বিএনএ ডেস্ক: চীনের অব্যাহত হুমকির পরও তাইওয়ানে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা ৪৮ মিনিটে পেলোসিকে বহনকারী বিমানটি তাইপে বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
স্থানীয় সময় ১০টা ৪৪ মিনিটে তাঁর উড়োজাহাজ তাইপের মাটি স্পর্শ করে। মার্কিন সামরিক বাহিনীর একটি বিমানে করে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে তিনি তাইপে পৌঁছান। উড়োজাহাজের সিঁড়ি দিয়ে নামার পর তাইওয়ানের প্রতিনিধি দল তাঁকে স্বাগত জানান।
পেলোসির সফর ঘিরে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। মঙ্গলবার সারাদিন তাইওয়ানের পূর্বাঞ্চলের জলসীমায় একটি যুদ্ধবিমানবাহী রণতরিসহ চারটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে চীন। আকাশে চক্কর দিয়েছে চীনা যুদ্ধবিমান। ২৫ বছরের মধ্যে তাইওয়ান সফর করা সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ মার্কিন রাজনীতিবিদ পেলোসি।
তাইওয়ানে পৌঁছানোর পর টুইটে পেলোসি বলেন, তাঁর প্রতিনিধিদলের সফর ‘তাইওয়ানের গতিশীল গণতন্ত্রের’ প্রতি আমেরিকার অবিচল প্রতিশ্রুতিকে সম্মানিত করেছে। পেলোসি লিখেছেন, তাইওয়ানের ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষের সঙ্গে আমেরিকার সংহতি এখন বেশি গুরুত্ব বহন করে। তাঁর সফর কোনোভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ী নীতির বিরোধিতা করে না।
তাইওয়ানের গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, পেলোসি তাইপের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে রাত কাটাবেন। তাঁর সফরের বিরোধিতা করে হোটেলের বাইরে চীনপন্থী লোকজন বিক্ষোভ করছেন। আগামীকাল সকালে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইংওয়েনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ন্যান্সি পেলোসি। এরপর তিনি তাইওয়ানের পার্লামেন্টে যাবেন। এ ছাড়া তিনি মানবাধিকার জাদুঘরও ঘুরে দেখবেন।
ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের তীব্র নিন্দা করেছে চীন। এই সফর এক চীন নীতির গুরুতর লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা বলেছে, এই সফর চীন-মার্কিন সম্পর্কের রাজনৈতিক ভিত্তির ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলবে।
পেলোসির এই সফর নিয়ে গাত্রদাহ রয়েছে চীনের। কারণ, তাইওয়ানকে তারা নিজের ভূখণ্ড মনে করে। তবে তাইওয়ানের মানুষ নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবেই দেখেন। যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
চীনের হুঁশিয়ারি ছিলো, পেলোসি তাইওয়ান সফরে গেলে এর পরিণাম হবে ভয়াবহ। আর সেটার মূল্য দিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনয়িং বলেন, চীনের সার্বভৌম নিরাপত্তা স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে মূল্য দিতে হবে। সামরিক উপায়ে এর জবাব দেওয়ারও হুমকি দেয় বেইজিং। গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে এক টেলিফোন আলাপে চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিন পিং ‘আগুন নিয়ে খেলার’ বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেন।
পেলোসির সফরকে কেন্দ্র ঘিরে সৃষ্ট উত্তেজনায় তাইওয়ান প্রণালিতে বেইজিং ও ওয়াশিংটন উভয়ই যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে। এ ছাড়া তাইওয়ানের জলসীমার কাছাকাছি অঞ্চল দিয়ে একাধিক চীনা যুদ্ধবিমান উড়ে গেছে। গত সোমবার থেকে সেখানে বেশ কিছু চীনা যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন রাখা হয়েছে।
এদিকে মার্কিন রণতরি ইউএসএস রোনাল্ড রিগ্যান বর্তমানে ফিলিপাইন সাগরে অবস্থান করছে। মার্কিন নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তা বলেছেন, যেকোনো উসকানিতে তাঁরা জবাব দিতে সক্ষম। মার্কিন নৌ কর্মকর্তা আরও জানান, ইউএসএস ত্রিপোলি নামের আরেকটি উভচর জাহাজও ওই এলাকায় মোতায়েন রাখা হয়েছে।
বাইডেন প্রশাসন পেলোসির এখন তাইওয়ান সফরে যাওয়া উচিত নয় বলে পরামর্শ দিয়েছিলো। মূলত পেলোসি তাইওয়ান সফর করলে বেইজিংয়ের প্রতিক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ থেকেই তাঁকে সতর্ক করা হয়। তবে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, পেলোসি যেখানে খুশি, সেখানে যাওয়ার অধিকারী।
বিএনএ/এ আর