বিএনএ, সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি কিছুটা কমলেও বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। জেলার সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার কমপক্ষ ৪০টি ইউনিয়নের এক লাখ বেশি মানুষ পানি বন্দী হয়ে নানা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। জ্বালানির অভাবে রান্না করা খাবার, শিশু খাদ্য, বিশুদ্ধ পানির সংকট দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে তাদের জীবন। পাশাপাশি পানিবাহিত নানা রোগ ও সাপ পাকামাকড়ের ভয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে বানবাসি মানুষ।
গবাদি পশুর খাদ্য সংকট
নিম্নাঞ্চলের ৪ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। গোচারণ ভূমি তলিয়ে যাওয়ায় গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ৮ সেন্টিমিটার কমে রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কাজিপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টেও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে যমুনার পানি।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) সিরাজগঞ্জের শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টের গেজ রিডার আব্দুল লতিফ জানান, রোববার ভোর ছয়টায় শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে যমুনার পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৯৪ মিটার। শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ভোর ছয়টায় এই পয়েন্টে পানির সমতল ছিল ১৪ দশমিক ২ মিটার। ফলে ২৪ ঘণ্টায় পানি কমেছে ৮ সেন্টিমিটার।
এদিকে, নদী তীরবর্তী কাজিপুর ও চৌহালী উপজেলায় চলছে তীব্র নদী ভাঙন। প্রতিদিনই এই দুটি উপজেলার নাটুয়ারপাড়া ও বাগুটিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, ফসলি জমি। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও হাট-বাজার।
জামালপুরে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে
অন্যদিকে, জামালপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ২৫ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার নদ-নদীর পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে বন্যাকবলিত এলাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
উজানের ঢল আর টানা বর্ষণে পাবনায় যমুনার পানি এক সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করায় ফসল ও সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। অনেক স্থানে বাসা-বাড়িতে পানি প্রবেশ করায় নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে অসুবিধা হচ্ছে। কিছু স্থানে ভাঙন ও পানি বৃদ্ধির ফলে নদী তীরবর্তী মানুষ তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলেও ত্রাণ পাচ্ছেন না বলে বানভাসিদের অভিযোগ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উত্তরাঞ্চলীয় নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ হাসান জানান, রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে যমুনা নদীর পানি বেড়ে নগরবাড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর পদ্মা নদীর পানি পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং বড়াল নদের পানি কিছুটা বেড়ে বড়াল ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বইছে।
গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র নদ ও ঘাঘট নদীর পানি বাড়ায় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন ৫০ হাজার মানুষ। সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির। পাশাপাশি, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট,, বগুড়াসহ বেশকিছু জেলায় প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল।
পদ্মা-যমুনাসহ অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি
পদ্মা-যমুনাসহ অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মানিকগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর আরিচা পয়েন্টে ৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। বন্যা কবলিত হয়েছে শিবালায়, হরিরামপুর, দৌলতপুরসহ ৫টি উপজেলা। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, বসতঘর। প্লাবিত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার আর পানীয় জলের সংকট।
কালিয়াকৈরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
অন্যদিকে, রাজধানীর আশপাশের কয়েকটি জেলার বন্যা পরিস্থতি অবনতির দিকে। তুরাগ ও বংশী নদীর পানি কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় গাজীপুরের কালিয়াকৈরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মুন্সিগঞ্জের নিম্নাঞ্চল অতিক্রম করে পড়েছে উঁচু জমিতেও পানি প্রবেশ করছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, রাজবাড়ি, ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। বন্যা কবলিত এলাকায় রান্না করা খাবার, শিশু খাদ্য, বিশুদ্ধ পানির সংকট নিরসনে দ্রুত প্রশাসনিক সহযোগিতা চায় বানবাসী মানুষ।
বিএনএনিউজ২৪ডটকম/আরকেসি,জিএন