বিএনএ ডেস্ক: গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের ইসলামী ছাত্র শিবিরের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করেছেন। তার দাবি, ঢাবিতে ছাত্রলীগে লুকিয়ে ছিলেন ছাত্রশিবির।
রোববার (৩ আগস্ট) রাতে এক ফেসবুক পোস্টে আবদুল কাদের লেখেন, ‘হলে থাকার কারণে ছাত্রশিবিরের যে ছেলেগুলো সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগ করত, তারা মূলত আইডেনটিটি ক্রাইসিস (আত্মপরিয়ের সংকট) থেকে উতরানোর জন্য কিছু ক্ষেত্রে অতি উৎসাহী কর্মকাণ্ডে জড়াত। সেটা নিজেকে ছাত্রলীগ প্রমাণের দায় থেকে। ছাত্রলীগ যে নিপীড়ন-নির্যাতন চালাত, তারা সেগুলার অংশীদার হতো, লীগের কালচারই চর্চা করত।’
আবদুল কাদের আরও লেখেন, ‘৫ তারিখের পরে শিবিরের যে সব ছেলে ছাত্রলীগের ভেতরে থেকে ছাত্রলীগের মতো আচরণ করেছে, তাদেরকে আইনের আওতায় আনার বিষয়ে জনাব সাদিক কায়েমের সঙ্গে আমার আলাপ হয়। ৫ তারিখের পরে হলে হলে ছাত্রলীগের নিপীড়কদের তালিকা হচ্ছিল। একদিন ফোনে এই বিষয়ে কথা বলার পরিপ্রেক্ষিতে সাদিক ভাইকে জিজ্ঞাসা করলাম, একাত্তর হলের হাসান সাঈদী, এফ রহমানের তানভীর হাসান শান্তর মতো শিবিরের যারা লীগের আমলে অপকর্ম করেছে, তাদেরকে মামলা দিবেন না? প্রতি–উত্তরে উনি বললেন, “তোমরা দাও।” আমি বললাম, আমরা আর তোমরা দেওয়ার কী আছে! লিস্ট তো আমরা–আপনারা মিলেই করতেছি। এ বিষয়ে সাদিক ভাইয়ের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হয়; কিন্তু শেষে আর হাসান সাঈদী কিংবা শান্তদের নাম মামলার তালিকায় উঠল না!
আবদুল কাদের যাদের বিষয়ে বললেন তাদের একজন হলেন মাজেদুর রহমান। ২০২৩ সালের ২২ জানুয়ারি রাতে বিজয় একাত্তর হলের ২০১৯-২০ সেশনের শাহরিয়াদ নামের এক শিক্ষার্থীকে রাতভর মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। নেতৃত্বে ছিলেন মাজেদুর রহমান । আমার পাশের এলাকায় থাকতেন তিনি। একই মাদ্রাসায় পড়ার সুবাদে জানতাম, তিনি ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ক্যাম্পাসে এসে বনে গেলেন ভয়ংকর নিপীড়ক, নির্যাতক।
আবদুল কাদের উল্লেখ করেন, শিবিরের স্ট্র্যাটেজির (কৌশল) জায়গা থেকে তারা ছাত্রলীগের বড় পদ নিতেন , ‘হল ক্যান্ডিডেট, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্ডিডেট হওয়ার কারণে তাকে ছাত্রলীগ যে স্টাইলে কার্যক্রম পরিচালনা করে, ঠিক সেই স্টাইল ফলো করা লাগত। শিক্ষার্থীদের গণরুম, গেস্টরুম, জোরপূর্বক মিছিল–মিটিংয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার কাজটা একিনের সঙ্গে করতেন তারা। উদ্দেশ্য একটাই, পদ পাইতেই হবে।
পোষ্টে লিখা হয়, ‘ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটির দপ্তর সম্পাদক ২০১৭-১৮ সেশনের মুসাদ্দিক বিল্লাহও আমার জেলার, যাঁর পরিবার জামাত, যিনি শিবিরের সাথি ছিলেন; কিন্তু পদ–পদবির জন্য তিনি হয়ে গেলেন কট্টর ছাত্রলীগ।
আবদুল কাদের আরও লিখেছেন, জসীমউদ্দীন হলের ২০১৬-১৭ সেশনের আফজালুন নাঈমের গেস্টরুমে দুর্ব্যবহার, নিপীড়নের জ্বালায় হলের ছেলেরা অতিষ্ঠ ছিলেন। অথচ এই নাঈম এখন জামাত–শিবিরের আইকন শিশির মনিরের বিশেষ সহকারী!
এছাড়াও, মুজিব হলের জুনিয়রদের কাছে এক ত্রাসের নাম ছিল ২০১৬-১৭ সেশনের ইলিয়াস হোসাইন। হল ক্যান্ডিডেট ছিলেন তিনি। মিছিল–মিটিংয়ে যাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদেরকে সর্বোচ্চ ফোর্স করতেন, গেস্টরুমে অসহ্য মেন্টাল টর্চার করতেন, ছাত্রলীগের পদও পেয়েছিলেন। ৫ আগস্ট–পরবর্তী সময়ে এই ইলিয়াস শিবিরের বড় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হলেন।
২০১৭ সালে হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে ইসলামিক পেজে লাইক দেওয়ায় শিবির সন্দেহে রাতভর ভয়াবহ নির্যাতনের মাধ্যমে রক্তাক্ত করে হলছাড়া করা হয় পাঁচ শিক্ষার্থীকে । এ ঘটনায় ১৩ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা হয়েছে। মুহসীন হলের সাবেক ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক মো. শাহাদাত হোসেন ভুক্তভোগীর মোবাইল চেক করেন এবং সঙ্গে সঙ্গেই অতর্কিত হামলা চালান। এই শাহাদাত শিবির হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত।
আবদুল কাদের লিখেছেন, স্যার এ এফ রহমান হলের ২০১৮-১৯ সেশনের রায়হান উদ্দিন। যিনি ছাত্রলীগের অ্যাকটিভ (সক্রিয়) কর্মী ছিলেন। এফ রহমান হলের কুখ্যাত ছাত্রলীগ সভাপতি রিয়াজের ঘনিষ্ঠ এই রায়হান ৫ তারিখের পরে শিবিরের বড় নেতা হিসেবে আত্নপ্রকাশ করেছেন।
আবদুল কাদের অভিযোগ করে লিখেছেন, ৫ আগস্টের পরে হলে হলে ব্যাচ প্রতিনিধি হয়, শৃঙ্খলা কমিটি হয় শিবিরের ‘প্রেসক্রিপশনে’, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে অনলাইনে ভোটাভুটি করে অধিকাংশ ব্যাচ প্রতিনিধি শিবির নিজেদের লোকজনকে নির্বাচিত করে। এই ব্যাচ প্রতিনিধিরাই পরবর্তী সময়ে সর্বেসর্বা হয়ে ওঠে, একপ্রকার ছায়া প্রশাসন হিসেবে হলে ফাংশন করে। এই ব্যাচ প্রতিনিধিরাই আবার ৫ তারিখের পরে ছাত্রলীগের নামের তালিকা তৈরির দায়িত্ব নেয়। স্বাভাবিকভাবেই তারা নিজেদের সাথি ভাইদেরকে তালিকার বাইরে রাখে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠা আবদুল কাদেরের অভিযোগ, এই তদবির–কাণ্ডের কারণে জুলাইয়ের অঙ্গীকার রক্ষা করা যায়নি। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘সবাই সবার দলীয় মানুষজনকে বাঁচিয়ে দিতে গিয়ে জুলাইয়ের সন্ত্রাসীদেরকে মুক্তি দিয়ে দিছে। শিবির অস্বীকার করতেছে, তাদের কোনো নেতা–কর্মী গুপ্তভাবে লীগের ভেতরে ঢুকে লীগের কালচার চর্চা করেনি। শিবির তাদের বিগত এক যুগের হল কমিটি এবং ঢাবি শাখার কমিটি প্রকাশ করলেই মানুষজন ক্লিয়ার হতে পারে, শিবির ছিল কি ছিল না। ৫ তারিখের পর তাদের ভয় কিসের? নাকি তাদের কৃতকর্ম প্রকাশিত হয়ে যাবে, সেই ভয়ে প্রকাশ করতেছে না! হলে হলে এখন শিবিরের হয়ে মাদবরি করা মানুষের পূর্বের চেহারা প্রকাশ হয়ে যাবে!’
বিএনএ/শাম্মী/এইচ.এম।