বিএনএ ডেস্ক : জামায়াত ইসলামী ও তার অঙ্গ সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন সহযোগি সংগঠনকে সরকার নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করেছে। এতে কার লাভ হয়েছে? এমন প্রশ্ন এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘুরপাক খাচ্ছে। আপাত দৃষ্টিতে জামায়াত- শিবিরকে নিষিদ্ধ করে সরকার লাভবান হয়েছে মনে করা হলেও আত্মতুষ্টিতে নেই আওয়ামী লীগ। কেননা সুদূরপ্রসারী লাভ হবে বিএনপির। জামায়াত শিবিরের লাখ লাখ সদস্য প্রকাশ্যে বা গোপনে বিএনপির পতাকা তলে আশ্রয় নিবে। এই অবস্থায় এক সময়কার বিএনপি নেতা বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. কর্নেল অলি আহমেদ জামায়াত শিবিরকে সুরক্ষা দিতে এগিয়ে এসেছেন।
তিনি বলেছেন, নিষিদ্ধ হওয়া জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীদের জন্য এলডিপির দরজা খুলে রেখেছেন। অথচ এক সময় দলে তারেক জিয়ার অতিরিক্ত হস্তক্ষেপের পাশাপাশি জামায়াত ইসলামীর প্রভাব ও বিরোধীতার কারণে ড. অলি আহমেদ বিএনপি ত্যাগ করে এলডিপি গঠন করেন। এমনকি সাতকানিয়া নির্বাচনী এলাকায় জামায়াত ইসলামী তাকে ছাড় দেয়নি।
সরকারি নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধের পর জামায়াতে ইসলামীর পাঠানো বিবৃতির চেয়ে দ্বিগুণ শব্দে বিবৃতি দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি। প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সই করা এই বিবৃতি শিরোনামসহ ১১০৬ শব্দের।
যদিও জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের বিবৃতির শব্দসংখ্যা ৫০৩। পাশাপাশি ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলামের বিবৃতির শব্দসংখ্যা ৫১১ শব্দের।
‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ’ শীর্ষক শিরোনামে বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশকে নিষিদ্ধ করার আওয়ামী লীগ সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিতে ন্যায়সংগত আন্দোলনকে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাস চালিয়ে নিষ্ঠুরভাবে দমন করতে গিয়ে যে হত্যাযজ্ঞ করেছে, তা শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, উপমহাদেশের ইতিহাসে বিরল।’
কী কারণে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে জামায়াত ইসলামীর জন্য এত দীর্ঘ বিবৃতি দিয়েছেন তা সাদা চোখে বিশ্লেষণ করা না গেলেও অন্তত এটা বলা যায়, ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে নাশকতার মাধ্যমে জামায়াত শিবির সরকারকে যে নাজুক অবস্থায় ফেলেছেন তার ফসল বিএনপির ঘরে উঠেছে। জামায়াত শিবির নির্বাচনের আগে পৃথক ভাবে মিছিল সমাবেশ করেছে। এক কথায় জামায়াত শিবির নাশকতার মাধ্যমে মাঠে না নামায় বিএনপির লাগাতার অবরোধ কর্মসূচী মুখ থুবড়ে পড়েছিল। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের আগে থেকে জামায়াত শিবির ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার নীল নকশা বাস্তবায়ন শুরু করে। তারই ধারাবাহিকতায় ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব নিয়ন্ত্রণে রাখতে ছাত্রশক্তির নেতাদের সমন্বয়কের দায়িত্ব দেয়। ফলে ছাত্রদের দাবি পুরোপুরি মেনে নিলেও আন্দোলন থেকে সরে যাচ্ছে না ছাত্ররা। ৯ দফার মাধ্যমে বর্তমানে মাঠে থাকা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কৌশলে এক দফার দাবির দিকে নিয়ে যেতে তৎপর রয়েছে। তারই অংশ হিসাবে পেশাজীবীদের মাঠে নামানোর তৎপরতা দেখা গেছে। জামায়াত বিএনপি সমর্থক শিক্ষক, চিকিৎসক ও সাংবাদিকদের মাঠে নামানো হয়েছে।
তারই ধারাবাহিকতায় ছাত্রদের দিয়ে ডাক দেওয়া হয়েছে সর্বাত্বক অবরোধের। ছাত্রদের ব্যানারে রাস্তায় নাশকতায় নেমে এসেছে বিএনপি জামায়াতের হাজার হাজার কর্মীরা। সশস্ত্রভাবে তারা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে তৎপর রয়েছে। খুলনায় পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করে উল্লাস করেছে জামায়াত বিএনপির সশ্রস্ত্র ক্যাডাররা।
এই অবস্থায় জামায়াত ইসলামীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে বিচার ও তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার বিষয়টি সামনে এসেছে।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর মনে করেন, জামাত নিষিদ্ধ করলে সন্ত্রাস নির্মূল হবে মনে করার কারণ নেই। তাদের যে সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক, অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য— এগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। জামায়াতের বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখান থেকে জঙ্গি রিক্রুটমেন্ট হয়। তাদের এনজিও ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান আছে— এগুলোও সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। তা আনতে না পারলে মৌলবাদের সন্ত্রাস নির্মূল করা যাবে না। মনে রাখতে হবে জামায়াত কেবল একটি দল না— আদর্শ, মওদুদীবাদ। যারা কিনা ধর্মের নামে তাদের কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেয়। ঠিক যেভাবে একাত্তরের গণহত্যা, নারী ধর্ষণকে ধর্মের নামে বৈধতা দিয়েছিল। ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ না হলে অন্য নামে তারা হাজির হবে।
‘ক্রিমিনাল অর্গানাইজেশন’ হিসেবে এবার জামায়াতের বিচার শুরু হবে কিনা প্রশ্নে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তাপস বলেন, জামায়াত ইসলামী একাত্তরে গণ হত্যার জন্য সংগঠন হিসাবে তাদেরকে ট্রায়ালে নেওয়ার দরকার আছে। একইসঙ্গে তাদের অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান টিকে আছে, আদর্শের মূল জায়গা টার্গেট করতে হলে সংসদে আইন পাস করা প্রয়োজন।’
বিএনএ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী, ওজি