বিএনএ ডেস্ক : গত ৫ আগষ্ট ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বর্তমানে তিনি দিল্লীতে রয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায়। পালিয়ে যাওয়ার তিন মাসের মাথায় জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।এটাই তার প্রথম বিবৃতি।
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে দেওয়া শেখ হাসিনার এই বিবৃতিকে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজ ‘ভণ্ডামি’ বলে মন্তব্য করেছেন। যা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ৩ নভেম্বর বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম আলোকবর্তিকা তাজ উদ্দিনের সন্তান তানজিম আহমদ সোহেল তাজ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে বলেন, ‘এত বছর পর মুখ ফুটলো- আশ্চর্য হলাম- ভণ্ডামি কী আর কয় প্রকারের তা উনার চেয়ে ভাল আর কেউ শিখাতে পারবে না।’
প্রসঙ্গত, ৩রা নভেম্বর ‘জেলহত্যা দিবস’ উপলক্ষে দেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিবৃতিটি গতকাল শনিবার ফেসবুকে আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড পেজে প্রকাশ করা হয়।
এতে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশে মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই। শোক পালনের অধিকার নেই। পঁচাত্তরের পরও কুচক্রী মহল একই পরিবেশ তৈরি করেছিল। আজ প্রশ্ন জাগে: মুক্তিযোদ্ধারা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলেন?’
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘৩ রা নভেম্বর আমাদের জাতীয় জীবনে এক শোকাবহ দিন। পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দ্বিতীয় কলঙ্কজনক অধ্যায় ৩ নভেম্বর। আগস্ট হত্যাকাণ্ডের মাত্র তিন মাসের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে তার ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানকে এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। কারাগারের অভ্যন্তরে এ ধরনের বর্বর হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। আমি জাতির পক্ষ থেকে জাতীয় চার নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ড ছিল শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতা। এ ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি ও দেশবিরোধী চক্র বাংলার মাটি থেকে প্রগতিশীল রাজনীতি ও আওয়ামী লীগের নাম চিরতরে মুছে ফেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস এবং বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল। ১৯৭৫-এর সেই ষড়যন্ত্রকারী ও হত্যাকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদদাতারা বিভিন্ন সময়ে দেশের ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে।’
আত্মস্বীকৃত খুনিদের রক্ষা করতে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করেও রক্ষা করতে পারেনি মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘হত্যাকারীদের বিচারের বদলে দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছে এবং রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছে। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি বরাবরই দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে দেশের গণতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত করতে এবং স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করতে বারবার হামলা করেছে। কিন্তু দিনশেষে ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়নি এবং ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির যে কোনো ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের ধারা সমুন্নত রাখবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। জাতীয় চার নেতার জীবন ও কর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর এটাই উৎকৃষ্ট পন্থা।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘ইতিহাসের নির্মম বাস্তবতা হলো, সময়ের পরিক্রমায় একদিন সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের চেতনা চির জাগরুক থাকবে এবং জাতীয় চার নেতার অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। শহীদ জাতীয় চার নেতার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।’
এদিকে চার নেতাকে হত্যার দিন ৩রা নভেম্বরকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালনের দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে স্মারকলিপি দিয়েছেন জাতীয় নেতা তাজউদ্দিন আহমেদের ছেলে তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের বাস্তবতায় জেল হত্যা দিবসে রোববার কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের কর্মসূচি না থাকার মধ্যে রোববার বিকালে তিনি এই স্মারকলিপি নিয়ে যেতে চান রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায়।
রাজধানীর হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল সংলগ্ন সাকুরা রেস্টুরেন্টের সামনে শতাধিক পুলিশ সোহেল তাজ ও তার সঙ্গে থাকা ৫০/৬০ জনের দলটিকে বাধা দেয়। সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তাজউদ্দিন পুত্র। পরে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের প্রতিনিধি এসে সোহেল তাজ থেকে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করা সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচএম কামারুজ্জামান ও অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মধ্য রাতে একদল সেনা সদস্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চার নেতাকে গুলি করে হত্যা করে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এই দিনটিকে ‘জেলহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছিলো । তবে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুতির পর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক তৎপরতা নেই। ফলে এবার এই দিনটিতে কোনো কর্মসূচিও রাখা হয়নি।
সৈয়দ সাকিব/ হাসনা