বিএনএ, সাভার প্রতিনিধি: ঢাকার ধামরাই উপজেলার আমতা ইউনিয়নের বাউখন্ড গ্রামের কালুগাজীর দীঘিতে মাছ খাওয়ার অপরাধে জালের ফাঁদ পেতে নির্বিচারে মারা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখী। অভিযোগের তীর ওই দীঘির মৎস্য চাষীদের বিরুদ্ধে। এতে জীব বৈচিত্র হুমকীর মুখে পড়লেও কোন পদক্ষেপ নেয়নি উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর।
প্রতিদিনই ওই দীঘির জালের ফাঁদে আটকা পড়ছে শত শত বিভিন্ন প্রজাতির পাখী। পাখী গুলোর মধ্যে রয়েছে, পানি কাউর, বালিহাঁস, বক, পানকৌড়ি, হরিতাল, ঘুঘু, কবুতর, শাইলী শালিক, কাকাতোয়াস ও ডাহুক পাখী। জীবিত পাখী স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে আর মৃত পাখীগুলো আশপাশে রাস্তার ধারে ফেলে দেয়া হচ্ছে। ফলে ওইসব পাখী পঁচে দুর্গন্ধে পরিবেশের মারাত্মক দুষণ ঘটছে। বিভিন্ন ধরণের রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ার আশংকা করছেন স্থানীয়রা।
৩৬০এর দশকে শাহ সেকান্দার বাদশাহর পালক ও ঔরশজাত দুই ছেলে জিন্দাপীর কালু এবং গাজী নামে দুই ভাই মিলে বাদশাহী ছেড়ে আল্লাহর ফকির হয়ে ধর্ম প্রচারে বের হন। ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার আমতা ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষ্যিত বাউখন্ড এলাকায় এসে তারা আস্তানা গেড়ে বসেন। এরপর শুরু করেন ধর্ম প্রচার। এলাকাবাসীর জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে তিনি তার অলৌকিক সাধানা বলে জ্বিন ও পরী দ্বারা রাতারাতি এ দীঘি খনন করেন বলে জানান স্থানীয় লোকজন।
মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, এ দীঘিটির বর্তমান মালিকানা নিয়েও রয়েছে যথেষ্ট মতবিরোধ। কালের বিবর্তনে আমতার ইউনিয়নের প্রয়াত সাবেক চেয়ারম্যান ও নান্দেশ্বরী গ্রামের বাসিন্দা শিল্পপতি মোঃ মতিয়ার রহমানের ছেলে বর্তমান চেয়ারম্যান চিত্র নায়ক মোঃ আবুল হোসেন এ দীঘিটির মালিকানা অর্জন করেন। তবে এ নিয়ে নানা বিতর্কও রয়েছে তাদের মালিকানা অর্জন নিয়ে।
২০২০-২০২১অর্থবছরে মাছ চাষের জন্য আবুল হোসেন চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ৩২লাখ টাকার বিনিময়ে দীঘিটির ইজারা নেন বাউখন্ড গ্রামের নিতাই জন্দ্র হালদার, বিজয় চন্দ্র হালদার, পরিমল হালদার, লালচান চন্দ্র হালদার ও ভজন চন্দ্র হালদার নামে ৫জন মৎস্য চাষী। এরা দীঘিটি ইজারা নেয়ার পর সম্প্রতি ওই দীঘির ওপরে ও চারপাশে জাল দিয়ে ফাঁদ পেতে নির্বিচারে বিভিন্ন প্রজাতির পাখী মেরে ফেলছেন। জীব বৈচিত্র রক্ষায় এলাকাবাসী তাদের এব্যাপারে বাঁধা বিপত্তি করলেও ওই মৎস্য চাষীরা এতে কোন কর্ণপাত করছেন না। এমনকি উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরে বিষয়টি অবহিত করার পরও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। মৎস্য চাষীরা জানান, প্রতিদিন আমাদের চাষকৃত মাছ খেয়ে ফেলছে বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার পাখী। এতে আমরা কক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তাই বাধ্য হয়ে জাল দিয়ে ফাঁদ পেতে মাছ রক্ষা করছি পাখীদের কবল থেকে। পাখী মারার উদ্দেশ্যে আমরা এ জালের ফাঁদ পাতিনি। আমাদের ক্ষয়ক্ষতির কথা ভেবেই আমরা এ পথ অবলম্বণ করেছি। এব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আবুল হোসেন বলেন, দীঘিটি ইজারা দেয়া হয়েছে মাছ চাষের জন্য। ইজারাদাররা কি করছে না করছে এবিষয়ে আমার কোন কিছুই জানা নেই। এখন বিষয়টি জানলাম, খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব। উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মোঃ সাইদুর রহমান বলেন, লোকবলের অভাবে ঘটনাস্থলে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে ঘটনাটি অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। খুবশীঘ্রই এব্যাপরে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রাণী সম্পদ কিংবা জীব বৈচিত্র রক্ষায় সমাজের বিবেকবান ও সচেতন প্রত্যেক মানুষেরই নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।
বিএনএনিউজ২৪, ইমরান খান,জিএন