28 C
আবহাওয়া
৬:২৬ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কয়েক জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

কয়েক জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

কয়েক জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

বিএনএ ডেস্ক: যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় দেশের কয়েকটি জেলায় নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আগামি ২৪ ঘণ্টায় এ পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, পাবনা মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী , ফরিদপুর এবং শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে। ব্রহ্মপুত্র নদ, যমুনা ও গঙ্গা নদীর পানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পদ্মা নদীর ভাগ্যকুল ও মাওয়া পয়েন্টের পানি আগামি ২৪ ঘণ্টায় বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, যমুনার ৯টি পয়েন্টের পানি এখন বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই নদীর মথুরা পয়েন্টের পানি ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত বইছে। একই নদীর আরিচা পয়েন্টের পানি ১৬, বাহাদুরাবাদ পয়েন্টের পানি ৪৪, সারিয়াকান্দি পয়েন্টে ৫২, কাজিপুর পয়েন্টে ৫২, ফুলছড়ি পয়েন্টে ৩৯, সিরাজগঞ্জ পয়েন্টের পানি ৫১, পোড়াবাড়ি পয়েন্টে ১৫, সাঘাটা পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।

ধরলা নদীর কুড়িগ্রাম পয়েন্টের পানি ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এখন। নতুন করে ঘাগট নদীর গাইবান্ধা পয়েন্টে সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত বইছে। আত্রাই নদীর বাঘাবাড়ি পয়েন্টের পানি এখন বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে, যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল। এতে জেলার প্রায় ১ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ায় তাদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। তলিয়ে গেছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ, রাস্তাঘাট, বিস্তীর্ণ রোপা আমনের ক্ষেত। ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চৌহালী ও শাহজাদপুরের নদী পারের মানুষ। তবে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধে চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

বন্যা পরিস্থিতি

জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ায় জেলার ৬টি উপজেলার ২৪ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বন্যা কবলিত উপজেলাগুলো হচ্ছে ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ী, বকশীগঞ্জ ও মাদারগঞ্জ।

বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো.নায়েব আলী সংবাদ মাধ্যমকে জানান, বন্যায় জেলার ৬টি উপজেলার ৭৯টি গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বন্যা কারণে এ পর্যন্ত নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন ৬৫ পরিবার।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো.সাখাওয়াৎ ইকরাম জানিয়েছেন, বন্যার পানিতে জেলার ৩৬শ ২৩ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে রোপা আমন ধান ৩৫শ ৩০ হেক্টর, রোপা আমন বীজতলা ৪৫ হেক্টর এবং শাক সবজি ৪৮ হেক্টর।

কয়েক জেলার বন্যা পরিস্থিতি

টাঙ্গাইলে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে যমুনা, ধলেশ্বরী, ঝিনাইদহ সকল নদ-নদীর পানি। এতে করে জেলার ৬টি উপজেলার দুই শতাধিক গ্রামের দেড় লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বানের স্রোতে রাস্তাঘাট ও ব্রিজ ভেঙে যাতায়াতে বেড়েছে দুর্ভোগ। তলিয়ে গেছে বিভিন্ন রাস্তাঘাট। দেখা দিয়েছে নানা ধরনের পানিবাহিত রোগ। পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যাপক সমস্যা দেখা দিয়েছে। বানভাসিদের নৌকাই এখন একমাত্র ভরসা ।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পা‌নি ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার, ঝিনাই নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরী নদীর পানি ৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৬৪ সে‌ন্টি‌মিটার ওপর দি‌য়ে প্রবা‌হিত হ‌চ্ছে। পাশাপাশি বংশাই লৌহজংসহ সকল নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

অন্যদিকে, রাজবাড়ীতে পদ্মার পানিবৃদ্ধি অব্যহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজবাড়ীর তিনটি গেজ স্টেশন পয়েন্টই পদ্মার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নতুন করে অনেক এলাকায় বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি রয়েছে নিম্নাঞ্চল ও বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে কয়েক হাজার পরিবার। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও গবাদিপশুর খাবার সংকট। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমি।

বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টায় পরিমাপ করা তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় রাজবাড়ীর তিনটি গেজ স্টেশন পয়েন্টে পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া গেজ পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।

পাংশার সেনগ্রাম পয়েন্টে পদ্মার পানি ৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার এবং সদরের মাহেন্দ্রপুর পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

রাজবাড়ী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল আহাদ জানান, সিরাজগঞ্জের দিকে যমুনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পদ্মার পানি বাড়ছে। তবে, এই সপ্তাহের শেষ দিকে পানি আবারও কমতে থাকবে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সৈয়দ আরিফুল হক বলেন, পানিবন্দি মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ চলছে। নতুন করে যেসব এলাকায় পানি প্রবেশ করছে, তাদেরও তালিকার আওতায় এতে ত্রাণসামগ্রী দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

বিএনএনিউজ/আরকেসি

 

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ