বিএনএ ডেস্ক: ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে নির্মমভাবে নিহত কুড়িগ্রামের ফেলানীর কাঁটাতারে ঝুলে থাকা মরদেহের ছবি বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছিল। সেই ঘটনার এক যুগ পেরিয়ে গেলেও বিচার পাননি ফেলানীর মা-বাবা।
আজ ৭ জানুয়ারি ফেলানী হত্যার এক যুগ। মেয়ে হত্যার বিচার না পাওয়া মা-বাবার এখনো অশ্রুসিক্ত দিন কাটে ফেলানীর কবরের পাশে।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনিটারী গ্রামের শ্রমিক নূরুল ইসলাম পরিবার নিয়ে থাকতেন ভারতের বঙ্গাইগাঁও এলাকায়। সেখানেই তিনি একটি ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করতেন। বাংলাদেশে খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় নূরুলের কিশোরী মেয়ে ফেলানী খাতুনের। সেই উদ্দেশ্যে বাবা নূরুল ইসলাম বড় মেয়ে ফেলানীকে নিয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হন। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুয়াশা ঢাকা ভোরে দালালকে টাকা দিয়ে ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে মই বেয়ে কাঁটাতার পার হচ্ছিল ফেলানী ও তার বাবা নূরুল ইসলাম। মইয়ের সামনে ছিলেন নূরুল ইসলাম, পেছনে ফেলানী। এ সময় বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ টের পেয়ে গুলি ছোড়েন। ততক্ষণে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ফেলানীর বাবা নেমে পড়ায় প্রাণ বেঁচে যান। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি ফেলানীর। সে গুলিবিদ্ধ হয়ে মই থেকে ছিটকে পড়ে কাঁটাতারের ওপর। এরপর আহত অবস্থায় ফেলানীর শরীর কাঁটাতারে মাথা নিচে আর পা ওপর দিকে হয়ে ঝুঁলে থাকে। ছটফট করে পানি পানি বলে চিৎকার করতে করতেই একসময় সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে ছিল তার মরদেহ। পরে বাঁশে চার হাত-পা বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে ফেলানীর লাশ সরান বিএসএফ সদস্যরা। এ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারত।
২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট কোচবিহারের জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়। বিএসএফের এ আদালতে সাক্ষী দেন ফেলানীর বাবা নূরুল ইসলাম ও মামা হানিফ। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেন বিএসএফের বিশেষ আদালত। রায় প্রত্যাখ্যান করে পুনর্বিচারের দাবি জানান ফেলানীর বাবা। ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনর্বিচার শুরু হয়। তবে ২০১৫ সালের ২ জুলাই ওই আদালত আবারও অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেন। রায়ের পর একই বছর ১৪ জুলাই ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম) ফেলানীর বাবার পক্ষে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন করে। ওই বছর ৬ অক্টোবর রিট শুনানি শুরু হয়। এরপর ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে কয়েক দফা শুনানি পেছায়। পরে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ করোনা শুরুর আগে শুনানির দিন ধার্য হলেও শুনানি হয়নি।
স্থানীয় মজিরন ও সামসুল জানান, প্রথম প্রথম লোকজন খোঁজখবর নিলেও এখন আর কেউ ফেলানীর পরিবারের খোঁজ রাখেন না। বিচার শুরুর সময় মনে হয়েছিল ন্যায়বিচার পাবে। কিন্তু যেভাবে বিচার হচ্ছে এবং সময় পার করা হচ্ছে, তাতে বোঝা যায় ফেলানী হত্যার বিচার পাবে না তার পরিবার। এ ছাড়া ফেলানী হত্যার এক যুগেও সীমান্তে বিএসএফের হত্যা-নির্যাতন বন্ধ হয়নি।
ফেলানীর বাবা নূরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সন্তানকে নির্মমভাবে কাঁটাতারে হত্যা করা হয়েছে। তাকে একটু পানিও খেতে দেয়নি। আমরা বিচারের আশায় বুক বেঁধে আছি। কিন্তু এক যুগ পেরিয়ে গেলেও আমরা না পেলাম ক্ষতিপূরণ, না পেলাম ন্যায়বিচার।’
কুড়িগ্রামের সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট এস এম আব্রাহাম লিংকন বলেন, করোনার কারণে ফেলানী খাতুন হত্যার বিচার ঝুলে আছে। তবে দুই রাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট রাখতে ভারতের উচ্চ আদালত দ্রুত বিচারটি নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে আশা করছি।
বিএনএনিউজ২৪/এমএইচ