বিএনএ বিশ্ব ডেস্ক: বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ, তিন শতাধিক সরকারি কর্মকর্তাসহ শতাধিক ধনকুবেরের গোপন সম্পদ ও লেনদেন ফাঁস করেছে ‘প্যানডোরা পেপারস’। সেই তালিকায় আছেন, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীরা। তাদের মধ্যে অনেকে এখনও পদে বহাল, কেউ সাবেক।
তিনশ কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন ৯০টির বেশি দেশের মন্ত্রী, বিচারক, মেয়র, সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা। আর শতাধিক ধনকুবেরের যে তথ্য এসেছে, তাদের মধ্যে রয়েছে ব্যবসায়ী নেতা, বিনোদন জগতের তারকা। গোপন সব নথি ফাঁসের বিষয়টি প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি।
এই নথি প্রকাশের মাধ্যমে করস্বর্গ হিসেবে পরিচিত পানামা, দুবাই, মোনাকো, সুইজারল্যান্ড ও ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া দ্বীপপুঞ্জের মতো কয়েকটি দেশের অফশোর কোম্পানিগুলোতে গোপনে কারা বিনিয়োগ করেছেন সেই তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বনেতাদের পাশাপাশি অন্তত ৩শ সরকারি কর্মকর্তা সম্পদ আত্মসাত ও অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত। গোপন সম্পদ ও লেনদেনের এই তালিকায় রয়েছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ, চেক প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেই বাবিস, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তা, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারসহ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ঘনিষ্টজনরা।
প্যানোরামার প্রকাশ করা দলিলে দেখা যায়, জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রে ৭ কোটি পাউণ্ডের বাড়ি-জমির মালিক হয়েছেন। মোনাকোয় গোপন সম্পদের সঙ্গে সম্পর্কিত রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
আজারবাইজানি প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ ও তার সহযোগীরা যুক্তরাজ্যে প্রায় ৪০ কোটি পাউন্ডের জমি-বাড়ি কেনাবেচার চুক্তিতে জড়িত ছিলেন বলে এসব দলিলে দেখা গেছে।
ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও তার স্ত্রীর ব্যাপারে জানা গেছে যে তারা লন্ডনে একটি অফিস কেনার সময় ৩১২,০০০ পাউণ্ড কর স্ট্যাম্প শুল্ক বাঁচিয়েছেন। ওই ভবনের মালিক একটি বিদেশি কোম্পানিও কিনে নিয়েছেন তারা।
চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী কীভাবে ফ্রান্সের দক্ষিণে এক কোটি ২০ লাখ পাউন্ডের দুটো ভিলা কেনার ক্ষেত্রে অফশোর কোম্পানিকে কাজে লাগানোর বিষয়টি চেপে গেছেন, তাও প্রকাশ পেয়েছে ফাঁস হওয়া নথিতে।
আজারবাইজানের ক্ষমতাসীন অলিয়েভ পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অর্থ লুকাতে এ পরিবার একটি বিশাল অফশোর নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা যুক্তরাজ্যে ৪০ কোটি পাউন্ডের সম্পত্তি কেনাবেচায় জড়িত বলে প্যানডোরার নথিতে উঠে এসেছে।
নথিতে কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তা ও তার পরিবারের ছয় সদস্যের অফশোর কোম্পানি থাকার তথ্য মিলেছে। গোপন সম্পদ এবং লেনদেনের তালিকায় রয়েছেন সাইপ্রাস এবং ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্টও।
বিবিসি জানিয়েছে, গত সাত বছরে প্যারাডাইস পেপার্স, পানামা পেপার্স ইত্যাদি নামে যেসব গোপন দলিলপত্র ফাঁস হয়েছে, – এই প্যানডোরা পেপার্স হচ্ছে তার সবশেষ ঘটনা। তবে ২০১৬ সালে যখন পানামা পেপারস ঝড় তুলেছিল, তখন এটাও বলা হয়েছিল, এটা ‘গল্পের অর্ধেকটা’ মাত্র। সেই অর্ধেক গল্পের ধারাবাহিকতায় রোববার (৪ঠা অক্টোবর) খুললো প্যান্ডোরা পেপারস, যার নেপথ্যে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস’ (আইসিআইজে)।
১০ লাখ ইমেইল, ৩০ লাখ ছবি ও ৬৪ লাখ নথি পর্যবেক্ষণ করে এই তালিকা তৈরি করেছেন সাংবাদিকরা। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ১৪ টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকেও গোপন নথি সংগ্রহ করে, ১১৭ দেশের ৬শর বেশি সংবাদকর্মী। তাদের পরিশ্রমের ফলে ফাঁস হয়েছে ‘প্যানডোরা পেপারস’।
বিএনএনিউজ/আরকেসি