বিএনএ, ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসকদের ওপর দফায় দফায় হামলার জেরে সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। পরে তাদের দাবি পূরণে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার আশ্বাসে কর্মবিরতির প্রায় ২২ ঘণ্টা পর কাজে ফিরলেন চিকিৎসকরা।
রোববার(১ সেপ্টেম্বর )আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সঙ্গে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং ঢামেক কর্তৃপক্ষ বৈঠক করেে। এরপর রাত ৮টা থেকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা সেবা দেওয়া শুরু করেন তারা।
হাসপাতাল সুত্রে জানাযায়, শনিবার দুই রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে স্বজনরা পৃথক সময়ে কর্তব্যরত চিকিৎসকের ওপর হামলা করে। এছাড়া শনিবার রাতে দুষ্কৃতিকারীদের দুই গ্রুপ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঢুকে নিজেদের মধ্যে মারামারি করে। এ সময় তারাও চিকিৎসকদের গায়ে হাত তোলে এবং জরুরি বিভাগ ভাঙচুর চালায়। এরপর রাতেই ইন্টার্নরা কর্মবিরতি শুরু করেন। রোববার সকালে তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন অন্য চিকিৎসকরা। এসবের প্রতিবাদে দুপুরে তারা দেশব্যাপী কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করেন। এতে বন্ধ হয়ে যায় চিকিৎসাসেবা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীদের ফিরে যেতে হয়। হাসপাতালের অনেক রোগীকে বেরিয়ে যেতে দেখা গেছে। এভাবে দিনভর সীমাহীন দুর্ভোগের ভেতর কাটে সেবাপ্রার্থীদের।
ঢামেক হাসপাতালে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সঙ্গে রোববার বিকালে বৈঠক করেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। বৈঠক থেকে বেরিয়ে সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি বলেন, চিকিৎসকদের দাবিদাওয়া যত দ্রুত সম্ভব পূরণ করা হবে।
এ সময় ঢামেকের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জমান জানান, তারা জরুরিসহ কিছু সেবা এখনই চালু করবেন। কিন্তু আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা বেঁকে বসেন।
তারা বলেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক সার্জন আবদুল আহাদ বলেন, এখন দাবি পূরণ হলে এখনই আমরা কাজে ফিরব।
চিকিৎসকদের আরেকটি পক্ষ জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেফতারের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তাই সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চিকিৎসায় গাফিলতি হলে সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা না শুনে ডাক্তারদের গায়ে হাত তোলা হয়েছে, এটা ঠিক হয়নি।
নূরজাহান বেগম বলেন, ঢাকা মেডিকেলের পর আরও দুটি জায়গায় এমন ঘটনা ঘটেছে, যা খুবই দুঃখজনক। ডাক্তাররা তাদের যথাসাধ্য দায়িত্ব পালন করেছেন। এভাবে কথায় কথায় ডাক্তারদের গায়ে হাত তোলা যাবে না। আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের দাবির সঙ্গে আমরা একমত। ইতোমধ্যে তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঢামেক হাসপাতালে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসার রয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে চিকিৎসকদের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বৈঠকে বসার পরপরই ঢামেক হাসপাতালে ডাক্তারদের ওপর হামলার ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়। মামলায় চারজনের নাম উল্লেখ করে ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়। আসামিদের মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিইউবিটির এক শিক্ষক ও তিন শিক্ষার্থী রয়েছেন।
সূত্র জানায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার রাতে রোগীর স্বজনরা চিকিৎসকদের মারধর করেন।
অভিযোগ ওঠে, রোগীর স্বজনরা ওটিতে ঢুকে ডা. ইমরান ও ডা. মাশরাফিকে মারধর করেছেন। স্বজনদের দাবি, চিকিৎসকদের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ডাক্তারদের দাবি, রোগী পথেই মারা গেছেন।
বিএনএ,নিউজ/ রেহানা/হাসনা