24 C
আবহাওয়া
১০:৪১ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ১৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কেন ড. ইউনূস ‘রিসেট বাটন’ পুশ করতে বললেন?

কেন ড. ইউনূস ‘রিসেট বাটন’ পুশ করতে বললেন?

কেন ড. ইউনূস ‘রিসেট বাটন’ পুশ করতে বললেন?

বিএনএ, ঢাকা: সম্প্রতি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯-তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে গিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে বসেই গত ২৭ সেপ্টেম্বর মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘ভয়েস অব আমেরিকা’কে একটি সাক্ষাৎকার দেন তিনি। প্রায় ১৯ মিনিটের ওই সাক্ষাৎকারে অন্তর্তবর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ, সেনাবাহিনীকে ম্যাজেস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়াসহ আরও কিছু বিষয়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

‘রিসেট বাটন’ প্রসঙ্গে আলোচনার সূত্রপাত ড. ইউনূসের এই মন্তব্য ঘিরেই। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের এক বক্তব্যের জের ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, বিশেষ করে ফেসবুকে ‘রিসেট বাটন’ নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। তারই সূত্র ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই রিসেট বাটন নিয়ে তর্ক-বিতর্ক এতদূর গড়িয়েছে যে অনেকেই তাদের ফেসবুক পোস্টে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে লিখছেন ‘স্টেপ ডাউন ইউনূস’। অর্থাৎ, ‘ইউনূসকে হটাও’। এমনকি, টুইটারে যে হ্যাশট্যাগগুলো এই মুহূর্তে বাংলাদেশে ট্রেন্ড করছে, এটি তার মধ্যে অন্যতম।

অথচ মাত্র দুই মাস আগে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ চেয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি জনপ্রিয় হ্যাশট্যাগ ছিল- স্টেপ ডাউন হাসিনা। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে দেশ থেকে চলে গিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপর প্রায় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রকাশ্য বা প্রচ্ছন্ন সমর্থন নিয়ে গত ৮ আগস্ট রাষ্ট্রপতির কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন মুহাম্মদ ইউনূস।

সামাজিক মাধ্যমে অধ্যাপক ইউনূসের সমালোচনায় যেমন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থকদের বড় সংখ্যায় দেখা যাচ্ছে তেমনি সেই সরকারের বিরোধিতাকারীদেরও দেখা যাচ্ছে। কিন্তু মাত্র দুই মাসেরও কম সময়ের মাঝে কী এমন হলো যে মুহাম্মদ ইউনূস এত তোপের মুখে পড়লেন? কেন অনেকে প্রশ্ন করছেন যে ‘রিসেট বাটনে পুশ’ করলেই অতীত মুছে ফেলা যায় না? অনেকেই ফেসবুক ও টুইটারে লিখেছেন যে, মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৭১ সাল তথা বাংলাদেশ গঠনের ইতিহাসকে অস্বীকার করার কথা বলেছেন।

একজন মন্তব্য করেছেন, ‘রিসেট বাটন’ পুশ করেছেন, কিন্তু জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে ডিলিট করতে পারছেন না! অনেকেই বলছেন, চাইলেই অতীত মুছে দেওয়া যায় না। এমনকি, কেউ কেউ এটাও মনে করছেন, এই কথার মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস প্রশ্নে মুহাম্মদ ইউনূস তার অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।

যারা পোস্টগুলো করছেন, তারা সবাই যে পরিচিত বা জনপ্রিয় মুখ, তেমন না। অনেক সাধারণ মানুষ বা যারা গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন, তারাও ‘রিসেট বাটন’ প্রসঙ্গে হতাশ।

এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপারসন এবং সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জহিরুল ইসলাম খান পান্নাও কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, মুহাম্মদ ইউনূস জ্ঞানী হলেও মুক্তিযুদ্ধে তার কোনও অংশগ্রহণ আমরা জানি না।

আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, “রিসেট বাটন কিন্তু আমরাও চাপতে পারি। আমরা ১৯৭১ সালে রিসেট বাটনে চাপ দিয়ে পাকিস্তানকে ওয়াশ-আউট করে বাংলাদেশ তৈরি করেছি, সেভাবে আবারও রিসেট বাটন চাপ দিতে পারি।”

৫ আগস্টের পর থেকে সব ধরনের ‘মব ভায়োলেন্স’এর দায়িত্ব ড. ইউনূসকে নিতে হবে উল্লেখ করে জেড আই খান পান্না আরও বলেন, রিসেট বাটনে চাপ দেওয়া প্রসঙ্গে কথা বলেছেন লেখক তসলিমা নাসরিনও। তবে তার প্রশ্নটা একটু ভিন্ন।

তিনি প্রশ্ন করেছেন, মুহাম্মদ ইউনূস যে তরুণদের কথা বলছেন, তাদের মাঝে কারা রিসেট বাটন টিপেছে? মুহাম্মদ ইউনূসকে বিভিন্ন ধর্ম ও মতবিদ্বেষী তরুণরা ঘিরে রেখেছে উল্লেখ করে তসলিমা আরও জানতে চেয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা ওই তরুণদেরকেই নতুন বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব দিতে চান কি না।

রিসেট বাটন পুশের ঘটনাটি নিয়ে যখন সারাদেশ তোলপাড় তখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ কল্যাণের কাছ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দাবি করা ৬৬৬ কোটি টাকা দেওয়ার রায় স্বপ্রণোদিতভাবে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন হাইকোর্ট। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সমালোচনা হচ্ছে। একজন লিখেছেন, রিসেট বাটন পুশ করে ৬৬৬ কোটি টাকা পরিশোধ থেকে মুক্ত হয়ে গেছেন। এই ভাবে নানা তির্যক মন্তব্যে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সয়লাব।

তবে ড. ইউনূসের পক্ষে কথা বলার মানুষও নেহায়েত কম নয়। রাজনীতি বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি সমর্থনের জায়গা থেকেই অধ্যাপক ইউনূসকে নিয়ে এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।

তার মতে, ‘রিসেট বাটন’ প্রসঙ্গে এই মুহূর্তে যারা সমালোচনা করছেন, “তারা মনে করে যে একাত্তর-ই শুরু, একাত্তর-ই শেষ। অথবা, পঁচাত্তরের পর সব শেষ হয়ে গেছে। ‘বঙ্গবন্ধু না থাকলে বাংলাদেশ হতো না’ দাবির পাশাপাশি সমালোচনাকারীরা এখন বলছেন যে ‘বাংলাদেশ একমাত্র নিরাপদ থাকে শেখ হাসিনার হাতে’- শেখ হাসিনা বিদায় হয়ে গেছে, এটা তাদের সহ্য হচ্ছে না।”

তিনি আরও বলেন, “রিসেট মানে হলো, আমাদের সবকিছু আমূল সংস্কার করতে হবে। প্রচলিত ধারার রাজনীতি, রাষ্ট্রব্যবস্থা, সরকার ব্যবস্থা, অর্থনীতি আমরা চাই না। এখান থেকে বের হতে হলে অতীত থেকে একটা ছেদ ঘটাতে হবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্ভবত সেটাই বুঝাতে চেয়েছেন।

বিএনএনিউজ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী/ বিএম

Loading


শিরোনাম বিএনএ