বিএনএ, পাবনা: যোগাযোগের প্রয়োজনেই স্থাপন হচ্ছে নতুন বিমানবন্দর, কারণ উন্নয়নের পূর্বশর্ত আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা। এক্ষেত্রে অগ্রগামী বিমান যোগাযোগ। কিন্তু পাবনার ঈশ্বরদীদে বিমান বন্দর থেকেও নেই! প্রতিশ্রুতির পর প্রতিশ্রুতি থাকলেও আজও রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের অভাবে এখনও বন্ধ হয়ে আছে বিমানবন্দরটি।
বিভিন্ন মহলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিমানবন্দর সংস্কার ও পুনরায় চালুর পরিকল্পনা করছে বলে গত বছরের ২৮ নভেম্বর জাতীয় সংসদে দেওয়া ভাষণে জানিয়েছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচন এবং ২০২০ সালে পুনঃনির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে বিমানবন্দর চালুর বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও দীর্ঘদিন সরকার এব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
তথ্যমতে, এই বিমানবন্দর ১৯৪০-১৯৪৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে স্থাপিত হয়। ১৯৬০ সালে ৪১২ একর জমির ওপর ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়। তখন প্রায় ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে রানওয়ে তৈরি করে ডাকোটা ডিসি-৩ বিমান চালু করা হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের কিছুদিন পরপরই এটি স্থাপিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই বিমানবন্দরটি হিজলি বেজ এলাকা নামে পরিচিত ছিল। ১৯৪৫ সালের ৮-২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিমানবাহিনীর ২০তম বোমারুবাহিনী এই বিমানবন্দরটি ব্যবহার করেছিল। ১৯৬৫ সালে ঈশ্বরদী বিমানবন্দরে প্রথম বাংলাদেশ বিমান ওঠানামা শুরু করে। সেই সময় প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে দুটি করে ফ্লাইট চলত।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এ বিমানবন্দরটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মেরামত করে ১৯৭২ সালে আবার বিমান চলাচল শুরু হয়। পরে লোকসানের অজুহাতে ১৯৮৭ সালে এ রুটে ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়। যাত্রীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৪ সালের ১৭ জুলাই থেকে বিমান চলাচল শুরু হলেও ১৯৯৬ সালের ৩ নভেম্বর পুনরায় বিমান চলাচল বন্ধ করা হয়। এরপর যাত্রীদের দাবির মুখে ১৯৯৮ সালের ১০ মে বেসরকারি এয়ারলাইন্স এয়ার পারাবতের ফ্লাইট চালু হয়। মাত্র ৩৮ দিন চলার পর ২৮ জুন এই সার্ভিসও বন্ধ করা হয়। ১৭ বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর আবার ফ্লাইট উদ্বোধন করা হলেও ছয় মাস পর আবার বন্ধ হয় বিমানবন্দরটি। এরপর বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ এই বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে। কিন্তু ছয় মাস ১১ দিন চালু থাকার পর ২০১৪ সালের ২৯ মে আবার বন্ধ হয়ে যায় বিমানবন্দরটি।
স্থানীয়রা বলছেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্প চলছে পাবনায়। বিদেশি নাগরিকসহ গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের নিয়মিত যাতায়াত করতে হয় সেখানে। এছাড়া স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেক প্রসার ঘটেছে ইতোমধ্যে। ঢাকা-চট্টগ্রাম দ্রুত যাতায়াতের জন্য বিমানবন্দরের বিমান পরিবহনের চাহিদা তৈরি হয়েছে। এসব কারণে সাত বছর ধরে বন্ধ থাকা ঈশ্বরদী বিমানবন্দরটি অবিলম্বে খুলে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এটি চালু হলে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এয়ারলাইন্স ব্যবসায়ী উভয়ে লাভবান হবে, পাশাপাশি সরকারেরও রাজস্ব আয় হবে বলে মনে করছেন তারা।
পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ নুরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, বিভিন্ন গুরুত্ব বিবেচনা করে ঈশ্বরদী বিমানবন্দর চালু করা জরুরি।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ