বিএনএ ডেস্ক: দেশের মাটিতেই যদি বিএনপির সমর্থন থাকত, যদি তাদের খুঁটিতে জোর থাকত, তাহলে বিদেশিদের কাছে ধর্না দেয়ার প্রয়োজন হতো না। এ মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবনে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এসময় তিনি বলেন, জনসমর্থন ও জনগণের ওপর আস্থা থাকলে, বিশ্বাস থাকলে তারা (বিএনপি) জনগণের কাছে যেত; বিদেশিদের কাছে দৌড়ে বেড়াত না। এটাই হলো বাস্তবতা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনটা কে করে দিয়ে যাবে। বিএনপিকে এটা জিজ্ঞেস করলে ভালো হয়। বিএনপি তাদের অতীতের কথা ভুলে গেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির সৃষ্টি একটি মিলিটারি ডিকটেটরের পকেট থেকে। তারপর নির্বাচনের যে প্রহসন, এটা তো তাদেরই সৃষ্টি। বরং আওয়ামী লীগ নির্বাচনটাকে এখন জনগণের কাছে নিয়ে গেছে। বলেন, মানুষ যেন তার ভোটটা দিতে পারে, সে পরিবেশ বা ভোট সম্পর্কে সচেতনতা কিন্তু আওয়ামী লীগই সৃষ্টি করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির জনসমর্থন, জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস নেই। তারা কোন মুখে জনগণের কাছে ভোট চাইতে যাবে। আগুন দিয়ে পোড়ানো, মানুষ খুন করা, বোমা মারা, গ্রেনেড মারা সব জায়গায় তো আছে। তারা যদি সামনে এসে দাঁড়ায়, তখন কী জবাব দেবে বিএনপি। এ জন্যই তারা বিদেশিদের কাছে ধর্না দিয়ে বেড়ায়। জনগণের কাছে যায় না।
গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিএনপিকে বাধা দেয়া হচ্ছে না দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা তো বাধা দিচ্ছি না। আন্দোলন করেন, সংগ্রাম করেন। যত আন্দোলন করবেন তত ভালো। কিন্তু পারে না তো। কী করব। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে, ভোটের মাধ্যমেই এসেছে। এ দেশে নির্বাচনের যতটুকু উন্নতি, যতটুকু সংস্কার, এটা আওয়ামী লীগ সবাইকে নিয়েই করে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি কেউ নির্বাচনে না আসে, সেখানে আমাদের কী করণীয়। হারার ভয়ে আসবে না। একেবারে সবাইকে লোকমা তুলে খাইয়ে দিতে হবে; জিতিয়ে দিতে হবে; তবেই আসব। এটা তো হয় না। এটা আগে করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মিলিটারি ডিক্টেটররা ওভাবেই করেছে। যাদের ওই অভ্যাস, তারা তো জনগণের কাছে যেতেই ভয় পায়। জনগণের সামনে ভোট চাইতে ভয় পায়।
নির্বাচনে কে অংশ নেবে, কে নেবে না, সেটি রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা তো কিছু চাপিয়ে দিতে পারি না। রাজনীতি করতে হলে দলগুলো নিজে সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা অবশ্যই চাই সব দল অংশগ্রহণ করুক। এত দিন কাজ করার পর নিশ্চয়ই আমরা চাইব, সবাই আসুক। বলেন, আওয়ামী লীগ কখনোই ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসবে না; আসেও নাই। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েই ক্ষমতায় আসছে।
যুক্তরাষ্ট্র যেমন ট্রেনিং দিয়েছে, র্যাব তেমনই করেছে
যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শে র্যাব সৃষ্টি হয়েছে। তারা যেমন প্রশিক্ষণ দিয়েছে, র্যাব সেভাবেই কাজ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে সংঘর্ষ থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র সময়ে সময়ে আমাদের ওপর স্যাংশন, নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আমাদের দেশের কিছু লোক যারা অপকর্ম করে দেশ ছেড়েছে, তারা বানোয়াট, মিথ্যা কথা বলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রই র্যাব সৃষ্টি করতে পরামর্শ দিয়েছে, তারাই ট্রেইনিং দিয়েছে, অস্ত্র দিয়েছে এমনকি ডিজিটাল সিকিউরিটি সিস্টেম সবই যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া। এখন যুক্তরাষ্ট্র যদি স্যাংশন দেয় বা কোনো কথা বলে বা অভিযোগ আনে, তখন একটাই কথা, যেমন আপনারা ট্রেনিং দিয়েছেন তেমন তারা কার্যকর করেছে। এখানে আমাদের করার কী আছে? আপনাদের ট্রেনিং যদি একটু ভালো হতো, তাহলে একটা কথা ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা র্যাবই হোক বা পুলিশই হোক, তারা যদি কোনো অপরাধ করে তাদের বিচার হয়। যুক্তরাষ্ট্রে কিন্তু পুলিশ সরাসরি গুলি করে মারলেও বিচার হয় না। সেখানে যখন জনগণ আন্দোলনে নামল, তখন একটা বিচারই বোধ হয় তারা সারা জীবনে করতে পেরেছে। আমাদের কতজন বাঙালি মারা গেছে। সেখানে কিন্তু তারা কিছু বলেনি। আমি এসব কথা তাদের স্পষ্ট বলেছি। আমি কিন্তু বসে থাকিনি।’
বাংলাদেশে গুম-খুনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গুমের হিসাব যখন বের হতে শুরু হলো, তখন দেখা গেল সবচেয়ে বেশি গুম হয়েছে জিয়াউর রহমানের আমলে। তারপর থেকে চলছে। যখন আমরা তালিকা চাইলাম, ৭৬ জনের তালিকা পাওয়া গেল। এর মধ্যে মাকে লুকিয়ে রেখে আরেকজনকে শায়েস্তা করার ঘটনা ঘটেছে। বলেন, তালিকায় এমন নামও আছে, যারা হয়ত যুক্তরাষ্ট্রেই লুকিয়ে আছে। সেরকম তথ্য আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র স্যাংশন কবে তুলবে জানি না কিন্তু স্যাংশন দিয়ে যে ক্ষতিটা তারা করেছে তা হলো, যাদের দিয়ে আমরা দেশের সন্ত্রাস দমন করেছি তাদের বিরুদ্ধে স্যাংশন দেয়া অর্থ কী? সন্ত্রাসীদের মদদ দেয়া। আমার এটাও প্রশ্ন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যে তারা কি সন্ত্রাস দমনে তারা নাখোশ? যুক্তরাষ্ট্র ৪০ বছর তালেবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, সেই তালেবানের হাতেই রেখে চলে আসল আফগানিস্তান। নিজেদের ব্যর্থতার কথা তারা বলে না। বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের মদদ দিলো। এখন আবার ইউক্রেন যুদ্ধে মদদ দিয়ে যাচ্ছে, স্যাংশন দিয়ে যাচ্ছে। স্যাংশন দিয়ে সব মানুষের ক্ষতি হচ্ছে।
অর্থনীতি শক্তিশালী অবস্থানে; উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই
দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী দিক বিবেচনা করে, কোন ঝুঁকির মধ্যে নেই। আমি সকলকে নিশ্চিত করতে পারি যে উদ্বেগের কিছু নেই।
সরকার সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের যে কোনো ধরনের দুর্ভোগ কমাতে তারা বিষয়টিতে মনোযোগ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে যেভাবে স্বল্প মেয়াদি, মধ্য মেয়াদি এবং দীর্ঘ মেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ করে পরিচালনা করছে সেখানে কোন ‘রিস্ক’ নেই। তাছাড়া, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়েই দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
সরকার প্রধান বলেন, ’৯৬ সালে সরকার গঠনের সময় মাত্র ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রিজার্ভ নিয়েই যাত্রা শুরু করেছিলাম। তখন বিদ্যুৎ ছিল ১৩শ’ মেগাওয়াট, খাদ্য ঘাটতি ছিল ৪০ লাখ মেট্রিক টন। আর সাক্ষ্যরতার হার ছিল মাত্র ৪৫ ভাগ। ফলে যেকোন কোন ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের কোন রিস্ক নেই, এটুকু নিশ্চিত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিএনএ/ওজি, এ আর