বিএনএ,চট্টগ্রাম: নামের মিলের কারণে চট্টগ্রাম কারাগারে সাজাভোগকারী হাসিনা বেগম কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। দীর্ঘ ১ বছর ৪ মাস ২০ দিন পর তিনি মুক্তি পেলেন।
মঙ্গলবার (৪ মে) বিকাল পৌনে ৫টায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান। বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাসিনা বেগমের আইনজীবী এডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদ।
এর আগে দুপুরে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিচারক শরীফুল আলম ভূঁঞার ভার্চুয়াল আদালত হাছিনা বেগমকে মুক্তির আদেশ দেন। এদিন সকালে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ছবিযুক্ত বালামে প্রকৃত হাসিনা আক্তার ও হাসিনা বেগম একই আসামি নন বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ।
গোলাম মাওলা মুরাদ বলেন, নামের আংশিক মিলে দীর্ঘ প্রায় এক বছর পাঁচ মাস হাসিনা আক্তারের সাজা ভোগ করেছেন হাসিনা বেগম। কারাগারে হাসিনা বেগম বর্তমানে বেশ অসুস্থ। তিনি জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বিষয়টি আমি নজরে আনার পর আদালত টেকনাফ থানা ও কারা কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে তাকে মুক্তির আদেশ দিয়েছেন। মুক্তির আদেশ দেওয়ার পর বিকেলে কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান। যাদের ভুলে তিনি এই অন্যায় সাজা ভোগ করেছেন আমি তাদের শাস্তির জন্যও আদালতে আবেদন করবো।
কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর হাসিনা বেগম বলেন, টেকনাফ থানায় যখন আমাকে নিয়ে আসা হয় তখনই আমি বারবার করে বলেছি আমি অপরাধী নই। কিন্তু উনারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলেছেন। আমার কোনো কথায় উনার বিশ্বাস করেননি।
তিনি আরও বলেন, বিনা অপরাধে ১৭ মাস জেল খেটেছি। আমার সংসার ধ্বংস হয়ে গেছে। আমার ছোট ছোট বাচ্চারা পথের বসেছে। আমাকে জেল থেকে মুক্ত করতে আমার বাড়িটাও বিক্রি করতে হয়েছে।
জানা যায়, মূল আসামি নাম হাসিনা আক্তার (২৬)। তার বাড়ি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানার টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরী পাড়ায়। ওই এলাকার ইসমাইল হাজি বাড়ির হামিদ হোসেনের স্ত্রী তিনি। অন্যদিকে নামের ‘আংশিক মিলে’ফেঁসে যাওয়া হাসিনা বেগমের (৪০) বাড়িও একই এলাকার হোসেন বর বাড়ি। তিনি হামিদ হোসেনের স্ত্রী। তবে অপরাধীর নামের সঙ্গে মিল থাকলেও বাবা-মায়ের নামের সঙ্গে অমিল রয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি কর্ণফুলী থানার মইজ্জারটেকে ২ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধারের পর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা ২৮(২)১৭, জি.আর মামলা নম্বর ৫৭/১৭ ও পরবর্তীতে দায়রা মামলা ৩৬৩৭/১২ দায়ের হয়। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হাসিনা আক্তার ২০১৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে কারাগারে যান। হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে একই বছর ২৭ নভেম্বর জামিনে গিয়ে পলাতক হন। ২০১৯ সালের ১ জুলাই পলাতক থাকা আসামিদের অনুপস্থিতিতে চট্টগ্রাম অতিরিক্ত মহানগর ৫ম আদালতের বিচারক জান্নাতুল ফেরদাউস চৌধুরী রায়ে ৬ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
পরবর্তীতে টেকনাফ থানা পুলিশ ২০১৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর টেকনাফের চৌধুরী পাড়ার হোসন বর বাড়ি থেকে নামের সাথে সাজাপ্রাপ্ত আসামির নামের একাংশের মিল থাকায় হাসিনা বেগমকে গ্রেপ্তার করে। এই মামলায় এরপর থেকে জেল খাটছেন হাসিনা। বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হলে আদালত টেকনাফ থানাতে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন। আদালতের চাহিত সেই অনুসন্ধান প্রতিবেদন ২ মে আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
আদালতে হাসিনা বেগমের প্রতিবেদন দেয়া টেকনাফ মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মো. খোরশেদ আলম জানান, বর্তমানে সাজা পরোয়ানা মূলে কারাগারে থাকা হাসিনা বেগম পূর্বে গ্রেপ্তার হওয়া হাসিনা আক্তার এক নয় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু বর্তমান কারাগারে থাকা হাসিনা বেগমের স্বামী পালাতক থাকায় পূর্ণাঙ্গভাবে তদন্ত করা যায়নি।
হাসিনা বেগমের ছেলে শামীম নেওয়াজ (১৪) বলেন, আমার মাকে থানায় একটি সাইন দিতে হবে বলে পুলিশ ঘর থেকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে আমার মাকে ইয়াবার মামলায় জেলে দেয়া হয়। আমার মায়ের নামে কখনো কোনো মামলা বা জিডি ছিলো না, কখনো কক্সবাজার শহরেও যায়নি। সে সময় আমার বোন রোকেয়ার বয়স ছিল দেড় বছর। আমার মা জেলে যাওয়ার পর আমার বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। এখন কোথায় আছে জানি না।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা যায়, প্রকৃত আসামি হাসিনা আক্তার মামলার সাজা হওয়ার আগে ২০১৭ থেকে প্রায় ৯ মাস কারাগারে ছিলেন। সাজা হওয়ার পর ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে হাসিনা বেগম কারাগারে আসেন। কারা রেজিস্ট্রারে থাকা দুজনের ছবির মিল নেই। মূল আসামি হাসিনা আক্তারের ছোট একটা ছেলে ও একটা মেয়ে ছিল কারাগারে থাকার সময়।
এ বিষয়ে এডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করার আগে অবশ্যই নাম ঠিকানাসহ শতভাগ নিশ্চিত হয়ে গ্রেপ্তার করবেন। যা আইনে এবং পুলিশ প্রবিধানেও সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। নিরীহ হাসিনা বেগমের গ্রেপ্তার হওয়া ওয়ারেন্ট তামিলকারী পুলিশের দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতি। এ ব্যাপারে পুলিশ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন। এছাড়া আদালতও এ ব্যাপারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার নির্দেশ দিতে পারেন।
বিএনএনিউজ/মনির