বিএনএ,চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে (চসিক) সদ্য বিদায়ী প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেছেন, সিটি করপোরেশনের সবচেয়ে সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বন্দর। চট্টগ্রামের ভৌগোলিক অবস্থান ব্যবহার করে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস যে উপার্জন করছে তাতে এই শহরের বাসিন্দাদের, সেই সাথে সিটি করপোরেশনের হক আছে। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার তথা ভারি যানবাহন চলাচলের কারণে শহরের রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিছুদিন পর পর যোগাযোগ ব্যবস্থা নষ্ট হয়। আর তা মেরামত করতে হয় সিটি করপোরেশনকে। তাই এ শহরকে গতিশীল করতে চাইলে বন্দরকে ১ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। তাহলে ৭-৮ শ’ কোটি টাকা আয় হবে চসিকের। এভাবে কাস্টম হাউজের রাজস্ব থেকেও ১ শতাংশ দিতে হবে চসিককে। এতে সরকারি সহযোগিতা ছাড়াই চসিক স্বাবলম্বী হবে এবং চট্টগ্রামের যথার্থ উন্নয়ন এগিয়ে নিতে সক্ষম হবে।
বৃ্হস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামের জামালখান সিনিয়র্স ক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
সিটি করপোরেশন পরিচালনায় দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে খোরশেদ আলম সুজন বলেন, সীমাবদ্ধতা, আর্থিক সংকটের মধ্যেও নিজের সর্বোচ্চ, সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করেছি নগরবাসীকে সেবা দিতে। করপোরেশনের কাজে গতিশীলতা আনতে, দুর্নীতি রোধে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত আমাকে নিতে হয়েছে। বদলি করেছি, সাসপেন্ড করেছি সবই করপোরেশনের স্বার্থে। করপোরেশনের ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণের চেষ্টা করেছি।
তিনি বলেন, চসিকের সম্পত্তি পাবলিক প্রপার্টি। দিনের ১২টায়ও অনেকে অফিসে আসে না। আমি সোয়া ৯টায় গেট বন্ধ করে দিয়েছি তিন দিন। চসিকে দক্ষ জনবলের অভাব। নিয়োগের নিয়ম বালাই নেই। দক্ষ জনবল চসিকের বড় সম্পদ। পৌরসভা চসিক হয়েছে। মানসিকতা পৌরসভার। পরিচ্ছন্ন বিভাগে অতিরিক্ত জনবল আছে। সবসময় কাজে নেই, হাজিরা আছে। কিছু ভিক্ষুককে সাবেক মেয়র মনজুর আলম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সময় এ ধরনের চাকরি দিয়েছিলেন। এক মাস পর থেকে তারা ভিক্ষা নিতে শুরু করে।
সুজন বলেন, ১৮ কোটি টাকা বেতন। মার্চ থেকে ১৯ কোটি টাকা হবে। জ্বালানি ও গ্যাসে তিন-সাড়ে তিন কোটি টাকা খরচ। আমার ডাকে পৌরকর বাড়াতে মানুষ সাড়া দিয়েছেন, আমি কৃতজ্ঞ। হোল্ডিং ট্যাক্সের জন্য আপিল বোর্ড বানিয়ে দিয়েছিলাম। আমি বলেছি যা দিতে চায় নিয়ে নেন। হোল্ডিং ট্যাক্স অটোমেশনে আনতে পারলে আরও বেশি আদায় করতে পারতাম। চট্টগ্রামের মানুষ লাইনে দাঁড়াতে চান না। অনেক কর কর্মকর্তাকে বদলি করেছি, অডিট করিয়েছি। অনেক ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স ফি আদায় করে চসিকের বালামে তুলেনি। ব্যবস্থা নিতে কমিটি করে দিয়েছি।
চসিকের শিক্ষাব্যবস্থায় অর্থের অপচয় হচ্ছে জানিয়ে সুজন বলেন, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী আছে ৭০ জন। শিক্ষক আছে ৩৫ জন। সরকারের ষষ্ঠ গ্রেডের একজন শিক্ষকের চেয়েও এখানকার কোনো কোনো শিক্ষকের বেতন বেশি। সরকার যেখানে শিক্ষার জন্য নানা প্রণোদনা দিচ্ছে, ভবন করে দিচ্ছে বেতন বাড়িয়ে দিচ্ছে, এ পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিছু সরকারকে দিয়ে দেওয়া যায়। সেটা যদি হয়, তাহলে খরচটা যেমন সাশ্রয় হবে, তেমনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো গতিশীল হবে।
ছয় মাস যুদ্ধ করেছি। এলাকার অনেকের ভালোবাসা পেয়েছি, অনেকের গালমন্দ শুনেছি। গণমাধ্যমের সহযোগিতা আমার চিরকাল মনে থাকবে।
এসময় নতুন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীকে লিখিত কিছু প্রস্তাব ও পরামর্শ দেবেন বলে জানান সুজন। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের পাশাপাশি বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনএনিউজ/মনির