বিএনএ,জাবি : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) চিকিৎসা কেন্দ্রে কর্তব্যরত এক নার্সকে যৌন হয়রানিতে অভিযুক্ত প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মামুনুর রশীদ মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছে বলে দাবি করেছে তার পরিবার ও সহপাঠীরা।
শনিবার (৪ জুন) সকাল নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে ডিউটিরত এক নার্সকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ উঠে এ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী নার্স জানান, ‘আজকে সকাল নয়টার দিকে একজন শিক্ষার্থী (মামুনুর রশীদ) র্যাবিস ভ্যাক্সিন নিতে আসেন। ভ্যাক্সিন দেওয়া শেষ হলে সে আমার শরীরের স্পর্শ কাতর জায়গায় হাত দেয়। প্রথমে আমি ভেবেছি অসচেতনাবশত এটা হয়েছে। কিন্তু ভ্যাকসিন দেওয়া শেষে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আবার আমার কক্ষে এসে আমার শরীরে হাত দেয়। তখন আমি চিৎকার করে পাশের ডাক্তার ও আমার সহকর্মীদের ডাকি৷ উনারা এসে তাৎক্ষণিক উক্ত শিক্ষার্থীকে হেফাজতে নেন।’
তবে অভিযুক্ত মামুন দীর্ঘদিন যাবৎ মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছে বলে দাবি করেছেন তার পরিচিত জনেরা। তার পরিবারের সদস্য ও সহপাঠীদের ধারণা, মানসিক সমস্যার কারণেই মামুন এ ধরণের ‘অপ্রীতিকর’ কাজ করে থাকতে পারেন।
মামুনের অসুস্থতার প্রমাণ স্বরূপ পরিবারের কাছ থেকে মেডিকেল রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এছাড়া ৪ জুন রাত ১২টা ৪ মিনিটে অভিযুক্ত মামুনের রুমমেটের ধারণ করা একটি ভিডিও ফুটেজে অভিযুক্ত মামুনকে অস্বাভাবিক আচরণ করতে দেখা যায়।
অভিযুক্ত মামুনুর রশীদের বাবা বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ)-কে বলেন, ‘আমার ছেলে কয়েক বছর যাবত অসুস্থতায় ভুগছে। তার এ অসুস্থতার কারণে আমরা (পরিবার) তাকে টাঙ্গাইল ও বগুড়ায় একাধিক বার ডাক্তার দেখাই। বেশ কিছুদিন চিকিৎসাধীন থাকায় অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠে। কিন্তু শেষ ছয় মাস তার চিকিৎসা বন্ধ ছিলো। যার কারণে তার অসুস্থতা আবার বেড়ে যায়। পরীক্ষা শেষ হলেই তাকে ডাক্তার দেখাবো বলে ঠিক করি।’
অভিযুক্তের রুমমেট বলেন, ‘সে সারাদিন চুপচাপ থাকে। কোন কথা বলেনা। কোন দরকার হলে বাইরে যায় আবার চলে আসে। তার আচার আচরণে অস্বাভাবিকতা ছিলো। তার এ মানসিক সমস্যার ব্যাপারে হলের সবাই জানতো।’
মামুনের সহপাঠীরা জানান, ‘মামুনের অসুস্থতার বিষয়টা আমরা সকলেই অবগত। তার মানসিক অসুস্থতার পাশাপাশি বেশকিছু শারীরিক অসুস্থতাও রয়েছে। সে দীর্ঘদিন যাবত চিকিৎসার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।’
শনিবারের এ অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য মামুনের অসুস্থতাই দায়ী বলে মনে করছেন তার সহপাঠীরা।
এ ব্যাপারে প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মাহবুবুল মোর্শেদ বলেন, ‘ছেলেটি বেশ শান্তশিষ্ট বলেই জানি। তবে আমরা যতদূর জানি সে মানসিকভাবে অসুস্থ। আমরা তার পরিবারকে বিষয়টি জানিয়েছি, পরিবারের লোকজন ক্যাম্পাসে আসছেন। আমরা পরিবারের সাথে কথা বলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো।’
তবে যৌন হয়রানির এ অভিযোগের ঘটনায় অভিযুক্ত মামুনের শাস্তি দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা। এ ঘটনার পর তারা চিকিৎসা কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়। অভিযুক্তকে স্থায়ী বহিষ্কার না করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন ও লাইব্রেরি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
কর্মচারী সতিমির সভাপতি আব্দুর রহিম অভিযুক্ত মামুনের মানসিক সমস্যার বিষয়টা মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো কর্মচারী ভুল করে তখন তাকে সাথে সাথে শাস্তির আওতায় আনা হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে নানান গল্প সাজানো হয়।’
যদি প্রশাসন তাকে শাস্তি দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে তারা পরবর্তী কর্মসূচী গ্রহণ করবে বলে হুশিয়ারি দেয়।
বিএনএ/ সানভীর ইসলাম, ওজি