বিএনএ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে আওয়ামী লীগের জনসভায় আসছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করেছে চট্টগ্রামের সব ধরনের সেবা সংস্থাগুলো। পুরো নগরজুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের প্রস্তুতি নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর আগমনের দিনে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য কাজ করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এদিন চট্টগ্রামে কোনো ধরনের লোডশেডিং হবে না বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ বিতরণ চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী এম রেজাউল করিম বলেন, পলোগ্রাউন্ড মাঠের জনসভা ঘিরে সকল বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ঠিক করা হচ্ছে। যাতে ওদিন নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়া যায়। এছাড়া সেদিন যদি কোনো ধরনের বড় কোনো সমস্যা না হয়, তাহলে ভোর থেকেই প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে থাকা পর্যন্ত কোনো রকম লোডশেডিং হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন আনন্দঘন করতে নগরের রাস্তাঘাট ও স্থাপত্যগুলোকে প্রাণ দিতে ব্যস্ত সময় পার করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দম ফেলার ফুরসত ছিল না তাদের। নগরের ফ্লাইওভারগুলোও বাহারি রঙে সাজিয়েছে। এছাড়া নগরীর আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ফ্লাইওভার থেকে এমএ মান্নান ফ্লাইওভারের মাঝের অংশটির ল্যাম্পপোস্টে ৭০-এর নির্বাচনে বিজয় ও স্বাধীনতার প্রতীক নৌকার আকৃতিতে এলইডি বাতি লাগিয়ে আলোকসজ্জা করেছে চসিক-এর বিদ্যুৎ বিভাগ।
প্রধানমন্ত্রী যাওয়ার সম্ভাব্য সব পথে পাইপ লাইনের লিকেজ আছে কিনা তা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে, থাকলে তা সারাতে তড়িৎ ব্যবস্থা নিচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এছাড়াও জনসভা ঘিরে খাওয়ার, গণশৌচাগারের আর নগরের রাস্তায় ছিঁটানোর জন্য পানির জোগান দিচ্ছে সংস্থাটি।
ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী আগমন ঘিরে বিশেষ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর গমনাগমনের সম্ভাব্য সব রাস্তায় ওয়াসার পাইপ লাইন পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে, যাতে কোথাও কোন লিকেজ না থাকে। এছাড়া জনসভাস্থলে সাধারণ মানুষের জন্য করা হয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা। ৪টি ট্রাকে করে জোগান দেয়া হবে জনসমাগমে আসা নেতাকর্মীদের খাবার পানি। খাবার পানির জন্য আরও ৫০টি পানির ট্যাঙ্ক বসানো হবে বিভিন্ন স্থানে। তাছাড়া পানির জন্য বসানো হচ্ছে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন দুইটি পাম্প, যা দিয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পানি সংগ্রহ করা হবে।
ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, টানা ১০ বছর পর চট্টগ্রামে জননেত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের মাটিতে পা রাখছে। পলোগ্রাউন্ড মাঠে জনসভা ঘিরে ব্যাপক জনসমাগম হবে। সেখানে যাতে পানি নিয়ে কোন বিড়ম্বনায় পড়তে না হয় তাই রেলওয়ের কাছ থেকে পানি সংগ্রহ করে সরবরাহ করা হবে। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রী নতুনভাবে, নতুন রূপে চট্টগ্রামকে আবিস্কার করুক।
এদিকে জনসভাকে কেন্দ্র করে নগরজুড়ে নিশ্ছিদ্র ও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা জানিয়েছে প্রশাসন। সাড়ে ৭ হাজার পুলিশ সদস্য জনসভার নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্টোপালিটন পুলিশের কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়। এর মধ্যে নগরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন, গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি, জনসভা মঞ্চ ঘিরে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়াও পলোগ্রাউন্ডের চারপাশে ও ভেতরে টহল দিচ্ছেন গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ ও বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। জনসভার নিরাপত্তায় পলোগ্রাউন্ড মাঠ ও আশপাশের এলাকায় অন্তত ১০০ সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে বলে জানান সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভা নিয়ে কোনো হুমকি নেই। তবুও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১০০ সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
জনসভার প্রস্তুতি সম্পর্কে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ক্ষমতা গ্রহণের ১০ বছর পর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ও স্থানীয় ইস্যু সম্পর্কে মুক্ত কণ্ঠে কথা বলবেন। প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে ঘিরে পুরো চট্টগ্রাম জুড়ে উৎসব বিরাজ করছে। শুধু শহরে নয়, উপজেলা থেকে শুরু করে গ্রামের মানুষও প্রধানমন্ত্রীকে এক পলক দেখতে ৪ ডিসেম্বর পলোগ্রাউন্ডে চলে আসবেন। তাই এই জনসভাকে সফল করে তোলার জন্য চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মীদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ২৮ মার্চ নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে সর্বশেষ আওয়ামী লীগের জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ১০ বছর পর একই মাঠে আবার ভাষণ দেবেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই এ জনসভা সফল করতে প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা জনসভা ঘিরে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন।
আগামী ৪ ডিসেম্বর সকালে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সেটি শেষ করে ওইদিন পলোগ্রাউন্ডে আওয়ামী লীগের সমাবেশে যোগ দেবেন তিনি। পলোগ্রাউন্ডে জনসভায় যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দর থেকে টাইগারপাস হয়ে জনসভায় আসতে পারেন। এটা বিবেচনা করে বিমানবন্দর থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত সড়ক সংস্কার দ্রুত এগিয়ে নেয়া হয়েছে। আবার বিকল্প হিসেবে টাইগারপাস থেকে লালখান বাজার হয়ে সেনানিবাস পর্যন্ত সড়কও দ্রুত সংস্কার করা হয়েছে। টাইগারপাস থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত অংশে পাইলিংয়ের কাজ বন্ধ রেখে সড়কে কার্পেটিং করা হয়েছে।
বিএনএ/এমএফ