24 C
আবহাওয়া
১:৩৮ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২০০ (নরসিংদী-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২০০ (নরসিংদী-২)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে  নরসিংদী-২ আসনের হালচাল।

YouTube player

নরসিংদী-২ আসন 

নরসিংদী-২ সংসদীয় আসনটি নরসিংদী সদর উপজেলার আমদিয়া, পাঁচদোনা ও মেহের পাড়া ইউনিয়ন এবং পলাশ উপজেলা  নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২০০ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির ড. আবদুল মঈন খান বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৩৭ হাজার ৬ শত ৭৬ জন। ভোট প্রদান করেন ৯০ হাজার ৫ শত ৬৫  জন। নির্বাচনে বিএনপির ড. আবদুল মঈন খান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪২ হাজার ৮ শত ৫১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির দেলোয়ার হোসেন খান। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ২৩ হাজার ৮ শত ৯৬ ভোট।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ড. আবদুল মঈন খান কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি,প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি,ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির ড. আবদুল মঈন খান কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির ড. আবদুল মঈন খান  বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ২৯ হাজার ৭ শত ৮২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫ হাজার ৮ শত ১ জন। নির্বাচনে  বিএনপির ড. আবদুল মঈন খান  বিজয়ী হন।  ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান  ৪৫ হাজার ২ শত ৪৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির আজমল কবির । লাঙ্গল প্রতীকে  তিনি পান ২৩  হাজার ৭ শত ৪৭ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির ড. আবদুল মঈন খান  বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৩ শত  ৬৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২৮ হাজার ৪ শত ২৮ জন। নির্বাচনে বিএনপির ড. আবদুল মঈন খান  বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান  ৬৭ হাজার ৩ শত ৭৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম। নৌকা প্রতীকে   তিনি পান ৪৬ হাজার ৩ শত  ৪২ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আনোয়ারুল আশরাফ খান বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬ হাজার ৭ শত ৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮ শত ৫২ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আনোয়ারুল আশরাফ খান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১ হাজার ৬ শত ৮৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ড. আবদুল মঈন খান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭১ হাজার ৮ শত ৫৯ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আশরাফ খান  বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩ হাজার ৩ শত ৭৩ জন। ভোট প্রদান করেন ৬৭ হাজার ৬৫ জন। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আশরাফ খান  বিজয়ী হন। দোয়াত কলম  প্রতীকে তিনি পান ৩৮ হাজার ২ শত ১৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের জায়েদুল কবির । নৌকা  প্রতীকে তিনি পান ২৭ হাজার ২শত ৩৪ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয়  জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন  করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আনোয়ারুল আশরাফ খান বিজয়ী হন 

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩৪ হাজার ৩ শত ৭৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮৯ হাজার ৩ শত ৯৩ জন। নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৫ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের আনোয়ারুল আশরাফ খান,  ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির ড. আবদুল মঈন খান, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির আজম খান, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আরিফুল ইসলাম এবং টেলিভিশন প্রতীকে বিএনএফ এর সাদিকুন নাহার প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আনোয়ারুল আশরাফ খান বিজয়ী হন । নৌকা প্রতীকে তিনি পান  ১ লাখ ৭৫ হাজার ৭ শত  ১১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির  ড. আবদুল মঈন খান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৭ হাজার ১ শত ৮০ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম সংসদে বিএনপি,  নবম,ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ  এবং  দশম  সংসদে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর নরসিংদী-২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, নরসিংদী-২ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৫.৭৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২১.২০%, বিএনপি ৪৭.৩২%, জাতীয় পার্টি ২৬.৩৯%  স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৫.০৯% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮১.৫২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২.৩১%, বিএনপি ৪২.৭৬% জাতীয় পাটি ২২.৪৪%, জামায়াত ইসলামী ৪.০০% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৮.৪৯% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮০.৫৯ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৬.০৮%, ৪ দলীয় জোট ৫২.৪৬%, জাতীয় পার্টি ১১.১৩ % স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৩৩% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৮.৮৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৮.৭৯%, ৪ দলীয় জোট ৩৮.৮০% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.৪১% ভোট পায়।

নরসিংদী-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আশরাফ খান। দ্বাদশ জাতীয়  সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। আওয়ামী লীগ থেকে আরও মনোনয়ন চাইবেন, দশম জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খান পোটন। তারা দুই জনই সহোদর। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ঘুরেফিরে আসছে এ দুজনের নাম। এর বাহিরে মনোনয়ন চাইবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সংস্কৃতিবিষয়ক উপকমিটির সদস্য আলতামাস কবির মিশু।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান।  তিনি দলের একক প্রার্থী।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এ এন এম রফিকুল আলম সেলিম। জাসদ থেকে মনোনয়ন চাইবেন নরসিংন্দী জেলা জাসদের সভাপতি জায়েদুল কবীর।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, নরসিংদী-২ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত ছিল। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী আব্দুল মঈন খান ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত টানা চারবার  সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জনপ্রিয় ও ক্লিন ইমেজের  এই নেতা ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপের কাছে হারের পর থেকে এখনো আসনটি হাতছাড়া বিএনপির। তখন থেকে এই আসনের চালচিত্র পাল্টে গেছে।

দশম জাতীয় সংসদে আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ দলীয় মনোনয়ন পাননি। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মহাজোটের প্রার্থী জায়েদুল কবীরকে পরাজিত করেন দিলীপের ভাই  স্বতন্ত্র প্রার্থী  কামরুল আশরাফ খান পোটন। তখন থেকে এই  আসনের বিশেষ করে পলাশ উপজেলার ক্ষমতার রাজনীতিতে  দিলীপ ও  তার ভাই পোটনের উত্থান হয়। এই দুই ভাইয়ের  বাইরে কোনো বলয় নেই বললেই চলে। নেই, প্রকাশ্যে কোনো কোন্দলও। শক্ত অবস্থানে রয়েছেন তারা।

বিএনপির সাংগঠনিক তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। অভিযোগ আছে, নেতাকর্মীদের সঙ্গে ড. মঈন খানের যোগাযোগ নেই। কেন্দ্রীয় রাজনীতি ও অসুস্থতার কারণে এলাকায় আগের মতো সময় দিতে পারছেন  না তিনি। মামলা, হামলার ভয়ে মাঠে নেই তার অনুসারিরাও। দলে হেভিওয়েট ক্লিন ইমেজের জনপ্রিয় নেতা থাকলেও সাংগঠনিক দিক থেকে হ-য-ব-ল অবস্থায় আছে বিএনপি। তবে প্রচুর নিরব ভোটার রয়েছে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ২০০তম সংসদীয় আসন (নরসিংদী-২) আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমানে সমান বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনএ/ শাম্মী, রেহানা, ওজি, ওয়াইএইচ

আরো পড়ুনঃদ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৯৯ (নরসিংদী-১)

Loading


শিরোনাম বিএনএ