28 C
আবহাওয়া
৪:২৭ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ১৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কক্সবাজার প্যাচারদ্বীপে প্যরাবন পুড়িয়ে কিংশুকের রিসোর্ট!

কক্সবাজার প্যাচারদ্বীপে প্যরাবন পুড়িয়ে কিংশুকের রিসোর্ট!


।। এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন।।

বিএনএ, কক্সবাজার : কক্সবাজারের সংকটাপন্ন প্যাঁচারদ্বীপ সৈকতে প্যারাবন উজাড় ও দখল করে কিংশুক ফার্মস লিমিটেডের রিসোর্ট তৈরির কাজ চলছে। আগুন দিয়ে প্যারাবন উজাড় করা হচ্ছে। মুছে ফেলা হচ্ছে ম্যানগ্রোভ ফরেষ্টের চিহ্ন। প্রকাশ্যে দিবালোকে এক্সকাভেটর দিয়ে প্যাঁচারদ্বীপ সৈকতে ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট নিধন হচ্ছে।

এতে পাখির আবাসস্থল নষ্টের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। এ ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট না থাকলে শুধু সমুদ্র সৈকত নয়, মেরিন ড্রাইভ সড়কসহ পার্শ্ববর্তী জনপদ ও সাগরের করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা পরিবেশবিদদের।

প্যারাবন নিধন যজ্ঞ নিয়ে একাধিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও দেখার যেন কেউ নেই! উপজেলা প্রশাসন, বন বিভাগ কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়নি।

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, কক্সবাজারের প্যাঁচারদ্বীপের ভরাখালে ২৫ থেকে ৩০ একরের মতো প্যারাবন আছে। প্রায় ২০ বছর আগে উপকূলীয় বন বিভাগ এই প্যারাবন সৃজন করেছিল। প্যারাবন ৪০ প্রজাতির পাখির আবাসস্থল ছিল। কিন্তু এক মাস ধরে কিংশুক নামের একটি প্রতিষ্ঠানের লোকজন প্যারাবনের অন্তত ৩৫ হাজার গাছপালা উজাড় করে রিসোর্ট ও মাছের খামার তৈরি করছেন। প্রতিষ্ঠানটি বনের ভেতরে ৭০০ ফুট লম্বা পাকা দেয়াল তুলে ১০ একরের বেশি প্যারাবন দখলে নিয়েছে। এখন আগুন দিয়ে ছয় একরের বেশি প্যারাবন ধ্বংস করা হয়েছে। অবশিষ্ট ২০/২৫ একর প্যারাবনও নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চলছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কিংশুকের দখল করা প্যারাবনের দক্ষিণ পাশের অংশটি আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া পোড়া কেওড়া ও বাইনগাছগুলো স্থানীয় লোকজন কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। কিংশুকের দখল করা প্যারাবনের ভেতরের গাছগুলোও কেটে ফেলা হচ্ছে। এ কাজে বাধা দেওয়ার মতো কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি।

দখল করা প্যারাবনের পূর্ব দিকে টাঙানো একটি সাইনবোর্ডে লেখা হয়েছে—‘কিংশুক ফার্মস লিমিটেড, রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। তবে সাইনবোর্ডে মালিকের নাম ও যোগাযোগের ঠিকানা কিংবা মুঠোফোন নম্বর উল্লেখ নেই। প্যারাবন দখল ও অবকাঠামো নির্মাণের কাজ সামলাচ্ছেন কিংশুকের ব্যবস্থাপক মশিউর আলম।

কথা বলার জন্য  মশিউরের মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। এ কারণে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

প্যারাবনের এলাকাটি পড়েছে রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। এই ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম সোহেল বলেন, এই বন ঝড়–জ্বলোচ্ছাস থেকে উপকূলকে রক্ষা করে। তবে এক মাস ধরে প্যারাবন নিধন হচ্ছে। কিন্তু এই ধ্বংসযজ্ঞে বাধা দেওয়ার মতো কেউ নেই।

এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, এভাবে প্যারাবন দখলের কারণে পাখির আবাসস্থল নষ্টের পাশাপাশি সামুদ্রিক প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। গভীর সমুদ্র থেকে মা কচ্ছপের ডিম পাড়া বন্ধ হয়ে গেছে। অবিলম্বে দখলদারদের বিরুদ্ধে মামলা ও প্যারাবনের ভেতরে তৈরি বেড়িবাঁধ ও পাকা দেয়াল উচ্ছেদ করা না হলে কক্সবাজারবাসী মাঠে নামবে।

পরিবেশবাদী একাধিক সংগঠনের নেতারা বলেন, কিংশুক কর্তৃপক্ষের দেখাদেখি অন্য প্রভাবশালীরা প্যারাবনের প্রায় ৩৮ একর জমি দখলে নিতে খুঁটি পুঁতেছে। রাতের অন্ধকারে এসব প্যারাবনও নিশ্চিহ্ন করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

কক্সবাজার দক্ষিণ  বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা  বলেন, প্যারাবনের গাছ উজাড় করে যেখানে স্থাপনা নির্মাণ হয়েছে, তা উপজেলা ভূমি প্রশাসনের জায়গা। এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিলে উপজেলা প্রশাসন নিতে পারে।

আগুনে প্যারাবন ধ্বংসের বিষয়ে জানতে চাইলে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা মুস্তফা  বলেন, এ ঘটনা তাঁর জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।

এর আগে ইউএনও প্যারাবন দখল ও নিধনের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার কথা জানালেও অদ্যবধি দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউএনও ফাহমিদা মুস্তফা বলেন, প্যারাবন নিধনের ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলা করার কথা। প্যারাবনের জায়গার মালিকানা চিহ্নিত করার জন্য স্থানীয় ভূমি অফিসের তহশিলদারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তহশিলদার প্রতিবেদন দিয়েছেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছেও লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। সেখানে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরকে মামলা করার সুপারিশ করা হয়েছে।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তর বন উজাড়কারীদের বিরুদ্ধে নামে মাত্র মামলা করে দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন।

মামলার বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করেও পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, তিনি ঢাকায় প্রশিক্ষণে আছেন। তবে কিছুদিন আগে হাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, প্যারাবন উজাড়, বেড়িবাঁধ ও সীমানাদেয়াল নির্মাণের দায়ে কিংশুকের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ দিকে কক্সবাজারের প্যাঁচারদ্বীপের ইসিএ এলাকায় পরিবেশ ছাড়পত্র নিয়ে ন্যচার কনজার্ভেশন ম্যানেজম্যান্ট (নেকম) নামের একটি প্রতিষ্টান ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট সৃজন করেছেন। গত ২০০৩ সালে সেখানে তারা ৭/৮ একর জায়গা জুড়ে প্যারাবন সৃজন করেন। অবশ্য আগে থেকেই সেখানে ন্যচারেল ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট ছিল বলে ছিল বলে জানিয়েছেন নেকমের উপ পরিচালক ড. শফিকুর রহমান।

তিনি  আরও বলেন, যারা পরিবেশ প্রতিবেশ ধ্বংস করে ফরেষ্ট উজাড় করছেন, আইনের দৃষ্টিতে তা গর্হিত অপরাধ।এর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার বলেও মনে করেন এ বিজ্ঞানী।

বিএনএনিউজ/এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন/এইচ.এম।

Loading


শিরোনাম বিএনএ