকশায় শব্দ কমানোর দিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী ইভিটল (eVTOL) যানগুলোর মতো বাইরের উন্মুক্ত প্রপেলারের পরিবর্তে এর ফ্লাইট সিস্টেমটি একটি শেলের ভেতরে লুকানো রয়েছে। ফলে এটি প্রায় নিঃশব্দে চলাচল করতে পারবে।
১৬ ফুট দৈর্ঘ্যের এবং ২,৫০০ পাউন্ড ওজনের এই যানটি একটি ছোট পারিবারিক গাড়ির সমান আকারের। এর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৪ কোটি ২৭ লঅখ টাকা।
তবে এর নির্মাতা এবং সাবেক টেসলা প্রকৌশলী লিও কায়ালি মনে করেন, ব্যাপক উৎপাদনের মাধ্যমে এর দাম ভবিষ্যতে ৭৬ লাখ টাকার নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব।
ভবিষ্যতের উড়ন্ত পরিবহন
সৌদি আরবের উড়ন্ত যান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মিত এই যানটি ২০২৭ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (FAA) অনুমোদন পেতে পারে। ২০৩০ সালের মধ্যে এটি লন্ডনসহ প্রধান প্রধান শহরে যাত্রী পরিবহন শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
লিও কায়ালি বলেন, এই যানটি মালিকদের জন্য আয়ের সুযোগও তৈরি করবে। তারা এটি নিজে ব্যবহার না করলেও উবারের মতো যাত্রী পরিবহন সেবায় যুক্ত করে আয় করতে পারবেন।
প্রযুক্তি ও নকশার বিশেষত্ব
ইনভো মুনে রয়েছে একটি বিশেষ ধরনের নতুন অ্যারোডাইনামিক প্রযুক্তি। এর বৃত্তাকার ফ্রেমে ১২টি মোটর স্থাপন করা হয়েছে, যার প্রতিটি ঘূর্ণায়মান গোলাকার কাঠামো দিয়ে তৈরি। এই মোটরগুলোকে চারটি করে গ্রুপে চালিয়ে যানটি যে কোনো দিকে সরানো সম্ভব, অর্থাৎ এটি সামনের বা পেছনের নির্দিষ্ট কোনো অংশ ছাড়াই ৩৬০ ডিগ্রিতে চলাচল করতে পারে।
ল্যান্ডিংয়ের সময় তিনটি ভাঁজযোগ্য লেগ বের করে এটি মাটিতে অবতরণ করে। শব্দ উৎপাদন মাত্রা মাত্র ৪৫ ডেসিবেল, যা হালকা বৃষ্টির শব্দের সমান। অন্য ইভিটল যানগুলোর তুলনায় এটি কম বাতাসের প্রবাহ তৈরি করে এবং অধিক কার্যকর।
সুবিধা ও বিলাসিতা
ইনভো মুনের কেবিনে রয়েছে তিনটি ঘূর্ণায়মান ও সম্পূর্ণ রিক্লাইনেবল হিটেড সিট। সিটের ওপরে এবং নিচে রয়েছে প্লেক্সিগ্লাস জানালা, যা দিয়ে যাত্রীরা ভিউ উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া যানটিতে মুড লাইটিং, আইস মেশিন এবং স্মার্ট টিভির মতো বিলাসবহুল সুবিধাও যুক্ত করা হয়েছে।
এটি একবার চার্জে ৩০০ মাইল চলতে পারে এবং ২০ থেকে ৮০ শতাংশ চার্জ হতে মাত্র ২০-৩০ মিনিট সময় লাগে।
লিওনার্দো দা ভিঞ্চির নকশা থেকে অনুপ্রাণিত
যানটির বাহ্যিক নকশা ১৪৮০-এর দশকে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা ‘আর্মার্ড কার’ থেকে অনুপ্রাণিত। অভ্যন্তরীণ উড্ডয়ন যন্ত্রটি দা ভিঞ্চির ‘এরিয়াল স্ক্রু’ ধারণার একটি নতুন রূপ, যা আধুনিক হেলিকপ্টারের পূর্বসূরী হিসেবে বিবেচিত।
বিশেষ বৈশিষ্ট্য (সংক্ষেপে)
- গতি: ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫০ মাইল
- রেঞ্জ: ৩০০ মাইল
- চার্জিং সময়: ২০-৩০ মিনিট (২০%-৮০%)
- যাত্রী: ৩ জন
- দৈর্ঘ্য: ১৬ ফুট
- ওজন: ২,৫০০ পাউন্ড
- শব্দ: ৪৫ ডেসিবেল (হালকা বৃষ্টির শব্দের সমান)
ইনভো মুন ভবিষ্যতের আকাশ পরিবহনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল করার পাশাপাশি প্রযুক্তি ও বিলাসিতার এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে ধরা দেবে। সূত্র এমএসএন
বিএনএনিউজ২৪, এসজিএন