29 C
আবহাওয়া
৪:৫৬ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ১৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১১২ (পটুয়াখালী-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১১২ (পটুয়াখালী-২)


বিএনএ, ঢাকা:  বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে পটুয়াখালী-২ আসনের হালচাল।

পটুয়াখালী-২ আসন

পটুয়াখালী-২ সংসদীয় আসনটি বাউফল উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১১২ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের আ.স ম ফিরোজ

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১২ হাজার ২ শত ১৬ জন। ভোট প্রদান করেন ৮৮ হাজার ৫ শত ১৬ জন। নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের আ.স ম ফিরোজ। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪০ হাজার ২শত ২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু জাফর খান। তিনি পান ২০ হাজার ২শত ২১ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির ডাক্তার এয়াকুব আলী শরীফকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির ডাক্তার এয়াকুব আলী শরীফকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আ.স ম ফিরোজ বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৪২ হাজার ৪ শত ২৮ জন। ভোট প্রদান করেন ৯৮ হাজার ৯ শত ৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আ.স ম ফিরোজ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৫ হাজার ৯ শত ৩৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শহীদুল আলম তালুকদার। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৫ হাজার ৯ শত ১৩ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির শহীদুল আলম তালুকদার বিজয়ী হন

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২৬ হাজার ৭ শত ৬৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫ শত ৪১ জন। নির্বাচনে বিএনপির শহীদুল আলম তালুকদার বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৯ হাজার ৭ শত ৩৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আ.স ম ফিরোজ। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫২ হাজার ৮ শত ৪ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আ.স. ম ফিরোজ বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১৬ হাজার ৯ শত ৬৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮৪ হাজার ১ শত ৮১ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আ.স. ম ফিরোজ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৯৭ হাজার ৮ শত ৭৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ইঞ্জিনিয়ার ফারুক আহমেদ তালুকদার। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৭ হাজার ৫ শত ৩৭ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন:  আওয়ামী লীগের আ.স.ম ফিরোজ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আ.স.ম ফিরোজ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আ.স.ম ফিরোজ বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫১ হাজার ৮ শত ৭৩ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ২ হাজার ৭ শত ২৯ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৪ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের আ.স ম ফিরোজ, সাবেক সাংসদ মো. শহিদুল আলম তালুকদারের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করার পরিপ্রেক্ষিতে তার স্ত্রী ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির সালমা আলম বিএনপির প্রার্থী হন। এছাড়া কাস্তে প্রতীকে সিপিবির শাহবুদ্দিন আহমেদ, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নজরুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আ.স.ম ফিরোজ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৮৫ হাজার ৭ শত ৮৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির সালমা আলম। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৯ হাজার ২ শত ৬৯ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পটুয়াখালী-২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ এবং ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি বিজয়ী হয়।

YouTube player

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর পটুয়াখালী-২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৩৬.৭৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪০.৩৪ %, বিএনপি ৪৫.৯৭%, জাতীয় পার্টি ২.২১% , জামায়াতে ইসলামী ২.১৪%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৯.৩৪% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬২.০০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৭.৩৩%, বিএনপি ৩৮.৭৬%, জাতীয় পাটি ৩.৯৫%, জামায়াতে ইসলামী ১.৫১ %, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৮.৪৫% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬১.২৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪১.৪১%, ৪দলীয় জোট ৪৯.৩৬%, জাতীয় পার্টি ৮.৯৫%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.২৮% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৩.৬৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৭.৯৪%, ৪দলীয় জোট ৩৫.২১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৬.৮৫% ভোট পায়।

পটুয়াখালী-২ (বাউফল উপজেলা) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আ.স.ম ফিরোজ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক, পৌর মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল, বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা চেয়ারম্যান মোতালেব হাওলাদার। জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য হাসিবুল আলম তালুকদার এবং নির্বাহী সদস্য জোবায়দুল হক রাসেল।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য শহীদুল আলম তালুকদার, একাদশ জাতীয় সংসদের প্রার্থী শহীদুল আলম তালুকদারের স্ত্রী সালমা আলম, বিএনপি আহবায়ক আব্দুর রশীদ চুন্নু, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ দপ্তর সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসেন।

বিএনপির সঙ্গে জোটগত নির্বাচন করলে মনোনয়ন পেতে পারেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, পটুয়াখালী-১ সংসদীয় আসনটিতে গত ৪০ বছর ধরে বাউফল উপজেলার সভাপতি আ.স.ম ফিরোজ। ৭ বার সংসদ সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করা আ.স.ম ফিরোজ মনোনয়ন পেলেও জয়ের ব্যাপারে নির্ভার হতে পারছেন না। তার অন্যতম কারণ দলীয় কোন্দল। এ আসনের আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য আ.স.ম ফিরোজ, পৌর মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল এবং কোন্দল উপজেলা চেয়ারম্যান মোতালেব হাওলাদার এই ত্রি ধারায় বিভক্ত। কোন্দল এতটা তীব্র যে তিন গ্রুপের মধ্যে অসংখ্য বার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। প্রাণ গেছে ৪ জনের। আহত হয়েছে অসংখ্য নেতাকর্মী। কোন্দল নিরসনে হিমশিম খাচ্ছে আওয়ামী লীগ।

কোন্দল আছে বিএনপিতেও। তবে তা তীব্র নয়। কোন্দল নেই জামায়াতে ইসলামীতে, নেই মনোনয়ন নিয়ে প্রতিযোগীতা। আওয়ামী-বিএনপির কোন্দলের সুযোগ নিতে তৎপর রয়েছে জামায়াতে ইসলামী। ৪ দলীয় জোটের মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সরাসরি লড়াইয়ে প্রস্তুত, নিবন্ধন বাতিল হওয়া দলটি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১১২ তম পটুয়াখালী- ২ সংসদীয় আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।

বিএনএ/ ওজি

Loading


শিরোনাম বিএনএ