বিএনএ ডেস্ক: ধাপে ধাপে একগুচ্ছ সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে সময়সূচি নির্ধারণ করে বাংলাদেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানোকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। জ্বালানি খাতে ভর্তুকি ‘যৌক্তিক’ করার সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলোকে স্বাগত জানিয়ে পর্যায়ক্রমে আরও দাম বাড়ানোর তাগিদও দিয়েছে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটি।
ঋণ অনুমোদনের তিন দিনের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার ছাড় করেছে সংস্থাটি, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভে জমা হয়েছে। বহুল প্রতীক্ষিত ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন (৪৭০ কোটি) ডলার এই ঋণের প্রথম কিস্তি ছাড় করার সঙ্গে এই অর্থ কীভাবে ব্যয় করা হবে, কী কী সংস্কার করতে হবে-সেসব বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে আইএমএফ। যা সংস্থাটির ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
আর্থিক খাতসহ সরকারি নীতি নির্ধারণীতে অনেক সংস্কারের কথা জানিয়ে সংস্থাটি বলছে, গ্যাস-বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সাম্প্রতিক পদক্ষেপ বাংলাদেশের জন্য সামনের দিনে সামগ্রিকভাবে ইতিবাচক হবে, যা সামাজিক ও উন্নয়ন ব্যয়ের জন্য আরও অর্থায়নের সুযোগ তৈরি করবে। বাংলাদেশ সরকারের ঋণ আবেদনের পর আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে তৈরি ‘কান্ট্রি রিপোর্টে’ সংস্থাটি আশা করছে, পর্যায়ক্রমে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অন্যান্য সুযোগ খতিয়ে দেখবে।
আইএমএফের ইসিএফ-ইএফএফ এবং আরএসএফ কর্মসূচির আওতায় ঋণ পেতে বাংলাদেশ এসব সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে সম্মতিও দিয়েছে বলে এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন হলে দেশটিকে মধ্যম আয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তাও করবে বলে বলছে সংস্থাটি।
আইএমএফ বলছে, কোভিড পরবর্তী অর্থনীতিতে গতি আসার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পণ্যমূল্য বাড়ার কারণে নেয়া সাশ্রয়ী ও নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ মানুষের জীবনযাত্রা আরও কঠিন করে তুলবে। এটি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করলেও ভর্তুকি যৌক্তিকীকরণের পদক্ষেপ সামাজিক ও উন্নয়ন কাজের জন্য অর্থ ব্যয়ের সুযোগ তৈরি করবে।
দাম বাড়ানোর পর বিশ্ববাজারের সঙ্গে বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম কাছাকাছি এলেও গ্যাস ও বিদ্যুতের ভর্তুকি বেড়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপির শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে বলে এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সবশেষ বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে সংস্থাটি ধাপে ধাপে গ্যাস ও বিদ্যুতের ভর্তুকি কমানোর চেষ্টার পথে হাঁটতে বলেছে। একই সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরও জোরদার করার পরামর্শ দিয়েছে।
বাংলাদেশের আবেদনের পর আনুষ্ঠানিক আলোচনা ও প্রাথমিক সমঝোতার মাধ্যমে একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাব এগিয়ে নিতে সম্মতির পর ওয়াশিংটনভিত্তিত ঋণদাতা সংস্থাটির পর্ষদ গত ৩১ জানুয়ারি ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে। এর তিন দিনের মধ্যে বৃহস্পতিবার ঋণের প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার ছাড়ও করেছে।
৪২ মাসের চুক্তিতে ‘অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচিতে’ সহায়তা হিসেবে আইএমএফের এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) এবং এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএফএফ) থেকে ৩৩০ কোটি ডলার ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ।
এ ছাড়া সংস্থাটির নবগঠিত রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনিবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় বাংলাদেশ পাবে ১৪০ কোটি ডলার। বাংলাদেশই প্রথম এশীয় দেশ, যারা এ তহবিল থেকে ঋণ পাচ্ছে। ২.২ শতাংশ সুদে নেয়া এই ঋণ আসবে সাত কিস্তিতে। শেষ কিস্তি আসবে ২০২৬ সালে।
যুদ্ধের প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে পড়া বাংলাদেশ রিজার্ভ বাড়াতে এই অর্থের প্রত্যাশায় ছিল। আইএমএফ মনে করছে, এ ঋণের সুবাদে দুর্বল হয়ে পড়া রিজার্ভের বিপরীতে বিদেশি মুদ্রার একটি ‘বাফার’তৈরির সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। এ ঋণ প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে তৈরি বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপোর্টে সংস্থাটি বলছে, এ ঋণ কর্মসূচি চলাকালে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে তেলের দাম সমন্বয়ের একটি ফর্মুলা খুঁজে বের করে তা বাস্তবায়ন করা, যা কোনো ধরনের কাঠামোগত ভর্তুকি না দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ