বিএনএ, ঢাকা: দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। লঘুচাপ থেকে হতে পারে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস।
বুধবার (৩ মে) বিকেলে আবহাওয়া অধিদপ্তর এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ৭ মে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা পরবর্তীতে ঘণীভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টি নিয়মিত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। তবে এখনই এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার (২ মে) আবহাওয়া অধিদফতরের মাসিক প্রতিবেদন ও আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি মে মাসে সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এই মাসে দেশে এক থেকে তিন দিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ মাঝারি/তীব্র কালবৈশাখী ঝড় এবং তিন থেকে পাঁচ দিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ হালকা/মাঝারি ধরণের কালবৈশাখী ঝড় হতে পারে। এছাড়া চলতি মাসে দেশের পশ্চিমাঞ্চলে একটি তীব্র তাপপ্রবাহ (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং দেশের অন্যত্র এক থেকে দুটি মৃদু (৩৬-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) অথবা মাঝারি (৩৮-৪০ডিগ্রি সেলসিয়াস) ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা সামান্য বেশি থাকতে পারে।
এদিকে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হতে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘মোচা’ উপকূলে আঘাত হানার সময় এক দিন এগিয়েছে বলে জানিয়েছেন কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ।
বুধবার বিকেলে দেওয়া ফেসবুক পোস্টে মোস্তফা কামাল পলাশ লেখেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলের পূর্বাভাসের মধ্যে পার্থক্য কমে এসেছে। এ সময়ে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র স্থলভাগে আঘাতের সময় প্রায় ১ দিন এগিয়েছে। তবে দুটি মডেলের মধ্যে স্থলভাগে আঘাতের সময়ের পার্থক্য ১৮ ঘণ্টা রয়েছে, এখন যা প্রতিদিন কমতে থাকবে।
তিনি উল্লেখ করেন, আবহাওয়ার ইউরোপিয়ান মডেল অনুসারে ১২ মে দুপুর ১২টার পর কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। তবে আগামী ১৩ মে দুপুর ১২টার পর উত্তর চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও ভোলা জেলার উপকূল দিয়ে স্থলভাগে আঘাতের কথা উল্লেখ করছে আবহাওয়ার আমেরিকা মডেল।
ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে তিনি লেখেন, ২ মে বঙ্গোপসাগরে সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৩০ বছরের গড় তাপমাত্রা অপেক্ষা স্থান ভেদে ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। সবচেয়ে দুঃসংবাদ হলো পুরো বঙ্গোপসাগরের মধ্যে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রার বিচ্যুতি সর্বোচ্চ চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলে। প্রায় ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যে স্থানের সমুদ্রের পানির তাপমাত্রার বিচ্যুতি যত বেশি সেই স্থানে ঘূর্ণিঝড় শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
তিনি আরও লেখেন, ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কিত সকল তথ্য বিশ্লেষণ করে আমি প্রমাণ পেয়েছি যে ২০১৯ সালে ঘূর্ণিঝড় ফণি সৃষ্টির সময় বঙ্গোপসাগরে আবহাওয়া সম্পর্কিত সূচকগুলো যে অবস্থায় ছিলও ঠিক একই অবস্থায় রয়েছে এ সপ্তাহেও।
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র নাম দিয়েছে ইয়েমেন। মোখা ইয়েমেনের লোহিত সাগর তীরের একটি বন্দরের নাম। এর ইংরেজি বানান Mocha (মোচা), কিন্তু উচ্চারণ হবে Mokha (মোখা)।
বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে সৃষ্টি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের ক্ষেত্রে ১৩টি দেশের সুপারিশ লাগে। বাংলাদেশসহ এই তালিকায় রয়েছে ভারত, ইয়েমেন, কাতার, ইরান, মলদ্বীপ, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, তাইল্যান্ড এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। নিয়ম অনুযায়ী এই ১৩টি দেশ থেকে ঘূর্ণিঝড়ের নাম সুপারিশ করা হয়। এমন ১৬৯টি নামের প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেই অনুসারে তৈরি হয় একটি তালিকা। তাতে পর পর ইংরেজিতে নামের হরফ ধরে, ক্রমানুযায়ী পালা আসে প্রত্যেক দেশের। এই তালিকা শেষ হয়ে গেলে, নতুন আবার নামের সুপারিশ নেওয়া হয়। এরপর যে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হবে, তার নাম হবে ‘বিপর্যর’, যার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ।
বিএনএ/এমএফ