17 C
আবহাওয়া
৯:৪৪ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কেন মার্কিন নির্বাচনের ওপর নির্ভর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি?

কেন মার্কিন নির্বাচনের ওপর নির্ভর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি?


বিএনএ ডেস্ক : বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনের দূরত্ব প্রায় ১২ হাজার ৮শত ৪০ কিলোমিটার। ফ্লাইটে যেতে সময় লাগে সাড়ে ২৩ ঘন্টার বেশি। দুইদিন পরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। বিশ্ব মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ঢেউ আছড়ে পড়েছে বাংলাদেশে। সর্বত্র আলোচনা একটাই কে হচ্ছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট? কমলা নাকি ট্রাম্প? নির্বাচনের ফলাফল কি কোনো প্রভাব ফেলবে বাংলাদেশের ওপরে?

এর উত্তরে বেশিরভাগ রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের আগামীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। সম্প্রতি বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে রিপাবলিক পার্টির প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্পের একটি টুইটে নড়চড়ে বসেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কমলা হ্যারিসের ডেমোক্রেটিক পার্টির সরাসরি আশির্বাদ পেয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে কমলা হ্যারিস বিজয়ী না হলে ড. ইউনূস সরকার আদৌ দেশের শাসন ক্ষমতায় থাকবে কীনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কেননা হঠাৎ করে সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি এক্স বার্তা। যেখানে তিনি দাবি করেছেন, বাংলাদেশে এখন অরাজকতা চলছে। যে দাবিটি কয়েক মাস করে আসছে আওয়ামী লীগ।

ট্রাম্প আরও দাবি করেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন চলছে। যেটি মূলত বাংলাদেশের এ সরকারকে মনেপ্রাণে অপছন্দ করা ভারতের দাবি। ভারত এবং দেশটির মিডিয়া বেশ চড়া সুরে দাবিটি করলেও সেটি শেষ পর্যন্ত বৈশ্বিক দৃষ্টি আকর্ষণ করেনি। কিন্তু ট্রাম্পের মন্তব্যের পর নতুন করে আলোচনা শুরুর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
ট্রাম্প তাঁর এক্স বার্তায় ভারতকেও টেনে এনেছেন। বলেছেন, ভারত ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর ভালো বন্ধু। এটাও বাংলাদেশের জন্য ভবিষ্যৎ বড় ধরনের উদ্বেগ সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট।

এর আগে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ফোনালাপে মোদি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি জানিয়েছিলেন। মোদি নিজের এক্স বার্তায় সেটি প্রকাশও করেছেন। তবে এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইতিবাচক কোনো উত্তর পাননি মোদি। যা কার্যত তাঁকে বেশ হতাশ করেছে। কিন্তু সেখানে ট্রাম্প নিজে থেকেই মোদির কথাকে সত্যায়িত করছেন। এটা বাংলাদেশ ইস্যুতে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের সম্পর্কে নতুন কোনো রাজনৈতিক মেরুকরণ কী না, সেটা নিয়েও আলোচনা- সমালোচনা চলছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ডেমোক্রেটিক নেতাদের সখ্য বহু পুরোনো। সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, তাঁর স্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে রয়েছে ব্যক্তিগত সম্পর্ক। তাই ড. ইউনূস প্রশাসনের সব ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করতে ক্লিনটন ও হিলারি ভূমিকা রেখেছেন এবং রাখবেন, এটাই স্বাভাবিক।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ঠিক ছয় দিন আগে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দমন ও প্রতিহিংসার বিষয়ে যে কথাগুলো বলেছেন, তার নেপেথ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভোটের রাজনীতি এবং সেটা দেশটির হিন্দু ভোটারদের আকৃষ্ট করতেই বলা হয়েছে।

মেক্সিকানদের পরেই যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় অভিবাসী ভোটার ব্লক মনে করা হয় হিন্দু ভোটারদের। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ৫২ লাখ হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভোটার প্রায় ২৬ লাখ। সাধারণত তারা ডেমোক্র্যাটদের ভোট দিলেও এবারের জরিপ বলছে, নিজে প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হলেও হিন্দু ভোটারদের মধ্যে জনপ্রিয়তা কমছে কমলা হ্যারিসের।
কার্নেগি এনডোম্যান্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন পরিচালিত জরিপ বলছে, ২০২০ সালের নির্বাচনে বাইডেন যখন ৬১ শতাংশ হিন্দু ভোট পেয়েছেন, এবার কমলা তার চেয়ে ৪ শতাংশ কম ভোট পাবেন।

ট্রাম্প তাই নির্বাচনের আগে আগে হিন্দু ভোটারদের টানতে একটি কূটচাল দিয়েছেন বলা যায়। নির্বাচনের পর তিনি এ অবস্থানে না–ও থাকতে পারেন। অনেকে ট্রাম্পের হিন্দুদের নিয়ে মন্তব্যকে হালকাভাবে দেখছেন, কেননা হোয়াইট হাউসে ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে এক সাক্ষাতে যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানের ‘নিখোঁজ’ হওয়ার তথ্য দিয়ে আলোচনায় আসেন প্রিয়া সাহা নামের এক নারী। ট্রাম্প এ বিষয়ে শুনেছেন ঠিকই, তবে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি তাঁর প্রশাসনকে।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগটি সরকার পতনের ঠিক পরপর উঠেছে। এর প্রায় ৩ মাস পর ট্রাম্প এ বিষয়ে কথা বলা নিয়ে তাই বেশ রহস্য রয়েছে।

সম্প্রতি সুইডেনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নেত্র নিউজ দাবি করেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রতিষ্ঠান ‘ওয়াজেদ কনসালটিং ইনকরপোরেশন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরির জন্য দুই লাখ ডলার যা বাংলাদেশী প্রায় আড়াই কোটি টাকায় একটি লবিং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে।

সংশ্লিষ্ট অনেকে বলছেন, ট্রাম্পের এ বক্তব্যটি ইউএসএ হিন্দু ফেডারেশনের খসড়া করা। তারাই এ বিষয়ে ট্রাম্পকে দিয়ে বলিয়েছে। আগামী নির্বাচনে তাঁকে ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে।

প্রসঙ্গত, ট্রাম্পের নির্বাচনী ট্রান্সজিশন টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ভাতিজা রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র ও ডোমোক্র্যাট পার্টি পাল্টে এবার ট্রাম্পকে সমর্থন জানানো সাবেক কংগ্রেসওম্যান তুলসি গ্যাবার্ড, যিনি ডানপন্থী কট্টর হিন্দুবাদী হিসেবে পরিচিত।

ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হলে তুলসি গ্যাবার্ডকে সেক্রেটারি অব স্টেট অর্থাৎ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। সেটি হবে বাংলাদেশের ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারে জন্য বড় ধাক্কা। যা সামলানো বেশ কঠিন হবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের জোট সঙ্গী ১৪ দলের বিষয়ে এখন যে অবস্থানে আছে, তা থেকে বেরিয়ে ১৮০ ডিগ্রীতে ঘুরে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

এই অবস্থায় আনপ্রেডিক্টেবল ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও তাদের নেপথ্যে থাকা রাজনৈতিক দল গুলোর জন্য কী অপেক্ষা করছে, তা হয়তো ভবিষ্যৎই বলে দেবে।

বিএনএ,সৈয়দ সাকিব/এইচমুন্নী

Loading


শিরোনাম বিএনএ