19 C
আবহাওয়া
১:৫৪ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২০৩ (নরসিংদী-৫)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২০৩ (নরসিংদী-৫)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে নরসিংদী-৫ আসনের হালচাল।

নরসিংদী-৫ আসন

নরসিংদী-৫ সংসদীয় আসনটি রায়পুরা উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২০৩ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আবদুল আলী মৃধা বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭৯ হাজার ৮ শত ১১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬১ হাজার ৮ শত ৯২ জন। নির্বাচনে বিএনপির আবদুল আলী মৃধা বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩৭ হাজার ৩ শত ৬০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজি উদ্দীন আহমেদ । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৬ হাজার ৪ শত ৫৫ ভোট।

ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আবদুল আলী মৃধাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি,ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির আবদুল আলী মৃধা কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের রাজি উদ্দীন আহমেদ বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১৯ হাজার ৮ শত ২৭ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬৮ হাজার ১ শত ৯৮ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রাজি উদ্দীন আহমেদ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৫ হাজার ৬ শত ৭২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আবদুল আলী মৃধা । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬১ হাজার ৮ শত ৬২ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের রাজি উদ্দীন আহমেদ বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮৯ হাজার ৯ শত ৭৪ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ২০ হাজার ৭ শত ২২ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রাজি উদ্দীন আহমেদ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৭ হাজার ৯৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আবদুল আলী মৃধা । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯৯ হাজার ৫ শত ৯ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের রাজি উদ্দীন আহমেদ বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫০হাজার ৩ শত ৪৮ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ২৪ হাজার ১ শত ৪৫ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রাজি উদ্দীন আহমেদ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৪১ হাজার ৬ শত ২৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির জামাল আহমেদ চৌধুরী । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭৭ হাজার ২ শত ৪৯ ভোট।

দশম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের রাজি উদ্দীন আহমেদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রাজি উদ্দীন আহমেদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের রাজি উদ্দীন আহমেদ বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৭১ হাজার ৫ শত ৩৫ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ২৪ হাজার ২ শত ৭৩ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৫ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের রাজি উদ্দীন আহমেদ, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মো: আশরাফ উদ্দীন, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির এম এ ছাত্তার, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আবদুল মোমেন এবং টেলিভিশন প্রতীকে ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট বিএনএফ এর মো: বিটু মিয়া প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রাজি উদ্দীন আহমেদ বিজয়ী হন । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৯৪ হাজার ৪ শত ৮৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মো: আশরাফ উদ্দীন । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ২০ হাজার ৪ শত ৩১ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম ও ষষ্ঠ সংসদে বিএনপি এবং সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ টানা বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর নরসিংদী-৫ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, নরসিংদী-৫ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৭.৮৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২.৫২%, বিএনপি ২৩.০৮%, জাতীয় পার্টি ০.৬৩% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৫৩.৭৭% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৬.৫১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৪.৯৯%, বিএনপি ৩৬.৭৮% জাতীয় পাটি ১২.৯৪%, জামায়াত ইসলামী ২.১৮% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.১১% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৬.১২ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৫৩.০৫%, ৪ দলীয় জোট ৪৫.০৮%, জাতীয় পার্টি ১.৫১ % স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৩৬% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৯.২২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬৩.৭৬%, ৪ দলীয় জোট ৩৪.৭২% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৫২% ভোট পায়।

নরসিংদী-৫ আসনের সংসদ সদস্য রাজি উদ্দীন আহমেদ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। তার মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন একাদশ জাতীয় সংসদের প্রার্থী বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সহ-সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো: আশরাফ উদ্দিন বকুল এবং রায়পুরা উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ. কে নেছার উদ্দিন।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, নরসিংদী-৫ আসনটি একক কোন রাজনৈতিক দলের ঘাঁটি নয়। কখনো আওয়ামী লীগ,কখনো বিএনপি, কখনো জাতীয় পার্টি এমনকি ন্যাপও এই আসনটি শাসন করে। ১৯৯১ সালে আব্দুল আলীর মাধ্যমে বিএনপি আসনটি দখল করে নিলেও বেশিদিন ধরে রাখতে পারেনি। আওয়ামী লীগের রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু ১৯৯৬ এই আসনটি পুনরুদ্ধার করে। ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। তিনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং শ্রম ও কর্মস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে নিজের ও দলের একটি শক্ত সাংগঠনিক ভিত দাড় করিয়েছেন।

অন্যদিকে বিএনপি, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল আলী মৃধাকে সংস্কারপন্থী হিসাবে বহিস্কার করে। ফলে ২০০৮ সালে তাকে মনোনয়ন দেয়নি। মনোনয়ন দেয় ইঞ্জিনিয়ার মো: আশরাফ উদ্দিন বকুলকে। তখন থেকে বিএনপি দুইগ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ২০১৯ সালে ৯ মার্চ আব্দুল আলী মৃধা মৃত্যুবরণ করার পর তার অনুসারিদের অনেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেন, আবার অনেকে অন্তরালে চলে যান। বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা নড়বড়ে। এছাড়া জনপ্রিয় নেতা ও নেতৃত্বশূণ্যতা বিরাজ করছে দলটিতে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ২০৩তম সংসদীয় আসন (নরসিংদী-৫) আসনটিতে আওয়ামী লীগই বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

আরো পড়ুন: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২০২ (নরসিংদী-৪)

বিএনএ/ শাম্মী, এমএফ, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ