বিএনএ, ঢাকা: বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেল বলে অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আশা প্রকাশ করছেন, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে সমাধান করা অন্যান্য অনেক সমস্যার মতোই তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তিসহ সকল অমীমাংসিত সমস্যা শিগগিরই সমাধান হবে।
মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) নয়া দিল্লিতে হায়দ্রাবাদ হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়। পরে যৌথ বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী। গত এক দশকে উভয় দেশই বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। দুটি দেশ বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার চেতনায় অনেক অমীমাংসীত ইস্যু সমাধান করেছে।
দুই দেশের মধ্যে কুশিয়ারা নদীর পানি বন্টন নিয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিসহ ৫৪টি অভিন্ন নদ-নদীর পানি বণ্টনের মতো সব সমস্যার সমাধান করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে আরেক দফা ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আমরা ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে বৈঠক করেছি। আগামী দিনগুলিতে আমাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে আমরা দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাপক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। এর ফলে উভয় দেশের জনগণের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।
শেখ হাসিনা জানান, আলোচনায় অঙ্গীকার বাস্তবায়নের সম্ভাব্য উপায়গুলি সম্পর্কে এবং পারস্পরিক কল্যাণে একে অপরের অগ্রাধিকারগুলিকে গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়া হয়েছে। বলেন, সংযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা, সীমানা এবং লাইন অব ক্রেডিট সম্পর্কে আমরা আলোচনা হয়েছে।
গত ৫০ বছরে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব তৈরি করে উভয় দেশ পারস্পরিক স্বার্থে কাজ করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দুই দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা এবং দুই দেশে ও এ অঞ্চলে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত যদি অংশীদার হিসেবে একসঙ্গে কাজ করতে পারে, তাহলে এটি শুধু দেশগুলোর জন্যই নয়, বরং সমগ্র অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে। ৫৪টি অভিন্ন নদী এবং চার হাজার কিলোমিটার সীমান্ত বেষ্টিত বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের জনগোষ্ঠীর সম্মিলিত কল্যাণে বদ্ধপরিকর।
শেখ হাসিনা জানান, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বা গুরুতর আহত ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সৈনিক/কর্মকর্তাদের সরাসরি বংশধরদের ‘মুজিব বৃত্তি’ দেয়া হবে। মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার ও জনগণের অমূল্য সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। বলেন, “স্বাধীনতা লাভের পর থেকে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক অভিন্ন ইতিহাস ও সংস্কৃতি, পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধা, দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতায় বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ সময় নরেন্দ্র মোদির দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, তার দূরদর্শীতা প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অধিকতর গতি সঞ্চার করে চলেছে। তিনি ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ তম বছর উপলক্ষে বছরব্যাপী উদযাপন ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’-এর সফল সমাপ্তির জন্য ভারত সরকার ও ভারতের জনগণকে অভিনন্দন জানান।
আগামী ২৫ বছরের জন্য ‘অমৃত কাল’-এর নতুন ভোরে, ভারত ‘আত্মনির্ভর ভারত’ গড়ে তোলার লক্ষ্যসমূহ অর্জনের পথে ভারতের প্রয়াসের বিষয়ে শুভকামনা ব্যক্ত করেছেন শেখ হাসিনা।
এসময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, আগামী দিনে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। বলেন, গত বছর আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করেছি। আমরা প্রথম ‘মৈত্রী দিবস’ উদযাপন করেছি। আগামী দিনে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।
মোদি বলেন, বাংলাদেশ আজ ভারতের বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদার এবং এই অঞ্চলে আমাদের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। জনগণের সহযোগিতা ক্রমাগত উন্নতি হচ্ছে।
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্রুত বাড়ছে উল্লেখ করে মোদি বলেন, আমরা তথ্যপ্রযুক্তি, মহাকাশ ও পারমাণবিক খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নিয়েও ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আলোচনা চলছে।
মোদি জানান, বন্যা প্রশমনে আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। বাংলাদেশের সাথে বন্যা সংক্রান্ত রিয়েল-টাইম ডেটা শেয়ার করছি। সন্ত্রাসবাদ নিয়েও আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে মোদি বলেন, এটা অপরিহার্য কারণ, আমাদের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আমরা একসাথে মোকাবেলা করি।
নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৫৪টি নদী প্রবাহিত হয় এবং উভয় দেশের মানুষের জীবন-জীবিকার সাথে এসব নদী যুক্ত। আজ আমরা কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছি।
বিএনএ/এমএফ/এ আর