18 C
আবহাওয়া
৯:৪৮ অপরাহ্ণ - জানুয়ারি ৮, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » `এক টাকার খবরে’র সাংবাদিকের একাউন্টে ১৩৪ কোটি!

`এক টাকার খবরে’র সাংবাদিকের একাউন্টে ১৩৪ কোটি!


বিএনএ ডেস্ক : আলোচিত-সমালোচিত সাংবাদিক মুন্নী সাহার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবে বেতনের বাইরে জমা হয়েছে ১৩৪ কোটি টাকা। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালানোর পর পরই এসব আমানতের মধ্যে ১২০ কোটি টাকাই উত্তোলন করা হয়েছে। ১৭টি ব্যাংকের মাধ্যমে এ লেনদেন হয়েছে। সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ওয়ান ব্যাংকের মাধ্যমে। বিধিবহির্ভূত লেনদেনের অভিযোগে মুন্নী সাহার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ইতোমধ্যে জব্দ করেছে বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট। ওই একাউন্টে জমা  আছে মাত্র ১৪ কোটি টাকা।

YouTube player

বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বেসরকারি ওয়ান ব্যাংকের কারওয়ানবাজার শাখায় মুন্নী সাহার স্বামী কবির হোসেনের মালিকানাধীন এমএস প্রমোশনের নামে ২০১৭ সালের ২রা মে একটি হিসাব খোলা হয়। যেখানে নমিনি হিসেবে নাম রয়েছে মুন্নী সাহার।

অন্যদিকে, ব্যাংকটির চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখায় জনৈক মাহফুজুল হকের মালিকানায় প্রাইম ট্রেডার্সের নামে ২০০৪ সালের ২১ জুলাই একটি হিসাব খোলা হয়। দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকটি থেকে ৫১ কোটি ৫০ লাখ টাকার ঋণ নেওয়া হয়। ঋণ পরিশোধ না করে বারবার সুদ মওকুফ ও নবায়ন করেছে ব্যাংকটি। এর মধ্যে কেবল ২০১৭ সালেই সুদ মওকুফ করা হয় ২৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকার। যদিও প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে পারস্পারিক ব্যবসায়ীক কোনো সম্পর্ক নেই। অথচ বিভিন্ন তারিখে হিসাব দু’টির মধ্যে বিপুল অংকের অর্থ লেনদেন হয়েছে।

২০১৯ সালের ২৯ শে সেপ্টেম্বরের একটি উদাহরণ তুলে ধরে বলা হয়েছে– ওই দিন আলাদা তিনটি চেকের মাধ্যমে এমএস প্রমোশনের হিসাব থেকে প্রাইম ট্রেডার্সের হিসাবে ৫৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা স্থানান্তর করা হয়, যা সন্দেহজনক। এই অর্থ পাচার হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে বিএফআইইউ।

গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ৬ অক্টোবর বিএফআইইউ মুন্নী সাহার ব্যাংক হিসাব তলব করে। ব্যাংক হিসাবের বাইরে গুলশান-তেজগাঁও লিংক রোড এলাকায় শান্তিনিকেতনে ১৬৫, রোজা গ্রীণে তার একটি ডুপ্লেক্স বাড়ির সন্ধান মিলেছে। এছাড়া চট্টগ্রামেও তার ফ্ল্যাট রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

এই বিষয়ে মুন্নী সাহা বলেছেন, তার স্বামী কবির হোসেন তাপস দেশের একজন পুরোনো ব্যবসায়ী। সুদীর্ঘ ২২ বছর ধরে তিনি বিজ্ঞাপন ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সহ বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িত। ওয়ান ব্যাংকের যে একাউন্টটির কথা বলা হয়েছে, আমি সেই একাউন্টের একজন নমিনি মাত্র, একাউন্টের লেনদেনের সাথে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।

কবির হোসেন তাপসের কোন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে আমি অংশীদার নই, কোন একাউন্টের গ্যারান্টারও নই। একাউন্ট ওপেন করার সময় পরিবারের কাউকে নমিনি হিসেবে দিতে হয় বলে এই একাউন্টে আমার নাম দেয়া আছে মাত্র।

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গুলিতে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থী নাঈম হাওলাদার হত্যাসহ ৪টি মামলা রয়েছে মুন্নী শাহার বিরুদ্ধে। এই সব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ একাধিক মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ সদস্য এবং পুলিশ ও র‌্যাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে যে ৭ সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে।

গত পহেলা ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে পড়েন মুন্নী সাহা।পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে তাঁকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বিক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে প্যানিক অ্যাটাকে অসুস্থ হয়ে পড়া এবং চার মামলায় জামিন নেয়ার শর্তে ৪৯৭ ধারায় পরিবারের জিম্মায় মুন্নী সাহাকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।

মুন্নী সাহার জন্ম ১৯৭০ সালে মুন্সীগঞ্জে। সাত ভাই, চার বোনের পরিবারে তার বেড়ে ওঠা। খুব প্রাচুর্যে বড় হননি তারা। সহোদরদের সঙ্গে একটা রুটি দুজনে ভাগ করে খেতেন। একজনের জামা ছোট হয়ে গেলে আরেকজন পরতেন। স্কুলে যেতেন প্লাস্টিকের সাদা জুতা পরে। সেটা আবার একজনের ছোট হয়ে গেলে অন্যজন পায়ে দিতেন। কাপড়ের জুতা তাড়াতাড়ি ছিঁড়ে যায় বলে প্লাস্টিকের জুতা পরতেন তারা। মুন্নী সাহা ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এমন অভিব্যক্তি জানিয়েছিলেন।

মুন্নী সাহা এসএসসি পাস করেছেন মুন্সীগঞ্জের ভিজেএম সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে। তারপর ইডেন। এইচএসসি ও বিএসসি ইডেন থেকেই। এরপর সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগে মাস্টার্স করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

মুন্নী সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ১৯৯১ সালে আজকের কাগজের আন্তর্জাতিক পাতায় সাব-এডিটর হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেন। তারপর ভোরের কাগজ।সেখান থেকে তিনি যান একুশে টেলিভিশনে। এরপর যোগ দেন এটিএন বাংলায়। পরবর্তীতে এটিএন নিউজে যোগদেন। ২০২৩ সালের ৩১ মে এটিএন নিউজ থেকে পদত্যাগ করেন মুন্নী সাহা। পরে ‘এক টাকার খবর’ নামের নতুন একটি প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি।

বিএনএ/ সৈয়দ সাকিব,ওজি/এইচমুন্নী

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ