বিএনএ,ঢাকা: আজ শনিবার(৫ জুন) বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এ উপলক্ষে বিভিন্ন পরিবেশ সংগঠন স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও দিবসটি অত্যন্তগুরুত্বে সাথে পালিত হবে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে বলেন, মানবসভ্যতার অস্তিত্বরক্ষায় প্রতিবেশ-সংরক্ষণ এবং অবক্ষয়িত পরিবেশ পুনরুদ্ধারের কোনো বিকল্প নেই। প্রতিবেশ-ধ্বংসকারী কার্যক্রম যেমন বন-জঙ্গল ধ্বংস করা, বন্যপ্রাণীনিধন এবং বায়ুদূষণসহ অন্যান্য দূষণবৃদ্ধির প্রভাবে জলবায়ু-পরিবর্তনের ফলে আজ মানবজাতির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। এ প্রেক্ষাপটে প্রকৃতি, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য-সংরক্ষণ এবং এগুলোর টেকসই ব্যবহারকে গুরুত্ব দিয়ে এ বছরের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য : Ecosystem Restoration যার ভাবানুবাদ : ‘প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার, হোক সবার অঙ্গীকার’ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও সময়োপযোগী।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানজনিত কারণে বাংলাদেশ বছরের বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়; এর সাথে যুক্ত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য-সংরক্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানে ১৮ক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ‘রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন।’ এ অনুচ্ছেদ সন্নিবেশের মাধ্যমে দেশের সর্বোচ্চ আইনে পরিবেশ-সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা ও গুরুত্ব প্রতিফলিত হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ আরও বাণীতে বলেন, বিশ্বব্যাপী ক্রমক্ষয়িষ্ণু প্রতিবেশ এবং জীববৈচিত্র্যের অবক্ষয়ের অব্যাহত ধারা-প্রতিরোধে জাতিসংঘ ২০২১-২০৩০ সময়কে ‘Decade on Ecosystem Restoration’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। সরকার জীববৈচিত্র্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশগুলোকে সংরক্ষিত এলাকা ও প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণাপূর্বক সেগুলোর প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনায় উন্নয়নকার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সকলক্ষেত্রে যাতে পরিবেশগত টেকসই উন্নয়নকে বিবেচনায় নেয়া হয়, সে লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান-স্থাপনে প্রতিবেশ ও পরিবেশসম্মত বিধিব্যবস্থা-প্রতিপালনের দিকে বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে কৃষি, শিল্পসহ সকলক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। তবে উন্নয়নকে টেকসই করতে সকলপর্যায়ে পরিবেশ-সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রপতি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তুলবো, ইনশাআল্লাহ
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে, দলীয়ভাবে এবং সরকারি উদ্যোগে দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসুচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছিলেন। স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা কক্সবাজার সমুদ্র উপকূল রক্ষাকারী ঝাউবেষ্টনী সৃষ্টি করেছিলেন। পরিবেশবিপর্যয়ের কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে জানমালের সুরক্ষা দিতে বেড়িবাঁধ, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও মুজিবকিল্লা নির্মাণ করেছিলেন এবং স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন। আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ কৃষকলীগ ১৯৮৫ সাল থেকে প্রতিবছর আষাঢ়-শ্রাবণ-ভাদ্র এই তিনমাস সমগ্র দেশে ফলজ, বনজ ও ভেষজ এ তিনপ্রজাতির গাছ লাগানোর কর্মসূচি অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে আরও বলেন, উন্নত দেশগুলোর লাগামহীন উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষা ও শিল্পায়নের কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রার ক্রমাগত বৃদ্ধি জলবায়ু-পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করছে। জলবায়ু-পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ফলে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে জলবায়ু-পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ-মোকাবিলায় সহিষ্ণুজাত উদ্ভাবনের জন্য গবেষণায় প্রথমবারের মতো বরাদ্দ দিয়েছিল। আমাদের সরকারের উদ্যোগে গত ১২ বছরে বৈরী পরিবেশে সহনশীল বিভিন্ন ফসলের মোট ১০৯টি উন্নত/উচ্চ উৎপাদনীল জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। ২০০৯ সালে নিজস্ব সম্পদ থেকে আমরা ৪৫০ মিলিয়ন ডলারের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছি। আমরা ২০১২ সালের ২১ এপ্রিল Intergovernmental Seience Policy Platform on Biodiversity and Ecosystem Services (IPBES)-এর সদস্যপদ লাভ করেছি এবং সংস্থাটির প্রাধিকার অনুযায়ী বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ ও প্রাণী-সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছি। জলবায়ু-পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় সফলতার স্বীকৃতিস্বরুপ আমি জাতিসংঘ কর্তৃক ২০১৫ সালে ‘চ্যাম্পিয়ান অভ্ দ্য আর্থ’ সম্মাননা পেয়েছি, যা আমি দেশবাসীকে উৎসর্গ করেছি। আমরা ‘জাতীয় পরিবেশ নীতি, ২০১৮’ এবং ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপনা (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৯’ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। ২০১৯ সালের নভেম্বরে জাতীয় সংসদে ‘Planetary Emergency’ নামে একটি Motion গ্রহণ করেছি। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ‘গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশন’-এর দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অফিস ঢাকায় স্থাপন করেছি। জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি ঘোষিত বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ দশকে (২০২১-২০৩০) আমরা জীববৈচিত্র্য-সংরক্ষণের ওপর মনোনিবেশ করেছি। আমরা জাতীয় সৌরশক্তি কর্মপরিকল্পনার (২০২১-২০৪১) বাস্তবায়ন শুরু করেছি। পরিবেশ-সংরক্ষণে আমাদের সরকারের সফলতার কারণে ‘পরিবেশ কূটনীতিতে’ বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের নেতৃত্ব প্রশংসিত হচ্ছে। আমরা পরিবেশ বিপর্যয়ে সংকটাপন্ন দেশগুলোর স্বার্থ-সুরক্ষায় ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ)’ এবং ‘ভালনারেবল-২০ এর অর্থমন্ত্রীদের জোট-এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমরা জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা তৈরি করছি। জলবায়ুর-পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়-ক্ষতি কমিয়ে টেকসই উন্নয়ন অর্জনের লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ-ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ বাস্তবায়ন করছি। আমরা জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ উদ্যাপনের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই ১ কোটি গাছের চারা রোপণ করেছি।
বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের কারণে মানবজাতি ও অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রকৃতি যেন কিছুটা প্রাণ ফিরে পেয়েছে। সারাবিশ্ব একসঙ্গে ‘লকডাউন’ হওয়ার ফলে পরিবেশ দূষণ কমেছে, পৃথিবী একটি গাঢ় সবুজগ্রহে পরিণত হয়েছে। এই মহামারি থেকে শিক্ষা নিয়ে মানুষ একটি সবুজ-পৃথিবী সৃষ্টিতেই মনোনিবেশ করবে বলে আমার বিশ্বাস।
আমরা বাংলাদেশকে মাধ্যম-আয়ের দেশে রূপান্তরিত করেছি; ২০৪১ সালের মধ্যে এদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তুলবো, ইনশাআল্লাহ।
বিএনএনিউজ২৪,এসজিএন
