22 C
আবহাওয়া
১০:৫০ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কেন ইউনূস সরকারের সফলতার চেয়ে ব্যর্থতাই বেশি?

কেন ইউনূস সরকারের সফলতার চেয়ে ব্যর্থতাই বেশি?

কেন ইউনূস সরকারের সফলতার চেয়ে ব্যর্থতাই বেশি?

বিএনএ, ঢাকা: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দেশের শাসনভার গ্রহণ করেছে। কোনো সরকারের সাফল্য–ব্যর্থতা বিচারে তিন মাস যথেষ্ট নয়। তবুও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের আশা–আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে কতটা সফল ও কতটা ব্যর্থ তা জানতে- দৈনিক প্রথম আলোর এক ফেসবুক জরিপে প্রশ্ন করা হয়, সরকারের উদ্যোগ ও কার্যক্রমে আপনি কি সন্তুষ্ট? এই প্রশ্নের জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন ৪৫ শতাংশ। অন্যদিকে ‘না’ বলেছেন ৫১ শতাংশ। বাকি ৪ শতাংশ মানুষ পক্ষে-বিপক্ষে কোনো মত দেননি।

সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা দুটোই আছে। শিক্ষাঙ্গনে তুলনামূলক স্থিতিশীলতা এলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঠেকানো যায়নি। নিত্যপণ্যের দাম ক্রমাগত বেড়ে চললেও সরকার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। সাম্প্রতিক বন্যা উপদ্রুত এলাকায় ত্রাণ ও পুনর্বাসন কাজ নিয়েও অনেক অভিযোগ আছে।

YouTube player

আওয়ামী সরকারকে হটাতে যে বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁদের মধ্য থেকে তৈরি জাতীয় নাগরিক কমিটি প্রথম সংবাদ সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘটে চলা মব জাস্টিস, মন্দির ও মাজার ভাঙচুরের ঘটনা প্রতিরোধে অন্তর্বর্তী সরকারের ‘নিষ্ক্রিয়’ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। তাদের দাবি, মানুষ যেসব আকাঙ্ক্ষা থেকে আন্দোলনে নেমে এসেছিল, সেসব আকাঙ্ক্ষা এখনো অপূর্ণ। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা নিয়েও তাদের অভিযোগ আছে। আস্থায় আনতে পারেনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে। বিশেষ করে সনাতন ধর্মের হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। শুধু হিন্দু সম্প্রদায় নয়- সুন্নী মুসলমানদের বিশ্বাসে আঘাত লেগেছে। ভাঙ্গা হয়েছে অনেক মাজার। ফলে তারাও সরকারের ওপর অসন্তুষ্ট।

গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে গঠিত জুলাই গণহত্যা স্মৃতি ফাউন্ডেশন পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। অভ্যুত্থানের প্রায় তিন মাস পার হলেও আহত অনেক ব্যক্তির চিকিৎসার সুব্যবস্থা পুরোপুরি হয়নি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে যিনি আছেন, তাঁর কার্যক্রম তেমন দৃশ্যমান নয়। বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নেই। তবে তাঁদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারে আছেন মাত্র ২১ জন। এর বাহিরে বিশেষ সহকারী আছেন দুজন। সে ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার টিম হওয়ার কথা আরও দক্ষ, অভিজ্ঞ ও উদ্যমী। কিন্তু বাস্তবে উপদেষ্টা পরিষদের অনেকেরই রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক কাজের অভিজ্ঞতার অভাব আছে।

অন্তর্বর্তী সরকার প্রথমেই হোঁচট খেয়েছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রথমে যাঁকে দেওয়া হয়েছিল, তিনি সামরিক বাহিনী থেকে এলেও বেসামরিক প্রশাসনে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল। তিনি কঠিন সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে যথাসাধ্য চেষ্টাও করেছিলেন। সম্ভবত রাজনৈতিক বিষয়ে একটি মন্তব্যের কারণে তাঁকে সেখান থেকে অন্য মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে পরবর্তীতে যাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, তিনিও সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তাঁর বেসামরিক প্রশাসনে কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই। সে কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে তেমন সফল হতে পারছেন না। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণে সরকারের শুরুর দিন থেকে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত করে। সেনা, বিজিবি, র‍্যাব ও পুলিশের সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। সেনাসদস্যদের বিচারিক ক্ষমতাও দেওয়া হয়। কিন্তু জানমালের নিরাপত্তাহীনতায় উদ্বিগ্ন জনগণ আশ্বস্ত হতে পারছে না।

খোদ রাজধানীতে দিনে দুপুরে ছিনতাই, ডাকাতি, খুনের ঘটনা ঘটছে, সেনাবাহিনীর অভিযানেও সফলতা এসেছে এমনটা বলা যাবে না।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজটি সার্বক্ষণিক হওয়া সত্ত্বেও একই উপদেষ্টাকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে কিন্তু তিনি কৃষিতে তেমন সময় দিতে পারছেন না। ফলে অবহেলিত রয়ে গেছে কৃষি খাত। তাছাড়া এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে শস্য কম হয়েছে। ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম সর্বকালের রের্কড ভেঙ্গেছে।

বিগত সরকারের আমলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের মাত্রা ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর অর্থনীতি, বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতে কিছু শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ায় শৃঙ্খলা ফিরে আসতে শুরু করেছে।

অর্থ উপদেষ্টা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু অর্থনীতির মূল যে চালিকা শক্তি বেসরকারি খাতের সঙ্গে সরকারের আস্থার সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। এখানে আস্থার সংকট বিদ্যমান।

যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টাও নিজের সক্ষমতা দেখাতে পেরেছেন। নানা সমস্যা সত্ত্বেও আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় বেশ সক্রিয়। সংস্কৃতি ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে অপেক্ষাকৃত পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিরা দায়িত্ব পেয়েছেন। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পলিথিনের ব্যবহার বন্ধের উদ্যোগও প্রশংসার দাবিদার। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মেও গতি আছে। উপদেষ্টা পরিষদে ছাত্র আন্দোলন থেকে আসা দুই তরুণ সদস্যের তৎপরতাও দৃশ্যমান।

তবে জনপ্রশাসন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘন ঘন সিদ্ধান্ত বদলের ফলে এক ধরনের স্থবিরতা রয়েছে।

উপদেষ্টা পরিষদের কথা ও কাজের মিল না থাকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রথম ভাষণে বলেছেন, ‘গণরোষের মুখে ফ্যাসিবাদী সরকারপ্রধান দেশ ত্যাগ করার পর আমরা এমন একটি দেশ গড়তে চাই, যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের মানবাধিকার থাকবে পুরোপুরি সুরক্ষিত। আমাদের লক্ষ্য একটাই, উদার, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। আমরা এক পরিবার। আমাদের এক লক্ষ্য। কোনো ভেদাভেদ যেন আমাদের স্বপ্নকে ব্যাহত করতে না পারে, সে জন্য আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’ কিন্তু গত তিন মাসে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। রবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসা আগের মতোই বিদ্যমান। ফলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও জাতীয় ঐক্য গঠনে অন্তর্বতীকালীন সরকার কতটা সফল হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

বিএনএনিউজ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী/ বিএম/হাসনা

Loading


শিরোনাম বিএনএ