বিএনএ, জাবি : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে মধ্যরাতে সংবাদকর্মীকে মারধরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (জাবিসাস)। বুধবার (০৩ আগস্ট) জাবিসাসের দপ্তর ও প্রকাশনা সম্পাদক ফারুক হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (জাবিসাস) সদস্য আল আমিন হোসাইন রুবেলকে মারধরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জাবিসাসের সভাপতি বেলাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আলকামা আজাদ। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন তারা। যৌথ বিবৃতিতে তারা এ দাবি জানান।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের গেস্টরুমে ক্যারিয়ারটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আল আমিন হোসাইন রুবেলকে ডেকে নিয়ে মারধর করেন ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী। নির্যাতনের এক পর্যায়ে রুবেলের মোবাইল ফোন তল্লাশির চেষ্টা করেন তারা। রুবেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যায়ন বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের (দ্বিতীয় বর্ষ) শিক্ষার্থী।
মারধরে অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের আসাদ হক ও আরিফ জামান সেজান, অর্থনীতি বিভাগের জিয়াদ মির্জা, দর্শন বিভাগের মীর হাসিবুল হাসান রিশাদ, নৃবিজ্ঞান বিভাগের রাইহান বিন হাবিব, প্রাণীবিদ্যা বিভাগের মুনতাসির আহমেদ তাহরীম, আইন ও বিচার বিভাগের মাসুম বিল্লাহ (সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী) এবং রসায়ন বিভাগের ৪৮ তম ব্যাচের জাহিদ হাসানসহ আরও অনেকে। অভিযুক্তরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের অনুসারী বলে পরিচিত।
বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, একজন সাংবাদিকের সঙ্গে গেস্টরুমে মারধরের মতো ঘটনা ঘটলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। সাংবাদিকদের সঙ্গে মারধরের ঘটনা গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের পায়তারা। যা কোনভাবেই কাম্য নয়। শুধু সাংবাদিক নয়, কোন শিক্ষার্থীর সঙ্গেই গেস্টরুমে মারধর কিংবা মোবাইল তল্লাশির ঘটনা ন্যাক্কারজনক। এ ঘটনায় আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি। এই নির্যাতনকারীদের লাগাম এখনই টেনে ধরতে হবে। এসব ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে তা ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সকলের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান। পাশাপাশি কাদের ইন্ধনে এই ঘটনা ঘটেছে তাদেরও খুঁজে বের করার দাবি জানান তারা।
পরে বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ বরাবর অভিযোগপত্র প্রদান করেন জাবিসাসের নেতৃবৃন্দ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন), কোষাধ্যক্ষ, চুক্তিভিত্তিক রেজিস্টার, ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বরাবর অভিযোগপত্র ও প্রতিবাদলিপির অনুলিপি প্রদান করে জাবিসাসের সদস্যবৃন্দ।
এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম বলেন, “আমরা ঘটনা সম্পর্কে অবগত। হল প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে।”
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হেল কাফি বলেন, “আমরা হল প্রশাসন মিটিংয়ে বসব। সকলের সাথে আলোচনা করে অভিযুক্তদের অনধিক তিন কার্যদিবসের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করার চেষ্টা করব।”
ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, “হল প্রশাসন থেকে তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া মাত্রই আমরা শৃঙ্খলা কমিটিতে পাঠাবো। শৃঙ্খলা কমিটি সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য সিন্ডিকেটে সুপারিশ করবে।”
বিএনএনিউজ/সানভীর/এইচ.এম।