।। ওসমান গনী।।
প্রখ্যাত গীতিকার গৌরিপ্রসন্ন মজুমদার লিখেছিলেন ‘শোনো একটি মুজিবরের থেকে/ লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠ/ স্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি/ আকাশে বাতাসে ওঠে রণি।’ বঙ্গবন্ধু কালজয়ী বীর বাঙালী, ইতিহাসের মহানায়ক হয়ে বেঁচে আছেন। বেঁচে থাকবেন চিরকাল পৃথিবীর মানব মুক্তির ইতিহাসে। পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের ‘বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক কবিতায় তারই প্রতিধ্বনি আমরা দেখতে পাই ‘মুজিবুর রহমান/ওই নাম যেন ভিসু ভিয়াসের অগ্নি উগারি বান/ বঙ্গদেশের এপ্রান্ত হতে সকল প্রান্ত ছেয়ে/ জ্বালায় জ্বলিয়ে মহা কালানল ঝঞ্ঝা অশনি বেয়ে।
কবি সুফিয়া কামাল ‘ডাকিছে তোমারে’ কবিতায় লিখেছেন,- ‘এই বাংলার আকাশ-বাতাস, সাগর গিরি ও নদী/ ডাকিছে তোমারে বঙ্গবন্ধু? ফিরিয়া আসিতে যদি।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কবি নির্মলেন্দু গুণের কাছে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক রূপে মূর্ত। তাই তাঁর কণ্ঠে উদাত্ত উচ্চারণ- ‘মুজিব মানে আর কিছু না এক যমুনা রক্ত/মুজিব মানে সমাজতন্ত্র/আমি মুজিব ভক্ত।’ কবি নির্মলেন্দু গুণের অসাধারণ সৃষ্টি ও বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য সংযোজন ‘স্বাধীনতা এ শব্দটি কী ভাবে আমাদের হলো’ কবিতাটি। এ কবিতাটিতে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণটির আবেগময় প্রকাশ ঘটেছে।
বাঙালীর পরিচয় আর বঙ্গবন্ধু হৃদয় জুড়ে বাঙালী একাকার তাই সঙ্গত কারণেই কবি সৈয়দ শামসুল হক লিখলেন তার ‘আমার পরিচয়’ কবিতাটি- ‘আমি তো এসেছি সার্বভৌম বারো ভুঁইয়ার থেকে/আমি তো এসেছি ‘কমলার দীঘি’; ‘মহুয়ার পালা’ থেকে/আমি তো এসেছি তিতুমীর আর হাজী শরীয়ত থেকে/আমি তো এসেছি গীতাঞ্জলি ও অগ্নিবীনার থেকে/এসেছি বাঙালী ক্ষুদিরাম আর সূর্যসেনের থেকে/ এসেছি বাঙালী জয়নুল আর অবন ঠাকুর থেকে/এসেছি বাঙালী রাষ্ট্র ভাষার রাজপথ থেকে/এসেছি বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর থেকে/আমি যে এসেছি জয় বাংলার বজ্রকণ্ঠ থেকে/আমি তো এসেছি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে।’
বরেণ্য অমর কবি সিকানদার আবু জাফর ‘সে নাম মুজিব’ কবিতায় লেখেন- ‘সদ্য ফোটা শাপলার পরিতৃপ্ত আত্মসমর্পণে/অঙ্কিত বিচিত্র ছবি মুছে গেছে পুকুরের নিটল দর্পণে/কবরের শ্মশানের অকস্মাৎ লাঞ্ছনা যখন/বন্দী করে নিয়ে যায় ঘরে ঘরে/ মূর্ছা হত বাঙালীর মন/তখন যে নাম/পিতার বক্ষের মতো, নির্ভরতা/মেলে ধরে বলে/ভয় নেই জন কল্যাণের ধ্রুব পদ তলে/চূর্ণ হবে অসত্য অশিব/সে নাম মুজিব।’
কবি রফিক আজাদ তাঁর ‘এই সিঁড়ি’ কবিতায় লিখেছেন- ‘এই সিঁড়ি নেমে গেছে বঙ্গোপসাগরে/সিঁড়ি ভেঙ্গে রক্ত নেমে গেছে/বত্রিশ নম্বর থেকে/সবুজ শস্যের মাঠ বেয়ে/অমল রক্তের ধারা বয়ে গেছে বঙ্গোপসাগরে।’
কবি বেলাল চৌধুরী ‘বত্রিশ নম্বর’ কবিতায় বর্ণনা করেছেন- ‘এই এ বাড়িটির ইতিহাস ইটে গাঁথা রয়েছে/বাঙালী জাতির গৌরব গাথা ও শৌর্যের কথা।’
কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কবিতা ‘আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি’। তিনি কবিতার চিত্রপট এঁকেছেন এভাবে : রক্তজবার মতো প্রতিরোধের উচ্চারণ কবিতা/ আমি কি তার মতো কবিতার কথা বলতে পারবো/ আমি কি তার মতো স্বাধীনতার কথা বলতে পারবো? সত্যিকারভাবেই বঙ্গবন্ধুর মতো আর কেউ স্বাধীনতার কথা বলতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর মতো আর কেউ স্বাধীনতার মতো মহাকাব্যের মহাকবি হতে পারবে না।
কবি আসাদ চৌধুরী ‘আমাকে দিয়েছিলে তুমি অসীম আকাশ’ কবিতায় বঙ্গবন্ধুকে অসীম আকাশ, স্বপ্নের আলো, দু’চোখের তারা ইত্যাদি অভিধায় ভূষিত করেছেন। তিনি কবিতায় চিত্রিত করেছেন এভাবে, আমাকে দিয়েছিলে তুমি অসীম আকাশ/ আকাশটা পেয়েছিলাম আমিÑ আমরাই/ পিতামহের সেই সৌভাগ্য হয়নি/ আর পেয়েছিলাম অনেক অনেকের ত্যাগে আর সাধনায়।
কবি মাকিদ হায়দার ‘যত্নে থাকুক জনক আমার’ কবিতায় শেখ মুজিবকে সূর্যোদয়, বসন্তের দিন, মায়ের আঁচল, ভোরের কুসুম প্রমুখ অলঙ্কারে ভূষিত করেছেন। এর সাথে আরও বলেছেন, গোলাপ কুসুম, সমুদ্রের ঢেউ, শিউলি ফোটার দিন, গ্রামের মেঠোপথ, গৃহস্থের সুখ, প্রেম ভালোবাসা যাবতীয় কথা। কবির এ কবিতার কয়েকটি চরণ তুলে ধরা হলো, যত্নে থাকুক সূর্যোদয়/ আমাদের রাজপথ/ দুপুরের ভেজা রোদ/ শ্রাবণের মেঘ/ বসন্তের দিন/ যত্নে থাকুক।
কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী ‘বঙ্গবন্ধু মুজিবর’ কবিতায় বঙ্গবন্ধুকে বায়ুর সন্তান, পক্ষহীন মধুর আত্মীয়, শতশত ভোর অলঙ্কারে অভিহিত করেছেন। তিনি এ কবিতায় তুলে ধরেছেন, আপনার ভূমিস্বত্ব অন্ন ও আশ্রয়/ মিলেমিশে যদি জয়/ ক্ষেত্রফল জানে তবে নিত্য-পরিচয়/ পক্ষহীন আত্মীয় মধুর/ বঙ্গবন্ধু মুজিবর।
রাজনীতির কবি হিসেবে বঙ্গবন্ধু নিজেই সমাদৃত। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি, স্বাধীনতা নামক মহাকাব্যের মহাকবি। বিশ্ব মিডিয়া বঙ্গবন্ধুকে অনেক বড় করে দেখেছে এবং বঙ্গবন্ধুকে ‘পোয়েট অব পলিটিক্স’ উপাধিতে ভূষিত করেছে। ##