বিএনএ, রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ( রাবি) দ্বাদশ সমাবর্তনে অংশ নিতে পারছে না স্নাতক শ্রেণিতে পাস করা শিক্ষার্থীরা। তবে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের সময়ে ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবরের ২৫২তম শিক্ষা পরিষদ সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পাস শিক্ষার্থীরাও পরবর্তী সমাবর্তনগুলোতে অংশ নিতে পারবেন।
নতুন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার প্রশাসনের এটিই প্রথম সমাবর্তন। তবে গতকাল সোমবার জনসংযোগ দপ্তর থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দ্বাদশ সমাবর্তনে ২০১৭ ও ২০১৮ সালের স্নাতকোত্তর, এমবিবিএস, বিডিএস ও ডিভিএম এবং ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এমফিল, এমডি ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারীগণ অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
প্রায় চার বছর পর আয়োজিত হতে যাওয়া এই সমাবর্তনে অনার্সের সুযোগ না দেওয়ায় চরম ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, অনার্স শেষ করে অনেকেই মাস্টার্স প্রোগ্রামে অংশ নেন না। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকের ডিগ্রি অর্জন করলেই সুযোগ থাকে সমাবর্তনে অংশ নেওয়ার। তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি ভিন্ন। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন ছাড়া তাদের সমাবর্তনে অংশ নেয়ার সুযোগ থাকে না। তাই ২৫২তম শিক্ষা পরিষদ সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, পরবর্তী সমাবর্তনে (দ্বাদশ) স্নাতক পাশ করা শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারবেন। তবে, একাডেমিক কাউন্সিলের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হচ্ছেনা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও চলছে এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা। শিক্ষার্থীরা জানান, একাদশ সমাবর্তনের পর প্রশাসন থেকে বলা হয়েছিল স্নাতক পাশ করলেই শিক্ষার্থীরা পরবর্তী সমাবর্তনে অংশ নিতে পারবে। কিন্তু তারা অংশগ্রহণ করতে না পারাই প্রশাসনের আশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ছাত্র-ছাত্রী আছেন যাদের পারিবারিক প্রয়োজনে অনার্স শেষ করেই চাকরি করতে যেতে হয়। অনেক মেয়ের পক্ষে অনার্স শেষের পর বিভিন্ন কারণে মাস্টার্স করার ইচ্ছা থাকলেও তা হয়ে ওঠে না। তাহলে কি আমরা সারাজীবন বঞ্চিতই থেকে যাব? সব স্নাতক ডিগ্রিধারী (যারা মাস্টার্স করেননি) সমাবর্তনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে তারা।
আয়ুশী বনিক স্নেহা নামের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন বিবেকহীন কাজ দেখে লজ্জা হচ্ছে। অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের এক হয়ে বিষয়টি প্রশাসনের সাথে বসতে হবে। যেখানে একবার কথা হয়েছে স্নাতক ডিগ্রিধারীদের সমাবর্তন দেওয়া হবে সেখানে এবার আবার উল্টো চিন্তা ভাবনা আসে কীভাবে? এটা কি শিক্ষার্থীদের বোকা বানানো হচ্ছে? বিশ্ববিদ্যালয় কি কোনো স্কুল, কিন্ডারগার্টেন যে শিক্ষকরা নিজেদের সুবিধামতো ডিসিশন নিবে আর তাই মেনে নিতে হবে? প্রয়োজনে ভিসির বাসভবনের সামনে আন্দোলন করব। তিনি শত শত শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিতে পারেন না।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মহলেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এস. এম. সানজিদ রহমান এক পোস্টে লিখেন, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন হচ্ছে এটা খুবই আনন্দের সংবাদ। একজন শিক্ষার্থী বুভুক্ষুর মতো অপেক্ষা করে এই দিনটির জন্য। তবে সবার বাস্তবতা এক নয়। অনেক শিক্ষার্থী স্নাতক করে চলে যায়। সবাই স্নাতকোত্তর করে না। যারা স্নাতক করে চলে গেছে তাদের সমাবর্তন হতে বঞ্চিত করা উচিত নয়। রেজিস্ট্রেশনের সময় যেহেতু এখনও আছে সেহেতু সমাবর্তনে স্নাতকদেরও সুযোগ দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। এতে স্বপ্ন পূরণ হবে হাজারো শিক্ষার্থীর।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫২তম শিক্ষা পরিষদের সদস্য ও আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ এসব প্রসঙ্গে বলেন, “বিশ্বের প্রায় সকল দেশে এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও স্নাতক পাসে সমাবর্তনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। তবে আমাদের শিক্ষার্থীরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যদিও ২৫২তম শিক্ষা পরিষদ সভায় স্নাতক পাশকারীরা সমাবর্তনে অংশ নিতে পারবেন বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবর্তনে সার্টিফিকেট নেওয়া আর টাকা দিয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে সার্টিফিকেট নেওয়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। তাই স্নাতক পাশ করা শিক্ষার্থীদেরও সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া হোক।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, “অনার্সের সমাবর্তন প্রসঙ্গে একাডেমিক কাউন্সিলের যে সিদ্ধান্তটি ছিল, সেটি তখনকার প্রেক্ষাপটে নেওয়া হয়েছিল। আমরা এখনকার পরিস্থিতির উপর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা কোনো বিধি নয়। সমাবর্তন নিয়ে বড় একটি কমিটি কাজ করে, সেখানেই এই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়। এককভাবে এখানে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই।”
বিএনএ/সাকিব, এমএফ