বিএনএ ডেস্ক:নাটোরের বড়াইগ্রামে সুদখোর মহাজনের চাপে বিক্রি করে দেওয়া শিশুটিকে উদ্ধারের পর মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছেন নাটোরের জেলা প্রশাসক।
বুধবার (৩ মার্চ) বিকাল ৩টার দিকে বড়াইগ্রাম উপজেলা অডিটোরিয়ামে নাটোরের জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ শিশুটিকে তার মায়ের কোলে তুলে দেন।
এসময় বড়াইগ্রামের ইউএনও জাহাঙ্গীর আলম, অফিসার ইনচার্জ আনোয়ারুল ইসলাম এবং নগর ইউপি চেয়ারম্যান নিলুফার ইয়াসমিন ডালু উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত সোমবার (১ মার্চ) সুদখোর মহাজনের চাপে বাধ্য হয়ে ২২ দিনের শিশুটিকে বিক্রি করেন ভ্যানচালক বাবা রেজাউল করিম। মাত্র এক লাখ ১০ হাজার টাকায় কলিজার টুকরো মেয়েকে বেঁচে দেন বাবা। মেয়েটির নাম চাঁদনী আক্তার লিজা।
মঙ্গলবার (২ মার্চ) বিকেলে ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। এরপর তোলপাড় সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে রাতেই ভুক্তভোগীর বাড়ি গিয়ে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করেন ইউএনও জাহাঙ্গীর আলম। পরে বিক্রি হওয়া শিশুটিকে উদ্ধার করে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনি।
উদ্ধারের পর শিশুটিকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে পরিবারটিকে নগদ টাকা, ফলমূল, খাবার এবং একটি ভ্যান কিনে দেওয়া হয়। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জমিসহ একটি ঘর এবং চলমান ঋণ পরিশোধের জন্য নগর ইউপি চেয়ারম্যান ভিজিডি কার্ড করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
উল্লেখ্য, কয়েক মাস আগে রেজাউল করিম তার প্রতিবেশী সুদের কারবারি কালাম হোসেন, আব্দুস সামাদ ও তার ভাই সানোয়ার হোসেনের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নেন। এর মধ্যে কিছু সুদ পরিশোধ করলেও চক্রবৃদ্ধি হারে তা বেড়ে ৮০ হাজার টাকা হয়। টাকা পরিশোধের জন্য ওই তিন জন তাকে বিভিন্নভাবে চাপ দিয়ে আসছিল।
কয়েকদিন আগে রেজাউলের আয়ের একমাত্র উৎস রিকশা ভ্যানটিও জোর করে কেড়ে নেয় কালাম হোসেন। তারপরও টাকা পরিশোধের জন্য মহাজনদের চাপ অব্যাহত থাকে।
এক পর্যায়ে রেজাউল তার ২২ দিন বয়সী মেয়েটিকে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। স্ত্রী ফুলজান বেগম তাতে বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রেজাউল ধারালো অস্ত্র দিয়ে নিজের ঘরের বেড়া কুপিয়ে কেটে ফেলেন। নিজের পায়েও কোপ দেন। এতে মারাত্মক যখম হন তিনি।
এক পর্যায়ে রেজাউল আত্মহত্যার হুমকি দেন। পরে বাধ্য হয়ে ফুলজান শিশুটিকে বিক্রি করতে সম্মত হন। রেজাউল তার মেয়েকে সুদি মহাজন আব্দুস সামাদের হাতে তুলে দেন। সামাদ তার আত্মীয় পাবনার ঈশ্বরদীর সরাইকান্দি কারিগরপাড়ার মৃত মোভাক্ষর হোসেনের ছেলে রফিকুল ইসলামের কাছে এক লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়।
শিশু বিক্রির টাকা আব্দুস সামাদসহ অন্যান্য সুদখোর মহাজনরা ভাগাভাগি করে নেয়। অবশিষ্ট টাকায় রেজাউলের জন্য একটি ভ্যান কিনে দেয় তারা। সোমবার (১ মার্চ) এ ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়লে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরে জেলাপ্রশাসকের হস্তক্ষেপে বিষয়টির সুরাহা হলো।