বিএনএ বরিশাল: দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার ৩ লাখ জেলের সুদিন ফিরছে। পদ্মা সেতু চালুর পর মাত্র ৬ ঘণ্টায় তাজা ইলিশ রাজধানীতে পৌঁছানোর সুযোগ পাচ্ছেন। প্রতিদিনের মাছ প্রতিদিনই ঢাকাসহ রাজধানীর আশপাশের জেলায়ও যাচ্ছে। পাশাপাশি কৃষি পণ্যও দ্রুত সারা দেশে পরিবহন করার সুযোগ মিলছে পদ্মা সেতুর কল্যাণে।
পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, বরিশাল, খুলনা, সাতক্ষীরা, রাজশাহীসহ ২১ জেলার জেলেরা সাগরের ইলিশসহ বিভিন্ন মাছ ধরে দ্রুত ঢাকাসহ চট্টগ্রামেও নিয়ে যেতে পারছেন। বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র (বিএফডিসি) দেশের সামুদ্রিক মাছের সব থেকে বড় পাইকারি বাজার। এ কেন্দ্রে প্রতিদিন হাজার টন ইলিশসহ বিভিন্ন মাছ নদী সাগর থেকে ধরে নিয়ে আসে জেলেরা।
এ কেন্দ্রের মাছ সড়ক পথে নিয়ে যায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। মাওয়া পার হয়ে ঢাকাসহ দেশের ৪০টি জেলায় ইলিশসহ বিভিন্ন মাছ সরবরাহ করেন আড়তদার-পাইকাররা। একই সঙ্গে বরগুনার ৩টি উপজেলার চাষিরা প্রস্ততি নিচ্ছে এবার তরমুজ ও আলু চাষের।
আগে প্রতিবছর তরমুজের বাম্পার ফলন হলেও রপ্তানির অভাবে ক্ষেতেই পচে যায় অনেক তরমুজ ও আলু। পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে তরমুজ ও আলু পচে যাবে না। সামনে লক্ষ্যমাত্রার কৃষি ফসল দ্রুতই ঢাকাসহ চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেলেন কৃষকরা।
এতদিন ফেরিঘাটে যানজটের বিড়ম্বনায় যথাসময়ে আড়তে পৌঁছাতে পারত না মাছ, তরমুজ আলু। পথেই নষ্ট হত পণ্য। পদ্মা সেতু উদ্বোধন পর এ সমস্যার সমাধান হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরগুনা ও পাথরঘাটার ব্যবসায়ীরা। তারা পাবে এসব পণ্যের বাড়তি দামও। এর সুফল পাবেন পাইকার থেকে শুরু করে প্রান্তিক জেলেরাও। দেশের রপ্তানি আয়ও বাড়বে।
পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া পর থেকে উপকূলীয় জেলেদের ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়র হোসেন সিকদার।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ৩ লাখ জেলের মাছ ও কৃষকে সফল দ্রুত দেশে বিভিন্ন জেলা এলাকায় পৌঁছাতে পারছে। এর আগে এসব এলাকার জেলে ও কৃষকরা দ্রুত মাছ ও কৃষি ফসল পদ্মা নদীতে ফেরি পারের জন্য দিনের পর দিন শিমুলিয়া ও জাজিরা ঘাটে অপেক্ষায় থাকতে হতো।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বঙ্গোপসাগরঘেঁষা বরগুনা, বরিশাল, ভোলার মানুষ সাগরের মাছ দ্রুত রাজধানীসহ সারাদেশে পৌঁছানোর সুযোগ পাচ্ছে কম সময়ে। ঢাকার মানুষ পাচ্ছে তাজা সব মাছ। পদ্মা সেতুর সুফল পাচ্ছে প্রান্তিক জেলে থেকে পাইকাররাও। এ কারণে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ট্রলার মালিক সেলিম হায়দার হোসেন জানান, আগে মাছ ঢাকায় পাঠাতে মাছ প্যাকেজিং, বরফ ও পরিবহনে প্রায় সমপরিমাণ টাকা খরচ হয়। তারপর এ পণ্য ফেরিঘাটে পড়ে থাকত দিনের পর দিন। পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে এ সমস্যা দূর হয়েছে। এখন থেকে রাজধানীবাসী একদম টাটকা মাছ পাবে।
মৎস্য আড়তের মালিক নশা মিয়া বলেন, মাছ নিয়ে যাওয়ার সময় ফেরিঘাটে সিরিয়াল পেতে প্রচুর টাকা দিতে হতো। স্বপ্নের পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ায় এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেলো জেলেরা। এখন থেকে মাত্র ৬ ঘণ্টায় মাছ ঢাকায় পৌঁছে যাচ্ছে।
মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, পাথরঘাটার মাছ কিনতে আসা বেশিরভাগ পাইকার উত্তরাঞ্চলের। মাওয়া ফেরির কারণে ঢাকার পাইকার ও বড় বড় ব্যবসায়ীরা এতদিন চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম থেকে মাছ ক্রয় করত।
এদিকে বরগুনার নলী মাইঠা এলাকার তরমুজ চাষি আ. হালিম বলেন, এবারে বরগুনায় বাম্পার ফলন হয়েছিল তরমুজের। প্রথম দিকে শত শত ট্রাক বরগুনায় এসে তরমুজ নিয়ে গেলেও ফেরি বিড়ম্বনায় শেষের দিকে চাষিরা পানির দামে তরমুজ বিক্রি করে লোকশান গোনে।
পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে তরমুজ চাষিরা সুদিন ফিরে পেল এবং তারা আসন্ন শুস্ক মৌসুমে ব্যাপক তরমুজ চাষের পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে বলে তিনি জানান।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ