21 C
আবহাওয়া
১:১২ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » বন্ধ হোক বাংলা ভাষার বিকৃত উচ্চারণ

বন্ধ হোক বাংলা ভাষার বিকৃত উচ্চারণ


নিজস্ব প্রতিবেদক : বিয়েটা বাঙালির। কিন্তু অতিথিদের পাঠানো আমন্ত্রণপত্রের ভাষাটি ইংরেজি। অথচ ইংরেজি নিমন্ত্রণপত্র বিলানো সেসব বিয়েতে থাকেন না কোনো বিদেশি অতিথি। বাংলা ভাষার প্রতি এমন হীনম্মন্যতার চালচিত্র এখন নিত্যদিনের। শুধু বিয়ের আমন্ত্রণপত্র নয়, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে অকারণেই বাংলার বদলে ব্যবহƒত হচ্ছে ইংরেজি। ভাষা শহীদদের রক্তঋণে পাওয়া মাতৃভাষা অবজ্ঞার শিকার রকমারি তরিকায়।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামগুলো নর্থ-সাউথ থেকে দৌড় দিচ্ছে ইস্ট-ওয়েস্টে। ইংরেজি প্রীতিতে ভরপুর বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকের নাম হচ্ছে প্রাইম থেকে প্রিমিয়ার। দোকানের সাইন বোর্ডগুলোয় বড্ড কোণঠাসা আ-মরি বাংলা ভাষা। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা ও অমান্য করে অধিকাংশ দোকান থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে যুক্ত এখন ইংরেজি বর্ণমালা।

অকারণে বিপণিবিতান থেকে রেস্তোরঁা সবখানেই উঁকি মারে ইংরেজি নাম। শেকড়বর্জিত অতি আধুনিক তরুণ-তরুণীর মুখে অবলীলায় উচ্চারিত হয় বাংলা-ইংরেজির মিশ্রিত বিকৃত বাংলিশ। রেডিও জকির কথায় জড়িয়ে থাকে বাংলা ভাষার বিকৃতির ছেঁায়া। ভাষায় মর্যাদা রক্ষায় নানা নির্দেশনা দিলেও খোদ উচ্চ আদালতের রায়গুলো এখনো লেখা হয় ইংরেজিতে।

এভাবেই লাঞ্ছনা আর অপমানে গুমরে মরছে ভাষা শহীদদের রক্তঋণে অর্জিত বাংলা বর্ণমালা। ফেব্রুয়ারি এলেই যেন কিছুটা কদর বাড়ে বাংলা ভাষার। ভাষার মাসটি পেরুলেই আবার শুরু হয় অবহেলা-অনাদর।

বাংলা ভাষার প্রতি এমন অবজ্ঞা নিয়ে প্রায়শই কথা হয় নানা সভা-সেমিনারে। ভাষা সংগ্রামীসহ স্বদেশকে ভালোবাসা মানুষ সোচ্চার থাকেন মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায়। তবে আপন ভাষার প্রতি বাঙালির দায়বদ্ধতা ও শ্রদ্ধার বিষয়গুলো যেন হয়ে ওঠে শুধুই কথার কথা। বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় নেয়া হয় না যথাযথ পদক্ষেপ। নির্বিকার থাকে ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য গড়ে তোলা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থেকে সংস্থাসমূহ। সরকারের পাশাপাশি বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় নেই কোনো বেসরকারি উদ্যোগ।

বাংলা ভাষার বিকৃতি রোধের পাশাপাশি মর্যাদা রক্ষা এবং মাতৃভাষার প্রতি অবজ্ঞা-অবহেলা বন্ধের নানা যুক্তি ও মতামত মেলে ধরেছেন বিশিষ্টজনরা। ইংরেজিতে রায় লেখাসহ নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলা ভাষার বিষয়ে খোদ উচ্চ আদালতের সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠে এসেছে তাদের কথায়।

এ বিষয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে এক ভাষা সংগ্রামী বলেন, ‘আমাদের জাতির দুর্ভাগ্য যে পদে পদে লাঞ্ছিত হচ্ছে বাংলা ভাষা। মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য যেসব ছাত্র-জনতা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিল, বাংলা ভাষাকে নানাভাবে অবজ্ঞা করে আজ তাদের অপমান করা হচ্ছে। ভাষা আন্দোলনের ৬৯ বছর পরও বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে আমাদের।

ভাষা আন্দোলনের গবেষক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক গোলাম কুদ্দুছ বলেন, আমাদের সংবিধানের তৃতীয় অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে লেখা আছেÑএই প্রজাতন্ত্রে রাষ্ট্রভাষা বাংলা। অথচ সংবিধান লঙ্ঘন করে ইংরেজিতে লেখা হচ্ছে উচ্চ আদালতের রায়। যেখানে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে, সাইনবোর্ড লেখাসহ সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহার করতে হবে, সেখানে খোদ আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ইংরেজিতে। সরকারি-বেসরকারি অফিসে অকারণেই ইংরেজির ব্যবহার হচ্ছে। লোক দেখানোর জন্য অহেতুকভাবে বিয়ের আমন্ত্রণপত্র লেখা হচ্ছে ইংরেজিতে। এমনকি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রেও অযথা ইংরেজি ব্যবহার হচ্ছে। সেমিনার থেকে শুরু করে চিঠিপত্রে কারণ ছাড়াই ইংরেজির বাহুল্য দেখা যাচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে নিজস্ব ভাষার ব্যবহার হয়। অথচ আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ইংরেজি ছাড়া উপায় নেই। এক্ষেত্রে আমাদের যথার্থ অনুবাদের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অফিস-আদালতে শুধু বৈদেশিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইংরেজির ব্যবহার আবশ্যিক হলেও সেটা মানছে না কেউ। সবাই যেন ভুগছে ইংরেজি প্রীতিতে।’

Loading


শিরোনাম বিএনএ