বিএনএ,চট্টগ্রাম : যুদ্ধক্ষেত্রে (ইউক্রেন) জাহাজ পাঠানোর সিদ্ধান্ত ভুল ছিল বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশ। শুক্রবার (৩ মার্চ) সকালে চট্টগ্রামের বারিকবিল্ডিং পোর্টল্যান্ড সাত্তার টাওয়ারে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ অভিযোগ করেন ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত হোসেন।
এ ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের তদন্ত দাবি করেছে তারা। সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নাবিকদের জীবনের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে ফেলে কেন যুদ্ধক্ষেত্রে জাহাজ পাঠানো হলো, এ বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত করতে হবে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে সামনে এমন আরও ঘটনার মুখে পড়তে হবে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনকে যুদ্ধকবলিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা দেয় জয়েন্ট ওয়ার কমিটি। জাহাজটি ইউক্রেনের বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছায় গত ২২ ফেব্রুয়ারি। যুদ্ধকবলিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পর সেখানে জাহাজটি পাঠানোর সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ। আবার জাহাজটি আটকে যাওয়ার পর নাবিকদের দ্রুত নিরাপদে সরিয়ে আনার পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। জাহাজ পরিচালনায় বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের সার্বিক অব্যবস্থাপনার কারণেই নাবিকদের এমন দুর্দশার মুখে পড়তে হয়েছে।
জাহাজটি ইউক্রেনে আটকে যাওয়ার পর থেকে নাবিকদের উদ্ধারে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে তৎপরতা চালানোর কথা জানান সংগঠনের সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘নাবিকদের উদ্ধারের জন্য ইউক্রেনে বসবাসরত বাংলাদেশি একটি ব্যবসায়ী দলের সঙ্গে আমাদের সংগঠনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরীর যোগাযোগ হয়।
পরে নৌপরিবহন অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানানো হয়। এরপরই বৃহস্পতিবার জাহাজ থেকে নাবিকদের উদ্ধার করে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের দলটির নির্ধারিত নিরাপদ জায়গায় নেওয়া হয়।’ সংবাদ সম্মেলনে নাবিকদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানানো হয়। নিহত নাবিক মোহাম্মদ হাদিসুর রহমানকে রাষ্ট্রীয় বীর ঘোষণার দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া হামলায় জাহাজটি সম্পূর্ণ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষায় বীরোচিত কাজের জন্য নাবিকদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ও পুরস্কার প্রদানের দাবি জানানো হয়।
এ সময় সংগঠনের সহসভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান ও সহসাধারণ সম্পাদক ইফতেখার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে নয়টার দিকে ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দর জলসীমায় নোঙর করে রাখা এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এতে জাহাজের তৃতীয় প্রকৌশলী মো. হাদিসুর রহমান নিহত হন। ঘটনার পর জাহাজ থেকে ভিডিও বার্তা দিয়ে বাঁচার আকুতি জানান নাবিকেরা। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশি জাহাজটি থেকে ইতিমধ্যে নাবিকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
জাহাজটিতে ২৮ বাংলাদেশি নাবিক ও ১ নাবিকের মরদেহ ছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে (বাংলাদেশ সময়) জাহাজটি থেকে নাবিকদের ইউক্রেনের নিরাপদ একটি স্থানে স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকে ইউক্রেনের পাশের দেশ পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে নেওয়া হবে সবাইকে। বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সরকারি সংস্থা।
এ সংস্থার সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে পৌঁছানোর পর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সেখানে অবস্থান করছিল। সে দিন ভোরেই ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। ইউক্রেনে রুশ হামলা হলে জাহাজটি আটকে যায়। জাহাজটিতে বাংলাদেশের মোট ২৯ নাবিক ছিলেন।
বিএনএনিউজ২৪.কম/এনএএম
Bnanews24 অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন