।।মিজানুর রহমান মজুমদার ।।
‘ঈদ’ শব্দটি আরবি। যার শাব্দিক অর্থ ঘুরে ঘুরে আসা, প্রত্যাবর্তন করা। প্রচলিত অর্থে ঈদ মানে আনন্দ বা খুশি। যেহেতু এ আনন্দ বছর ঘুরে ফিরে আসে এজন্য এর নামকরণ করা হয়েছে ‘ঈদ’। মুসলমানদের জাতীয় সাংস্কৃতিক চেতনায় প্রতি বছর দু’টি ঈদ পালিত হয়। ঈদুল্ ফিতর ও ঈদুল আযহা।
মদীনাবাসী জাহেলী যুগ থেকে শরতের পূর্ণিমায় ‘নওরোজ’ এবং বসন্তের পূর্ণিমায় ‘মেহেরজান’ নামে দু’টো উৎসব পালন করতো। ৬২২ খৃষ্টাব্দে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পবিত্র মক্কা নগরী থেকে হিজরত করে মদীনা মুনাওয়ারায় তাশরীফ আনলেন, তখন তাদেরকে বছরে দু’দিন খেলাধূলা করতে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, এ দু’দিন কিসের? সাহাবাগণ জবাবে বললেন, জাহেলী যুগে আমরা এই দুই দিবসে খেলাধূলা বা আনন্দ প্রকাশ করতাম। অতপর রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমালেন, আল্লাহ তায়ালা উপরি-উক্ত দিন দু’টির পরিবর্তে তা অপেক্ষা উত্তম দু’টি দিন তোমাদের খুশি প্রকাশ করার জন্য দান করেছেন- এর একটি হচ্ছে- ‘ঈদুল আদ্বহা’ এবং অপরটি হচ্ছে- ‘ঈদুল ফিতর’। ৬২৪ খৃষ্টাব্দ থেকেই ইসলামী শরীয়তে দু’টি ঈদ উৎসব পালিত হয়ে আসছে।
দীর্ঘ একমাস পবিত্র সিয়াম সাধনার পর সাওয়ালের প্রথম দিনে ইসলামী শরীয়তের প্রণেতা মুসলমানদের জন্য যে উৎসব নির্ধারণ করেছেন তা-ই হচ্ছে ‘ঈদুল ফিতর’।মূলত রামাদ্বান এক মাসের একটি প্রশিক্ষণ কোর্স। এ কোর্সের প্রশিক্ষক স্বয়ং আল্লাহ এবং শিক্ষার্থী হল মুসলিম উম্মাহ।এর সুদূরপ্রসারী ফলাফল হচ্ছে বাস্তব জীবনের প্রত্যেক ধাপে ধাপে প্রতিটি পদে পদে তাকওয়ার সুচিন্তিত শিক্ষা।
নানা দিক দিয়ে ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য অপরিসীম। এর মধ্যে নিহিত আছে সুদূরপ্রসারী শিক্ষা। এ হিসেবে ঈদুল ফিতরে যেমন আছে আনন্দ ও ইবাদত, তেমনি আছে সুসংঘবদ্ধতার মহান শিক্ষা। ঈদ উৎসব সময়ানুবর্তিতা ও নিয়মানুবর্তিতা শেখায়। চাঁদ দেখে রোজা শুরু করা ও শেষ করার মধ্য দিয়ে যেমন সময়ানুবির্ততা শেখায় তেমনি ইফতার, সেহরি ঈদগাহের নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়েও সময়ানুবর্তিতার শিক্ষা পাওয়া যায়। এভাবে মুসলমানদের জীবনে ঈদুল ফিতর এক উজ্জ্বল ও সুন্দর শৃঙ্খলাবোধের সম্মিলন ঘটায়।
ঈদুল ফিতর থেকে মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য, শক্তি, শান্তি ও প্রগতি তথা ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হওয়ার বৈষয়িকতা ও আধ্যাত্মিকতার শিক্ষা পাওয়া যায় । ধনীর পক্ষ থেকে গরিবের প্রতি ঈদগায় যাওয়ার পূর্বেই যাকাত প্রদান করে দয়া ও সহানুভূতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মিলে ঈদুল ফিতরে।’ সকল মানুষের সমান অধিকার এ স্লোগানের উপাদান ঈদুল ফিতরে বিদ্যমান।
আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ ও তাদের খোঁজ-খবর নেওয়ার সুযোগও হয় ঈদের সম্মিলন ও দাওয়াতে। ইসলামে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা ফরজ। সারা বছর কর্মব্যস্ততার কারণে আমরা অনেক আপনজনকেই ভুলে থাকি। সবার খোঁজ খবর সঠিকভাবে নেওয়া হয়ে ওঠে না। ঈদের উৎসবে সবাই একত্রিত হওয়ার সুযোগ পায়। ঈদ শুধু ধর্মীয় অনুশাসনের শিক্ষা দেয় না- পরস্পরের মধ্য সুসর্ম্পক, ভালবাসা, সহানুভূতি, সহযোগীতা ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় করার শিক্ষা দেয়।
তাইতো জাতীয় কবি নহরুল ইসলামের কণ্ঠে বিবৃত হয়েছে, ‘ইসলাম বলে, সকলের তরে মোরা সবাই, / সুখ-দুখ সমভাগ করে নেব সকলে ভাই,/ নাই অধিকার সঞ্চয়ের।/ ঈদ্-অল্-ফিতর আনিয়াছে তাই নববিধান,/ ওগো সঞ্চয়ী উদ্বৃত্ত যা করিবে দান, / ক্ষুধার অন্ন হোক তোমার।