22 C
আবহাওয়া
১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » তেলবাজিতে যারা, চালবাজিতেও তারা

তেলবাজিতে যারা, চালবাজিতেও তারা

তেলবাজিতে যারা,চালবাজিতেও তারা

বিএনএ, চট্টগ্রাম : প্রতিদিন বাড়ছে চালের দাম। ভরা মৌসুমে অন্যান্য বছর চালের দাম কমলেও এ বছর দাম বাড়ছেই। দাম কোনোভাবে কমানো যাচ্ছে না। সিণ্ডিকেট কারসাজিতে বাড়ছে চালের দাম। কখনও পেঁয়াজ, কখনও তেল, কখনো ময়দা, কখনও বা চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা।

নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এখন কর্পোরেট সিণ্ডিকেট এর হাতে চলে গেছে। তেলের পর এবার তারা কোটি কোটি টাকার চাল কিনে মজুদ করছে। ফলে ঘন্টায় ঘন্টায় বাড়ছে চালের দাম! হাতেগোনা কয়েকটি কর্পোরেট গ্রুপই নিয়ন্ত্রণ করছে বাজার ব্যবস্থা।

সরকারের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে মজুদ সিণ্ডিকেট এর দহরম-মহরম সর্ম্পক রয়েছে। ফলে মজুদ সিণ্ডিকেট এর বিরুদ্ধে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন কার্যকর কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। তাদের গুদামগুলোতে অভিযান চলে না!

কয়েক মাস ধরে দেশে ভোগ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী।এতে মানুষের জীবনযাত্রায় যেখানে নাভিশ্বাস উঠেছে, সেখান নতুন করে চালের দাম বাড়ায় ক্রেতাদের এখন ত্রাহি অবস্থা। মোটা চাল ও মোটামুটি ভালো মানের চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। এ কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের কষ্ট আরেক দফা বেড়েছে। তারা হয়ে পড়েছেন দিশেহারা।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, কর্পোরেট গ্রুপগুলো পাইকারি ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে। তাদের দিয়ে বাজার অস্থিতিশীল করে পরবর্তীতে কোটি কোটি হাতিয়ে নেয়। সম্প্রতি চালের মূল্যবৃদ্ধির বেলায়ও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রামে সিণ্ডিকেট কারসাজিতে রয়েছে চাক্তাই এলাকার বেশ কিছু পাইকারি চাল ব্যবসায়ী। বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ) এর অনুসন্ধানে বেশ কয়েকজন পাইকারি ব্যবসায়ীর কারসাজি বিষয়টি বেরিয়ে আসে। চট্টগ্রামে সিণ্ডিকেট কারসাজিতে রয়েছে চাক্তাই এলাকার বেশ কিছু পাইকারি চাল ব্যবসায়ী।

তারা হলেন-মহিউদ্দিন বেলাল, মাহামুদুল হক, মোহাম্মদ রাসেল, মোহাম্মদ হান্নান ও নাছির উদ্দীন। বৃহস্পতিবার অভিযানে নাছিরের দোকান সিলগালা করা হয়। অন্যরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।

উল্লেখ্য, চাক্তাই এলাকায় প্রায় তিনশ’ চালের দোকান রয়েছে। এসব দোকানে পাইকারিতে চাল সরবরাহ করে উল্লেখিত সিণ্ডিকেট। চাক্তাই পাইকারি চাল ব্যবসা কতিপয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করছেন। তারা সিণ্ডিকেট করে চালের বাজার কামাচ্ছে ও বাড়াচ্ছে। তাদের হাতে জিম্মি তিনশ’ দোকানদার। অনেকে শুধু চাল ব্যবসার কমিশন এজেন্ট হয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি বস্তা চালে (৫০ কেজি) দাম বেড়েছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত চাল রপ্তানি সীমিত করবে-এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে চট্টগ্রামে পাইকাররা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে অসাধু ও বড় ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ার আশায় শতশত বস্তা চাল মজুদ করছেন। এ কারণে বাজারে চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রামের কিছু বড় ব্যবসায়ী আছেন যাদের চালের মিল নেই। কিন্তু তারা প্যাকেটজাত চাল বিক্রি করেন। চাল প্যাকেটজাত করার জন্য এসব ব্যবসায়ী চাল মজুদ করছেন। এছাড়া বেসরকারি আমদানিকারকরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। আবার আড়তদাররা আগের দরে চাল বিক্রি করছেন না। এ কারণে চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী।

পাইকারিতে জিরাশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা ৩৫০০ টাকা দরে। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে তা বিক্রি হয়েছিল ২৮০০ থেকে ২৯০০ টাকা। ওই চাল খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৬৫০ টাকা বা এরও বেশি দরে। নূরজাহান সিদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে ২২৫০-২৩০০ টাকা দরে। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে তা বিক্রি হয়েছিল ১৮০০ থেকে ১৮৫০ টাকা দরে।

পাইকারি বাজারে মিনিকেট আতপচাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) ২৭০০-২৭৫০ টাকা দরে। কয়েকদিন আগেই তা বিক্রি হয়েছিল ২৪৫০-২৫০০ টাকা দরে। পাইকারি বাজারে মিনিকেট সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে ২৮০০-২৮৫০ টাকায়। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে আরও ২০০ থেকে ৩০০ টাকা অতিরিক্ত দামে। এ চালের দাম দুই সপ্তাহ আগে ছিল বস্তা ২৪০০-২৩৫০ টাকা।

মোটা আতপ বিক্রি হচ্ছে ১৮০০-১৯০০ টাকা দরে। আগে বিক্রি হয়েছে ১৫০০-১৫৫০ টাকা দরে। মোটা আতপ পুরান বিক্রি হচ্ছে ২২০০-২২৫০টাকা। আগে বিক্রি হয়েছে ১৮০০-১৮৫০টাকা দরে।

গুটিসিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে ২১০০-২১৫০০ টাকায়। যা আগে বিক্রি হয়েছে ১৭০০-১৭৫০ টাকা। মোটা সিদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে ২১০০ টাকায়। কয়েকদিন আগে বিক্রি হয়েছে ১৯০০ টাকায়। চিনিগুড়া চাল প্রকারভেদে ৫শত টাকা বাড়িয়ে প্রতি বস্তা ৫ হাজার টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভরা মৌসুমেও দেশে চালের দাম বেশি হওয়ার কারণ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন চালবাজার ও গুদামে অভিযান চালালেও সিন্ডিকেট সদস্যরা রয়েছে বহাল তবিয়তে। ফলে চালের মূল্যবৃদ্ধি রোধ করা যাচ্ছে না।

বিএনএনিউজ২৪.কম/এনএএম/ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ