28 C
আবহাওয়া
৯:৩৭ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ব্রয়লার মুরগিতে অতিমাত্রায় ভারী ধাতু

ব্রয়লার মুরগিতে অতিমাত্রায় ভারী ধাতু

ব্রয়লার

বিএনএ ডেস্ক: মানবদেহে সহনীয় মাত্রার চেয়ে ১২৮ গুণ বেশি নিকেলের উপস্থিতি পাওয়া গেছে ব্রয়লার মুরগির মাংসে। সেই সঙ্গে ক্যাডমিয়াম, লেড/সিসা ও ক্রোমিয়ামেরও আধিক্য রয়েছে, যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

‘অ্যাসেসমেন্ট অব হেভি মেটালস ইন ব্রয়লার চিকেন অ্যান্ড ইটস সোর্স ট্রাকিং ইন খুলনা সিটি করপোরেশন এরিয়া’ শিরোনামের ওই গবেষণাপত্রে দেখা যায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির মাংসে ভারী ধাতু নিকেল রয়েছে ১২৮ মিলিগ্রাম, ক্রোমিয়াম ১২ দশমিক ৫ মিলিগ্রাম, ক্যাডমিয়াম শূন্য দশমিক ১৯ মিলিগ্রাম, লেড বা সিসা ১৮ দশমিক ৫১ মিলিগ্রাম ও আর্সেনিক রয়েছে শূন্য দশমিক ৪৩ মিলিগ্রাম।

এ ছাড়া প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির হাড়ে নিকেল রয়েছে ৭৯ মিলিগ্রাম, ক্রোমিয়াম ১০ দশমিক ৪৫ মিলিগ্রাম, ক্যাডমিয়াম শূন্য দশমিক ১৭ মিলিগ্রাম, লেড বা সিসা ৩ দশমিক ৭৯ মিলিগ্রাম ও আর্সেনিক রয়েছে শূন্য দশমিক ৩৭ মিলিগ্রাম।

জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের (এফএও) থেকে ব্রয়লার মুরগির মাংস বা হাড়ে এসব ভারী ধাতুর সহনীয় মাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সেই মতে, প্রতি কেজি মাংস বা হাড়ে নিকেল শূন্য দশমিক ৫ মিলিগ্রাম, ক্রোমিয়াম ১ মিলিগ্রাম, ক্যাডমিয়াম শূন্য দশমিক ৩ মিলিগ্রাম, লেড বা সিসা শূন্য দশমিক ১ মিলিগ্রাম ও আর্সেনিক শূন্য দশমিক ১ মিলিগ্রামের বেশি থাকা উচিত নয়।

খুবির পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী তাশরিফ আহমেদ ওই গবেষণাটি করেছেন।

তিনি বলেন, ‘খুলনা মহানগরীর ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজার, রূপসা ঘাট, বয়রা বাজার, নিউমার্কেট কাঁচা বাজার ও নিরালা বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৫টি ব্রয়লার মুরগি সংগ্রহ করে গবেষণাগারে পরীক্ষা করা হয়। পরে সেখান থেকে পাওয়া ডাটা নিয়ে জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের অনুমোদিত মাত্রার সঙ্গে তুলনা করা হয়। তাতে দেখা যায়, নিকেল, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, লেড ও আর্সেনিক অনুমোদিত মাত্রার থেকে বেশি রয়েছে।’

‘আমরা বাজারে পাওয়া যায় এমন ১৫টি কোম্পানির ব্রয়লার ফিড (খাদ্য) সংগ্রহ করেছিলাম। তা ল্যাবে পরীক্ষা করে অনুমোদিত মাত্রার থেকে বেশি মাত্রায় ভারী ধাতুর উপস্থিতি পেয়েছি। গবেষণায় পাওয়া গেছে, ব্রয়লার মুরগির দেহে এসব ভারী ধাতু আসছে মূলত তাদের খাওয়ানো খাদ্য থেকে’, বলেন তাশরিফ আহমেদ।

গবেষণাপত্রে দেখা যায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার ফিডে (খাদ্য) নিকেল রয়েছে সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৯৩ মিলিগ্রাম থেকে সর্বনিম্ন শূন্য দশমিক ১২ মিলিগ্রাম। এ ছাড়া ক্রোমিয়াম ৬০ দশমিক ৫৮ থেকে ২ মিলিগ্রাম, ক্যাডমিয়াম শূন্য দশমিক ১৬ মিলিগ্রাম থেকে শূন্য দশমিক শূন্য ৯ মিলিগ্রাম ও লেড বা সিসা ৫ দশমিক ৮৬ মিলিগ্রাম থেকে শূন্য দশমিক ৫৫ মিলিগ্রাম পর্যন্ত রয়েছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনপ্রধান অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, ‘গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, ব্রয়লার ফিড থেকে ব্রয়লার মুরগির দেহে ভারী ধাতু প্রবেশ করছে। এ ছাড়া ব্রয়লার মুরগিকে সাধারণ নলকূপের পানি খাওয়ানো হয়, সেই পানিতে আর্সেনিক থাকায় মুরগির দেহে আর্সেনিক প্রবেশ করছে।’

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. নিয়াজ মুস্তাফি চৌধুরী বলেন, ‘খাবারের হেভি মেটালগুলোর নির্দিষ্ট মাত্রা রয়েছে। বেশি মাত্রায় ক্রমাগত গ্রহণ করলে ভারী ধাতুগুলো আমাদের পরিপাক তন্ত্রে আক্রমণ করে। এটা ক্রমান্বয়ে গ্রহণের ফলে পরিপাক তন্ত্রের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে পাকস্থলীর ক্যানসার, অগ্ন্যাশয় ক্যানসার, কোলন ও লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ ছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে কিডনির ক্ষতি হতে পারে। আমাদের দেহের ত্বকের নিচে ধাতুগুলো জমা হয়ে ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়া ভারী ধাতুর প্রভাবে গর্ভের সন্তান নষ্ট হতে পারে বা বিকলাঙ্গ সন্তান জন্ম দিতে পারে। লিভারেও খাদ্য বিপাকে সমস্যা হতে পারে।’

বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ