বিএনএ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে স্ত্রীকে হত্যা করে প্লাস্টিকের ড্রামে মরদেহ গুম করে রাখার মামলায় ঘাতক স্বামী আবুল হোসেন ওরফে লিটনকে (৪৫) দীর্ঘ ৯ বছর পর গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। রোববার (১ অক্টোবর) ফেনীর সোনাগাজী থানার রাঘবপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার আবুল হোসেন ফেনী জেলার সোনাগাজী থানার রাঘবপুর এলাকার মৃত হাফেজ আহম্মদের ছেলে।
সোমবার (২ অক্টোবর) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
র্যাবের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ভুক্তভোগী মোছা: নাসিমা বেগম (২৬) চট্টগ্রামে গার্মেন্টসে চাকুরী করাকালে আবুল হোসেন ওরফে লিটনের সাথে পরিচয় হয় এবং প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে আবুল হোসেনকে বিবাহ করেন। বিবাহের ১৫/২০ দিন পর ভুক্তভোগী তার বড় ভাইকে জানায় যে, আবুল হোসেনকে বিবাহ করে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানার গ্রীনভিউ এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। বোনের বিবাহের কথা শুনে ছোট ভাই হিরণ শেখ উক্ত বাসায় বেড়াতে আসলে তার বোনের স্বামী আবুল হোসেনের পূবের্র বিবাহ এবং তার ৭ বছরের একটি কন্যা সন্তানের কথা জানাজানি হয়। উক্ত ঘটনা নিয়ে স্বামী আবুল হোসেনের সাথে ভুক্তভোগীর ঝগড়াঝাটি হয়।
গত ২০১৪ সালের ৩১ মার্চ ভুক্তভোগীর ছোট ভাই তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে বার বার ফোন দিলেও ফোন রিসিভ না করা এবং পরে ভুক্তভোগীর মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পায়। পরবর্তীতে বোনের স্বামী আবুল হোসেনের মোবাইলে ফোন করলে জানায় যে, তোমার বোনের সাথে ঝগড়া হয়েছে সে বাহিরে আছে তখন বোন বাসায় আসলে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন।
র্যাব আরও জানায়, বিষয়টি নিয়ে তাদের সন্দেহ হলে গত ২০১৪ সালের ৪ এপ্রিল বাগেরহাট থেকে নাসিমার বড় ভাই শেখ মো. হুমায়ুন কবির ও ছোট ভাই হিরণ এবং বড় বোন সেলিনা বেগম সকালে চট্টগ্রাম এসে পাহাড়তলীর ৫ নং রোডস্থ মো. ইসমাইল মজুমদারের বাড়ির ৬ষ্ঠ তলার ভাড়া বাসায় গিয়ে তালা বন্ধ দেখতে পায়। তখন উক্ত বাসায় ৬ষ্ঠ তলায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়েছে এবং গত ২০১৪ সালের ২ এপ্রিল সকাল আনুমানিক ৭টায় নাসিমার স্বামী আবুল হোসেন তার পূর্বের স্ত্রীর ঘরের মেয়েকে নিয়ে গ্রামের বাড়ীতে গেছে বলে বাসার মালিক মো. ইসমাইল মজুমদারের নিকট থেকে জানতে পারে। তখন নিহতের ভাই ও বোনেরা মিলে ঘরের দরজা বন্ধ দেখে পার্শ্বের খোলা জানালা দিয়ে ভিতরের দিকে দেখতে গিয়ে ঘরের ভিতর হতে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছিল। এ ব্যাপারে তাদের মনে সন্দেহ হলে স্থানীয় থানা পুলিশকে অবহিত করে। পুলিশ এসে মালিকের নিকট থেকে অতিরিক্ত চাবি নিয়ে বাসার তালা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে রান্নাঘরে রংয়ের প্লাস্টিকের পানির ড্রামের ভিতর থেকে পঁচা অবস্থায় একটি মৃতদেহ বের করে ফ্লোরে রাখলে তখন তারা সেটি বোনের মরদেহ বলে শনাক্ত করেন।
আরও পড়ুন: আবারও দাম বাড়ল এলপিজির
পরবর্তীতে উক্ত হত্যার ঘটনায় নিহতের ভাই মো. সেলিম হোসেন (৩৩) বাদী হয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়তলী থানায় ১ জন এজাহারনামীয় এবং অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা রুজু হওয়ার পর পুলিশ মামলাটির তদন্ত শেষে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করলে আদালত মামলাটির বিচার কার্যক্রম শুরু করে এবং আসামী আবুল হোসেন ওরফে লিটনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজের ৪র্থ আদালত গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করেন।
উক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী আবুল হোসেন ওরফে লিটন (৪৫) দীর্ঘদিন ছদ্মনাম ধারণ করে ফেনী জেলার সোনাগাজী থানার রাঘবপুর এলাকায় আত্মগোপনে রয়েছে। গোপন সংবাদে এমন তথ্যের ভিত্তিতে রোববার (১ অক্টোবর) র্যাব ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার আসামীকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
বিএনএনিউজ/বিএম